তিস্তা শুকিয়ে যাওয়ায় শত শত জেলে পরিবারে এখন দুর্দিন

0
182
Print Friendly, PDF & Email

প্রমত্তা তিস্তা জানুয়ারি থেকেই ধূ ধূ বালু চরে পরিণত হয়েছে। পানি প্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ। এদিকে নদী শুকিয়ে যাওয়ায় তিস্তা পারের শত শত জেলে পরিবারে এখন নেমে এসেছে দুর্দিন।
বর্ষার প্রমত্তা স্রোতস্বিনী তিস্তা এখন অস্তিত্বহারা ধূ ধূ বালু চরে পরিণত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে সেচ কাজের জন্য যেখানে তিন হাজার ৫০০ কিউসেক পানি থাকার কথা সেখানে এখন রয়েছে মাত্র প্রায় ৫০০ কিউসেক পানি। ফলে চমর বেকায়দায় পড়েছেন তিস্তার পানির উপর নির্ভরশীল এ জেলার বোরো চাষীরা। এদিকে তিস্তার ১২০ কিলোমিটার এলাকায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা শত শত জেলে ও মাঝি মাল্ল¬া এখন সম্পূর্ণ বেকার। তিস্তার পানি বর্তমানে শূন্যের কোটায় নেমে আসার কারণে তিস্তা ব্যারেজের সব ক’টি গেট বন্ধ করে পানি ফেলা হচ্ছে সেচ ক্যানেলে। তাই বন্ধ ব্যারেজের ভাটিতে সামান্য যে অংশে চোয়ানো পানি আসে তাতেই এখন জাল ফেলে মাছের জন্য অপেক্ষা করছেন জেলেরো।
তিস্তা নদীতে এখন মাইলের পর মাইল চর জেগেছে। নদীর অনেক স্থানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পায়ে হেঁটেও এক ফোঁটা পানির দেখা মেলে না নদী অববাহিকায়। অথচ এক সময় এই নদীতে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। দেশী-ভিনদেশীসহ নানা প্রজাতির মাছ ধরা পড়ত জেলেদের জালে।  তিস্তা নদীর মাছ মানেই সুস্বাদু। তাই এর কদর ছিল গোটা জেলা জুড়ে। বাজারে তিস্তার মাছ শুনলেই ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ত তা কেনার জন্য। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ কমে তিস্তা পারের শত শত জেলে পরিবার নেমে এসেছে দুর্দিন।  বর্তমানে পানি কমে যাওয়ায় কোন কোন দিন ১০ টাকারও মাছ ধরতে পারে না জেলেরা। ফলে এখন তাদের দিন কাটছে এক বেলা খেয়ে না খেয়ে। এদিকে দিন দিন নদীর নাব্যতা হারিয়ে যাওয়ায় অনেকেই এখন বাপ-দাদার এ পেশা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।
তিস্তা নদী সংলঘœ বাইশপুকুর গ্রামের তফা মামুদ, তিস্তার চরের আবুল কালাম, খালিচা চাপানি গ্রামের সামাদ, আমজাদ, ঝুনাগাছা চাপানি গ্রামের সমছের আলী, আব্দুস ছাত্তার, টেপাখড়িবাড়ী গ্রামের জগদিস রায়, জগদীশসহ অনেক জেলে জানায় তিস্তা নদীতে পানি না থাকায় তারা এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তারা জানায় তিস্তা নদীতে যে পানি রয়েছে তাতে সারাদিন জাল ফেলে ৫০ টাকার মাছ ধরা যায় না। এতে করে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। নদীর পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে মাছও কমে গেছে তাই অনেকে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যাচ্ছেন বলে জানান তারা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবর রহমান জানায় তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ দিন দিন কমে যাওয়ায় তিস্তা পারের জেলে ও মাঝিরা পেশা বদল করে অন্য পেশায় যাচ্ছেন।
পানি বিশেষজ্ঞদের মতে তিস্তা ব্যারেজের ৬৫ কিলোমিটার উজানে হিমালয় থেকে নেমে আসা এই নদীর পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করছে ভারত। তাদের প্রয়োজন মেটানোর পর কেবল উদ্বৃত্ত পানিটুকু পাচ্ছে বাংলাদেশ। নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়া গেলে কেবল সুদিনে ফিরতে পারে এই মানুষগুলো বলে অভিমত তাদের।

শেয়ার করুন