দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট কে এ নিয়ে শুরু হয়েছে নয়া বিতর্ক। স্বাধীনতা ঘোষণা নিয়ে চলা প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের বিতর্কের মধ্যে নতুন করে প্রথম প্রেসিডেন্ট নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার লন্ডনে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার বক্তব্যে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি এর পক্ষে যুক্তিও উপস্থাপন করেন। তার এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া হয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। সকালে সংবাদ সম্মেলন করে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ দাবি করেন তারেক রহমান এ বক্তব্য দিয়ে সংবিধান ভঙ্গ করেছেন। এজন্য তার বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে। গতকাল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জিয়াউর রহমানকে প্রথম প্রেসিডেন্ট বলে বিএনপি ইতিহাস বিবৃত করছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য দেয়ার অল্প সময়ের ব্যবধানে মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দাবি করেন জিয়াউর রহমানই দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট। একই অনুষ্ঠানে দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকাও জিয়াউর রহমানকে প্রথম প্রেসিডেন্ট দাবি করে বক্তব্য রাখেন।
বঙ্গবন্ধুই প্রথম প্রেসিডেন্ট: প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক তুলে এখন আবার বিএনপি দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট নিয়ে বিতর্ক তুলছে। তারা (বিএনপি) এখন ফর্মুলা পাল্টেছে, এতদিন বলেছে জিয়া স্বাধীনতার ঘোষক, এখন বলছে প্রথম প্রেসিডেন্ট। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানই বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট, প্রথম উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ। ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল সরকার গঠন ও ১৭ই এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ করে। আর জিয়াউর রহমান তখন মুজিবনগর সরকারের অধীনে ৪শ’ টাকা বেতনে চাকরি করতেন। এসব ইতিহাস সবার জানা উচিত।
গতকাল রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, কিছু অর্বাচীন উদ্দেশ্যমূলকভাবে ইতিহাস বিকৃত করছে। তারা মানুষকে বিব্রত করতে চায়। পঁচাত্তরের পর থেকেই এ ধারা তারা শুরু করে। এরা একাত্তরে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে চায়। তাই তারা ইতিহাসকে বিকৃত করেছে, কখনও ঘোষণা (স্বাধীনতার) নিয়ে, কখনও অন্যভাবে। সত্য একদিন প্রকাশিত হবেই, এবং তা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রেখে বলেন, কেউ স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে ইয়াহিয়া খান তাকে গ্রেপ্তার করলো না কেন? ইয়াহিয়া তো বঙ্গবন্ধুকেই গ্রেপ্তার করেছিল। তিনি বলেন, দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু জিয়াকে প্রমোশন দিয়ে মেজর জেনারেল করেছিলেন। অথচ সে-ই গাদ্দারি করলো, মুনাফেকি করলো। পঁচাত্তরের পর অবৈধ উপায়ে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী বানালো, মাওলানা মান্নানকে মন্ত্রী বানালো, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুনর্বাসন করেছে। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক হলে কিভাবে তিনি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে ক্ষমতায় বসান। তিনি বলেন, যে ৪০০ টাকা বেতনে মুজিবনগর সরকারের অধীনে চাকরি করতো, তিনি নাকি প্রথম প্রেসিডেন্ট!
