ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সীমানা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি হলেও নির্বাচনের অনিশ্চয়তা প্রলম্বিত হচ্ছে। কারণ সংশ্লিষ্ট নথিটি নাকি পাওয়া যাচ্ছে না-এমন দাবি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। ২০১১ সালের ৩০ নভেম্বর উত্তর দক্ষিণ এই নামে ঢাকায় দুটি সিটি করপোরেশন করা হয়। সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে সেই থেকে প্রায় ২৮ মাসেও এ দুটি সংস্থার নির্বাচন করা যায়নি। যদিও স্থানীয় সংস্থার প্রতিটি স্তর জনপ্রতিনিধির দ্বারা পরিচালিত হবার উচ্চ আদালতের নির্দেশ রয়েছে। নির্বাচনের বিধান রয়েছে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনেও।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ এবং সরকার বিরোধী রাজনৈতিক গোষ্ঠীর মতে নির্বাচন না হবার পেছনে আইনী জটিলতা যেমন আছে তেমনি সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতাও আছে। পর পর পাঁচ-পাঁচটি সিটিতে হেরে ক্ষমতাসীন পক্ষ ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন করার বিষয়ে একটু ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেছে। তারই কারণে সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের নামে সময়ক্ষেপণ। এখন দেখা যাচ্ছে, সেই নথিটিরও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) ২০০৯ সালের আইন সংশোধন করে ২০১১ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকায় দুটি সিটি করপোরেশন করা হয়। আর এই আইনের নির্ধারিত বিধানমতে পদ হারান মেয়র খোকাসহ অন্য কাউন্সিলররা। এই আইনের বিধান অনুযায়ী প্রশাসক নিযুক্ত হন প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত পদস্থ কর্মকর্তারা।
আইনে প্রশাসকের মেয়াদ প্রথমে ৯০ দিন করা হয় পরে আইনে আবার সংশোধনী এনে তা ১৮০ দিন করা হয়। এভাবেই গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে প্রশাসক অদল-বদল করে চলছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। ২০১২ সালের ২৪ মে দুই সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও আদালতের নির্দেশে আটকে যায় নির্বাচন। ২০১৩ সালের ১৩ মে আদালত স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করলেও সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার কথা বলে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনে অপারগতা প্রকাশ করে। ইসি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য চিঠিও দেয়।
২০১২ সালের ১৩ জুন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ঢাকার ডিসিকে প্রধান সীমানা নির্ধারণ কর্মকর্তা ও উপপরিচালক স্থানীয় সরকার বিভাগ এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক)-কে সহকারী সীমানা নির্ধারণ কর্মকর্তা নিয়োগ করে। গত জানুয়ারি মাসে বিরোধ নিষ্পত্তি করে এ সংক্রান্ত নথি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী এটি লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়ে নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দেয়ার কথা। কিন্তু গত প্রায় দুই মাসেও সে কাজটি হয়নি। আর এটি না হওয়ার কারণ সম্পর্কেও কেউ স্পষ্ট করে কিছু বলছেন না।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেছেন, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও বনশ্রী আবাসিক এলাকা নতুন করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিদ্যমান সিটি করপোরেশনের কোনো ওয়ার্ডে এ দুটি এলাকা অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ বিষয়ে কী করা হবে তা নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে চিন্তাভাবনা চলছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেই বিরোধ নিষ্পত্তি করে দেয়া সীমানা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। তার মতে, এটি কবে হবে সে সম্পর্কে মন্ত্রণালয়ের কোনো ধারণা নেই।
সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাসেই সীমানা সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করে দেয়া সীমানা নির্ধারণ কর্মকর্তার প্রতিবেদন পাওয়ার পর লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিভাগের মতামত নেয়ার জন্য পাঠানো হয়েছিল, এখন সেটি কোথায় আছে তা জানা যাচ্ছে না। তবে কী নথিটি হারিয়ে গেছে-এমন প্রশ্নের জবাবে কর্মকর্তারা বলছেন, না-হারিয়ে যাবে কেন? নিশ্চয়ই কোথাও না কোথাও আছে। সময়মতো নিশ্চয় পাওয়া যাবে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র অবশ্য জানায়, উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন হবার পরই সরকার ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তখন এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৪ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট চালু হওয়ার পর অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হয়েছে দু’বার। আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম মো. হানিফ প্রথম নির্বাচিত মেয়র হন। ১৯৯৯ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু সীমানা সংক্রান্ত জটিলতায় মামলা- মোকদ্দমার সুযোগে নির্বাচন পিছিয়ে যায় দুই বছর। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকতে ২০০২ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় নির্বাচনে বিএনপির সাদেক হোসেন খোকা নির্বাচিত হন। এই নির্বাচন অবশ্য বর্জন করেছিল আজকের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ২০০৭ সালে মেয়াদ শেষ হলেও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও হাইকোর্টের মামলায় আটকে যায় নির্বাচন