নো আওয়ামী লীগ নো বিএনপি, ইসলাম ইজ দ্য বেস্ট

0
140
Print Friendly, PDF & Email

বর্তমানে বাংলাদেশে ১০০ জনের মধ্যে প্রায় ৯২ জন মুসলমানের বসবাস। দাবি হলো এ দেশ ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী চলবে। ইতিহাস বলে, এ দেশ যখন ইসলামী কায়দায় চলত তখন মানুষ, এমনকি পশুপাখিও শান্তিতে বসবাস করেছে। এখন দেশের গরিব-দুঃখী মেহনতি মানুষ তাদের প্রাপ্য পাচ্ছে না। আমরা মুখে অনেক কিছু বললেও শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নেই, মানুষ ভালো নেই। ইসলামী নিয়মনীতি, আদর্শ এবং ওই মনের মানুষ না হলে এই নিয়ম-আদর্শ চালু করা সম্ভব নয়, কোনো দিন হয়ও নি। বর্তমানে দেশে যে অবস্থা চলছে তাতে ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী মানুষের বড়ই দুর্দিন। এ অবস্থায় দেশের ওলামায়েকেরাম, আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখসহ ইসলামের পথ অনুসরণকারীদের জোরালো ভূমিকা পালন করা উচিত। বুধবার বিকালে সদর উপজেলার চরমোনাই দরবার শরিফে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত আলাপে ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মাওলানা মুফতি সৈয়দ মো. রেজাউল করিম এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন এবং সাম্প্রতিক উপজেলা নির্বাচনে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। এ নির্বাচন কখনোই নিরপেক্ষ-নির্ভেজাল বলে স্বীকার করা যায় না। এ নির্বাচন সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ নয়। সরকারের উচিত দ্রুত নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা। সেটা না হলে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। তাই বিস্ফোরণ যেন না ঘটে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করা দরকার। সঙ্গে সঙ্গে যারা ইসলামী নাম দিয়ে ইসলামী দল করছে, কিন্তু ইসলামী নীতি-আদর্শের বাইরে-ভেতরে তাদের অন্য উদ্দেশ্য, তাহলে ইসলামী আদর্শ কোনো দিন বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তাদের উচিত হবে ইসলামকে নিয়েই সামনে অগ্রসর হওয়া। মানব রচিত কিংবা পুঁজিবাদী গণতন্ত্রের মুখোশধারীদের কাঁধে ভর করে ইসলামের উপকার হওয়া সম্ভব নয়। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে বর্বর যুগের হুবহু বাস্তবতা এবং আইয়ামে জাহিলিয়াতের যুগের সঙ্গে তুলনা করে পীর চরমোনাই বলেন, দেশে গুম, খুন, রাহাজানি, ধর্ষণ, অন্যায়, অত্যাচার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। যেখানে সেখানে লাশ পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিনিয়ত বিচারবহিভর্ূত হত্যাকাণ্ড ঘটছে। এর একটি ঘটনার তদন্তও দেখছি না। মানুষ গুম হয়ে যাওয়ার পর জানতেও পারছি না, কোথায় গেল মানুষটি, কীভাবে আছে? এটা অত্যন্ত ভয়াবহ লক্ষণ। এটা কোনো সভ্য দেশের চিত্র হতে পারে না। এটা অত্যন্ত খারাপ লক্ষণ এবং এতে ভবিষ্যতে যে কোনো সময় দেশ ও দেশের মানুষের ওপর ভয়াবহ কিছু ঘটে যেতে পারে।

ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ স্পিকার থাকাকালে বলেছিলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর যে দুর্নীতি হয়, সেই পরিমাণ টাকা দিয়ে একটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব। দুর্নীতির ধারা ৩০-৩৫ বছর ধরে চলছে। সেই হিসাবে গত ৩০-৩৫ বছরের দুর্নীতির সমপরিমাণ টাকা দিয়ে বাংলাদেশে পদ্মা সেতুর মতো বহু বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যেত। দুর্নীতিবাজদের রাজনীতি থেকে সরাতে না পারলে দেশের রাজনীতি জনকল্যাণকর হবে না। রাষ্ট্রপতির উচিত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকা। তিনি আরও বলেন, দেশের সরকার যদি ঠিক হয়, তাহলে সব কিছু ঠিকঠাকভাবে চলে। মূল চাবিকাঠি সরকারের হাতে। গোড়ায় গলদ রেখে ভালো কোনো কিছুই আসা করা যায় না। দেশের প্রধান দুই দলের শীর্ষ নেতা একে অপরকে চোর বলেন, সেই হিসেবে দুজনই চোর-মহাচোর। এই চোর দিয়ে দেশে কোনো উন্নতি সম্ভব নয়। উদাহরণ দিয়ে পীর সাহেব বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, যে জাতি নিজেরা নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তনের চেষ্টা করে না, সেই জাতির ভাগ্যের পরিবর্তন তিনি করেন না। তাই এই পরিবর্তন আমাদেরই করতে হবে। চোর, দুর্নীতিবাজ, বদমায়েশ চিহ্নিত করে তাদের ভোট দেওয়া যাবে না।

প্রধান দুই দলের শীর্ষ নেতার পরস্পরবিরোধী অশালীন মন্তব্যে নতুন প্রজন্ম কী শিখছে- এমন প্রশ্নের জবাবে চরমোনাই পীর বলেন, তারা (দুই নেত্রী) যা বলছেন, নতুন প্রজন্ম তা-ই অনুকরণ করার চেষ্টা করবে, এটাই স্বাভাবিক। তাদের কাছ থেকে হিংসাত্দক আচরণ শিখছে। এতে মানুষের সঙ্গে মানুষের শত্রুতা সৃষ্টি হয়। সমাজে বিচ্ছৃঙ্খলা বাড়ে। তাদের মাধ্যমেই এই অশালীন সংস্কৃতি তৃণমূল পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। এ জন্যই ইসলামী আন্দোলন স্লোগান তুলেছে, ‘নো আওয়ামী লীগ- নো বিএনপি, ইসলাম ইজ দ্য বেস্ট’। এ ছাড়া কোনো বিকল্পও লক্ষ্য করছেন না। ইসলামী আন্দোলন বর্তমান পরিস্থিতির পরিবর্তন চায়। সব ইসলামী দল একত্রিত হয়ে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটানোর জন্য ইসলামের পক্ষে কাজ করবে বলে তার প্রত্যাশা। সেই লক্ষ্যে ইসলামী আন্দোলন আগামী মাসে সারা দেশে কার্যক্রম শুরু করছে। এ ক্ষেত্রে যারা ইসলাম নিয়ে ব্যবসা করে তাদের নয়, শুধু ইসলামকে মূল ভিত্তি ধরে যারা সামনে অগ্রসর হচ্ছে, তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করবে ইসলামী আন্দোলন। কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন কি হয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কী উন্নয়ন? মূল উন্নয়ন করতে হবে চরিত্রের। দিন দিন মানুষের চরিত্র ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সরকারের দলীয়করণ এবং শুধু দলাদলি-ভাগাভাগি এবং সরকারের খাওয়ার উন্নয়ন ভালো হয়েছে। মোট বরাদ্দের ৫০ ভাগ উন্নয়ন কাজও হয় না। সব কিছু ভাগাভাগিতে চলে গেছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েও তা করতে না পারা এবং বর্তমানে পুলিশ ও প্রশাসনের একপেষে আচরণে ক্ষুব্ধ চরমোনাই পীর বলেন, পুলিশ কিংবা পেটোয়া বাহিনী দিয়ে কেউ চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকতে পারে না। এ সরকারও পারবে না। সরকার তার নিজের স্বার্থে পুলিশ ও প্রশাসনকে দুর্বল করে রাখছে বলে অভিযোগ করেন পীর চরমোনাই।

শেয়ার করুন