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অগণতান্ত্রিক সরকার আনার ষড়যন্ত্রকারীরা এখনও সক্রিয়। অনির্বাচিত কাউকে ক্ষমতায় আনতেই একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী উপজেলার নির্বাচন নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সহিংসতার সংবাদ প্রচার করছে। যখন গণতন্ত্র থাকে না, অগণতান্ত্রিক কেউ ক্ষমতায় থাকে, তখন ওনাদের দাম বেড়ে যায়। ওনারা নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থে গণতন্ত্র ধ্বংস করতে চান। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের দেশী-বিদেশী চাপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক প্রেসার ছিল। আমিও তো বঙ্গবন্ধু মুজিবের সন্তান। আল্লাহ ছাড়া কারও কাছে মাথা নিচু করবো না। কেউ এত চাপ সহ্য করতে পারতো কিনা জানি না।
‘উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কারচুপি করেনি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যদি কারচুপি করতো জামায়াতকে একটা চেয়ারম্যান পদেও জিততে দিতো না। অথচ তারা বিভিন্ন জায়গায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলগতভাবে করা উচিত বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, এই নির্বাচন দলীয়ভাবে হয় না। দল থেকে হলে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া যেতো। একটা নিয়ন্ত্রণ থাকতো। এখন না আছে নিয়ন্ত্রণ, না আছে কিছু। অথচ গণনার সময় হিসাব করা হয় দলীয়ভাবে। সবাই সবাইকে চিনে, তাই দলীয়ভাবে হিসাব করে ফলাফল লিখে দেয়া হয়। আগামীতে এই ইলেকশনগুলো দলীয়ভাবে হওয়া উচিত।
‘উপজেলা নির্বাচনের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় আওয়ামী লীগ জড়িত নয়’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কারা কেন্দ্র দখল করেছে, টাকা ছিটিয়েছে, জাল ভোট করেছে একদিন তা প্রকাশ পাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। ক্ষমতায় থাকার কারণে অনেকেই প্রার্থী হয়েছেন প্রথম ধাপে। বসতে বলা হলেও তারা তা না শুনে বরং বলেছে বিজয়ী হয়ে আপার (শেখ হাসিনা) গলায় বিজয়ের মালা দেবো। আরও কত কি! আমার এলাকায়ও প্রার্থী ছিল ৬ জন। এগুলো বিচার বিশ্লেষণ করে দেখি আমাদের ভোট বেশি কিন্তু সিট কম। পরের ধাপগুলোতে আমরা একক প্রার্থী দেয়ার ব্যবস্থা করি। তাতে বেশি সিটে আামদের জয় আসে। তখন পত্র-পত্রিকায় লেখা শুরু হলো অন্য কথা।
জিয়াউর রহমানই প্রথম প্রেসিডেন্ট : খালেদা
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক ও দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট বলে দাবি করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও ১৯ দলীয় জোট নেতা বেগম খালেদা জিয়া। বলেছেন, স্বাধীনতার ঘোষক ও দেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। আমি প্রেসিডেন্টের স্ত্রী বা সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের লক্ষ্য এখন একটাই- বিএনপিকে ধ্বংস করে আজীবন ক্ষমতায় থাকা। কিন্তু তারা অন্যের সহায়তা ও আদালতের দোহাই দিয়ে আজীবন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। এমন সময় আসবে- এ সরকার জনগণের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ ও ‘মুক্তিযুদ্ধের শ্রেষ্ঠ অহংকার স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান বীরউত্তম’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে খালেদা জিয়াকে সম্মাননা জানানো হয়। খালেদা জিয়া বলেন, এই সংসদ ও সরকার অবৈধ। তারা যে কাজ করছে সেগুলো অবৈধ। ‘সংসদে বিরোধী দল নেই’ মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, এই পার্লামেন্টে কোন বিরোধী দল নেই। রওশন এরশাদ নিজেও স্বীকার করেছেন, তাকে জোর করে নির্বাচনে আনা হয়েছে। সরকার একদলীয় শাসন জারি করেছে। তারা বহুদলীয় গণতন্ত্র চায় না। খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান সরকার যৌথবাহিনী দিয়ে সারা দেশে হত্যা-গুম ও নির্যাতন চালিয়েছে। দেশে প্রতিনিয়ত এখন মানুষ খুন হচ্ছে, গুম হচ্ছে। নদীতে, জঙ্গলে সর্বত্র লাশ পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলমকে গুম করা হয়েছে। এটা কি মানবতাবিরোধী অপরাধ নয়? সেটাও মানবতাবিরোধী অপরাধ। এর জবাবদিহি আওয়ামী লীগকে একদিন করতে হবে। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। খালেদা জিয়া বলেন, যারা জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে, তাদের হাতে দেশ নিরাপদ নয়। আপনারা পদত্যাগ করে জাতিকে মুক্তি দিন। জনগণ আপনাদের কাছ থেকে রেহাই চায়। দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করুন। জনগণ ক্ষুব্ধ। এভাবে আর কত বাধা দেবেন? জনগণ মানবে না।