ক্রিকেটাররা নিজেদের খেলাটাও খেলতে পারছেন না। সেজন্য দলের চেহারাটা দেখাচ্ছে রিক্ত, হতশ্রী। সাকিব আল হাসানের চোখে দলের মূল সমস্যা এটাই। দলের জন্য ব্যাপারটি প্রচণ্ড ক্ষতির বলেই মনে করেন তিনি। তাঁর মতে, যদি ব্যক্তিগত খেলাটা খেলোয়াড়েরা খেলতে পারতেন, তাহলে দলের অবস্থা এতটা খারাপ হতো না।
পাকিস্তানের বিপক্ষে সুপার টেনে তৃতীয় ম্যাচটি খেলতে নামার আগের দিন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে এসে নিজেকে উজাড়ই করে দিলেন সাকিব, ‘ক্রিকেট দলীয় খেলা হলেও এতে ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের ব্যাপারটিও থাকে। আমরা কেউই নিজেদের খেলাটা খেলতে পারছি না। যদি আমরা চার-পাঁচজন রান করতাম, ফিল্ডিংটা একটু ভালো হতো, তাহলে দুটো ম্যাচে ভালোই প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারতাম।’
গত তিনটি ম্যাচে বাজেভাবে হেরে দলের আত্মবিশ্বাসে যথেষ্ট ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলেই মনে করেন তিনি, ‘ভেতরে ভেতরে সবাই খুব হতাশ। ড্রেসিংরুমের চেহারাটা দেখলেই ব্যাপারটা বোঝা যাবে। খেলোয়াড়েরা সবাই চায় পারফর্ম করতে। পারফরম্যান্সটা তো ব্যক্তিগতভাবে একজন খেলোয়াড়ের জন্য খুব প্রয়োজন। হয়তো আমাদের প্রয়োগটা কোনো না কোনোভাবে ভুল হয়ে যাচ্ছে।’
আপাতত সুপার টেনের শেষ দুটো ম্যাচেই পাখির চোখ রাখতে চান সাকিব। এই দুটো ম্যাচে অপেক্ষাকৃত কম চাপ নিয়ে বাংলাদেশ খেলবে বলেই বিশ্বাস তাঁর, ‘আমরা গতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছি। এটা ফেরানোই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সবাই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমার বিশ্বাস আগের অবস্থায় দলের ফেরাটা কেবলই সময়ের ব্যাপার। এখনো দুটো ম্যাচ বাকি আছে। এখন লক্ষ্য এই দুটো ম্যাচ। যেহেতু এই মুহূর্তে আমাদের ওপর প্রত্যাশার চাপ কম, আমি মনে করি শেষ দুটো ম্যাচ আমরা ভালোই খেলব।’
একটি-দুটি ম্যাচই দলের চেহারা পাল্টে দিতে পারে বলে মনে করেন সাকিব, ‘এই মুহূর্তে আমাদের একটা জয় দরকার, সেটা হতে হবে বড় দলের বিপক্ষেই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরুর আগে আমাদের লক্ষ্য ছিল সুপার টেনে খেলা, আমরা সেটা পেরেছি। প্রথমে দুই-তিনটি ম্যাচ জয়ের কথা ভেবেছিলাম। এখন একটা হলেই যথেষ্ট।’
নিজের ব্যাটিংয়ের স্থান নিয়ে ব্যক্তিগত কোনো পছন্দ-অপছন্দ নেই সাকিবের। ঠিক যেমন নেই বোলিংয়ের ব্যাপারটি নিয়েও। দল তাঁকে যেখানে চায়, সেখানেই পারফর্ম করতে প্রস্তুত বলে জানালেন, ‘একটা সময় আমি তিনেই ব্যাট করছিলাম। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে কোচ ও অধিনায়ক বললেন, যেহেতু মিডল অর্ডার রান পাচ্ছে না সেহেতু তুমি চারেই ব্যাট করো। আমি মেনে নিয়েছি। দলের প্রয়োজনেই তাঁরা সেভাবে পরিকল্পনা করেছেন। বোলিং নিয়েও আমার কোনো সমস্যা নেই। অধিনায়ক আমাকে যখনই বল হাতে দেবেন, তখনই আমি বল করতে পারব।’
শেষ দুই ম্যাচে নিজের ব্যাটিং সামর্থ্যের প্রতি সুবিচার করেননি সাকিব। এই মুহূর্তে ভাবছেন সেটা নিয়েই, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বলটা ছিল দুর্দান্ত। তবে ভারতের বিপক্ষে দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছি। বল ব্যাট আর প্যাডে লেগে স্টাম্পে গিয়ে লেগেছে। তবে কিছু জায়গায় আমার উন্নতির সুযোগ আছে। আমি এখন সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।’
দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব আছে ঠিকই। তবে সময়টা যে খুব খারাপ, সেটা মানতে রাজি নন সাকিব, ‘সময়টা খুব খারাপ—এ কথা বলতে রাজি নই। এখনো দুটো ম্যাচ আছে। যদি একটি ম্যাচও জিততে পারি, তাহলে এটিকে সবাই “ওকে” টুর্নামেন্ট বলবে। ২০১১ সালের বিশ্বকাপেও একটি বড় দলকে হারাতে চেয়েছি। আমরা ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিলাম। এখানেও দেখা যাক না। দলের পারফরম্যান্সটা আর একটু ভালো হলে দল এই অবস্থায় পড়ত না। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ, এশিয়া কাপ—এগুলোতে আমরা কিন্তু লড়াই করে হেরেছি।’
দলীয় অবস্থার প্রেক্ষাপটে অবশ্য পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি কঠিন বলেই মনে করেন তিনি। তবে তিনি আত্মবিশ্বাস খুঁজছেন পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ কয়েকটি ম্যাচ থেকে, ‘পাকিস্তান খুব কঠিন দল। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে খুবই বিপজ্জনক দল। বোলিংয়ে দলটি বিশ্বসেরাদের একটি। তাদের বিপক্ষে জেতাটা কঠিনই হবে। তবে এশিয়া কাপসহ পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ কয়েকটি ম্যাচে আমরা খুব ভালো করেছি।’