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বৈষম্য, অবিচার, খুন ও নির্যাতন থেকে জাতিকে মুক্তি দিতে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেটা মেনে নিতে পারে না। কিন্তু পৃথিবী ও বাংলাদেশের জনগণ সেটা মেনে নিয়েছে। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন বলেই মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতারা তার ঘোষণার পর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারাও স্বীকার করেন, জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। ইতিহাস থেকে এটি মুছে ফেলা যাবে না। জিয়াউর রহমান শুধু স্বাধীনতার ঘোষকই নন, তিনি প্রথম প্রেসিডেন্ট, মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর জিয়া তার অবস্থানে ফিরে গিয়েছিলেন। পরে এদেশের মানুষ সময়ের প্রয়োজনে জিয়াউর রহমানকে ক্ষমতায় এনেছে। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, মুক্তিযুদ্ধে আওয়ামী লীগের অবদানকে আমরা ছোট করে দেখি না, দেখবো না। তবে আমরা তাদের সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মেশাতে দেবো না। আমরা এটা মেনে চলবো। আওয়ামী লীগ নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি বলে দাবি করে। তাহলে বিএনপি কি? এমন প্রশ্ন রেখে খালেদা জিয়া বলেন, আসলে বিএনপি হলো প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। কাজেই আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি নয়। তারা মুুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছে মাত্র। সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধে দেশের ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক সব শ্রেণীর মানুষ ?অংশ নিয়েছে। তারা অংশগ্রহণ না করলে দেশ স্বাধীন হতো না। আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে অন্য দেশের অবদান ছিল- এটা আমি অস্বীকার করি না। কিন্তু নিজেদের দেশকে ছোট করে ?অন্য দেশকে বড় করা ঠিক না। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিদেশীদের এমনভাবে সম্মাননা দেয়া হয়েছে তাতে মনে হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ যুদ্ধই করেনি। তারা বিদেশীদের অবদানকে বড় করে দেখান। কিন্তু আমাদের দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতির প্রয়োজন নেই, আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে এই দেশের মানুষ। খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, যুদ্ধ শুরুর আগে জিয়াউর রহমান বাঙালি অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করতেন। দেখতাম তিনি অনেক রাত্রে ফিরতেন। জিয়া ছিলেন অষ্টম রেজিমেন্টের সিনিয়র বাঙালি অফিসার। একদিন হাবিলদার কাদের দৌড়ে এসে জানতে চাইলেন, স্যার (জিয়া) কোথায়? পাকিস্তানি অফিসাররা আমাদের হাতিয়ার জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। আমি অত কিছু বুঝতাম না। তারপরও বললাম, আপনাদের স্যার না বলা পর্যন্ত হাতিয়ার জমা দেবেন না। এটা হয়তো তখন অনেক কাজে লেগেছে। খালেদা জিয়া যুদ্ধকালে তার অবরুদ্ধ জীবনের বর্ণনা দেন। এ সময় তিনি ৭১ সালে তার মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে সঠিক তথ্যসহ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিকথা লেখার তাগিদ দেন। খালেদা জিয়া বলেন, আগামী দিনে জাতিকে সঠিক ইতিহাস জানানোর জন্য বেঁচে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের কিছু না কিছু অবদান রাখতে হবে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে হবে। বয়স হয়ে গেলেও আপনাদের বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করতে হবে। খালেদা জিয়া বলেন, তিনি বলেন, পাকিস্তানের শৃঙ্খল ভেঙে আরেক শৃঙ্খলে বন্দি হতে দেশের মানুষ যুদ্ধ করেনি। কিন্তু আজ দেশকে অন্য দেশের হাতে তুলে দেয়ার জন্য এ সরকার পাকাপোক্ত করে রেখেছে। তারা অন্য দেশের সঙ্গে যেসব চুক্তি করেছে তা কখনও বৈধতা পাবে না। কারণ এগুলো পার্লামেন্টে উপস্থাপন করা হয়নি। দেশের জনগণকে জানানো হয়নি। চিরদিনের জন্য অন্য দেশের শৃঙ্খল ঠেকাতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমাদের অন্যের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে হবে। জিয়াউর রহমান এ দেশকে স্বনির্ভর করার জন্য কাজ করেছিলেন। তিনি বলেন, ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনে অংশ না নিয়ে আমরা ভুল করিনি। জনগণ সেটা প্রমাণ করেছে। এ সময় তিনি উপজেলা নির্বাচনে সরকারের নানা অনিয়ম ও নৈরাজ্যের চিত্র তুলে ধরেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, আমি অন্যায়ের কাছে কখনও মাথা নত করিনি, করবোও না। যতদিন আল্লাহ জীবিত রাখবেন, ততদিন দেশের জন্য, দেশের গণতন্ত্রের জন্য কাজ করে যাবো ইনশাআল্লাহ।
অনুষ্ঠানে একাত্তরের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে অবদান রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ পাঁচ ব্যক্তিকে বিশেষ সম্মাননা দেয়া হয়। সম্মাননাপ্রাপ্তদের দু’জনকে ক্রেস্টের সঙ্গে এক লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়। সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেন বিবিসি খ্যাত সাংবাদিক সিরাজুর রহমান, অনারারি লেফটেন্যান্ট (অব.) আবদুল হাই বীর প্রতীক, আবুল হাশেম বীর বিক্রম, বেগম আলম তারা ও ২নং সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম। খালেদা জিয়?া অতিথিদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন। এদের মধ্যে বেগম আলম তারা ও নুরুল ইসলামকে এক লাখ টাকা করে দেয়া হয়। এছাড়া অনুষ্ঠানে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলকেও সম্মাননা ক্রেস্ট দেয়া হয়। সংগঠনের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত ও সেক্রেটারি শফিউজ্জমান ছোটন বিএনপি চেয়ারপারসনের হাত থেকে এ সম্মাননা ক্রেস্ট নেন। মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রম বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু সেনাপতি ছিলেন না তাহলে তিনি সৈনিকদের রেখে পাকিস্তান যেতেন না। যুদ্ধের সেনাপতি ছিলেন জিয়া। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন, যুদ্ধ করেছেন। যেখানে বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবের শেষ, সেখানেই জিয়াউর রহমানের শুরু। প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করবো আপনার দলে খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা থাকলে তাদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করুন। দেখা যাক কোন দলে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেশি। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের বিরুদ্ধে জিয়াউর রহমান ও মেজর মঞ্জুর হত্যার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে প্রয়োজন হলে সাক্ষীসহ আদালতে যেতে আমি প্রস্তুত আছি। বক্তব্যে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা ও প্রথম বিদ্রোহের পূর্বাপর তুলে ধরে নানা স্মৃতিচারণ করেন। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম বলেন, মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বাধীন জেড ফোর্স সবচেয়ে বেশি হতাহত হয়েছে। জেড ফোর্সের মুক্তিযোদ্ধারাই সাহসিকতার জন্য সর্বাধিক খেতাব পেয়েছেন। আজ যত কথাই বলা হোক, সেদিন যুদ্ধে রাজনীতিবিদদের বড় ভূমিকা ছিল না। যুদ্ধের ময়দানে গোলাবারুদের শব্দ শুনলে রাজনীতিবিদরা পিতার নাম ভুলে যেতেন। তিনিও মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের ভূমিকার নানা স্মৃতিচারণ করেন। ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা বলেন, জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট, তিনিই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। জিয়াউর রহমান একদিনের জন্য হলেও দেশের প্রথম ঘোষিত প্রেসিডেন্ট। জিয়া?উর রহমানই যে স্বাধীনতার ঘোষক ছিলেন সেটা মুজিব নগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদও তার বইতে লিখে গেছেন। আলোচনা সভায় বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জে. (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা মে. জে. (অব.) আইন উদ্দিন বীরপ্রতীকসহ বেশ কয়েকজন রণাঙ্গনের খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে রণাঙ্গনের হাজারো মুক্তিযোদ্ধা, বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গণি, নজরুল ইসলাম খান, ড. মইন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যরিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তমসহ বিএনপি ও অঙ্গদলের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সভার শুরুতেই মহান একাত্তরে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এছাড়া খালেদা জিয়ার বক্তব্যের আগে মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ গঠনে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।