উপজেলা নির্বাচনসহ এ ধরনের নির্বাচন দলীয়ভাবে হওয়া উচিত মন্তব্য করে সাম্প্রতিক নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কারচুপি করেনি বলে দাবি করেছেন দলটির সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যদি কারচুপি (রিগিং) করত জামায়াতকে একটা চেয়ারম্যান পদেও জিততে দিত না। অথচ তারা বিভিন্ন জায়গায় চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দলগতভাবে করা উচিত বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের পক্ষে আবারও নিজের অবস্থান তুলে ধরেন।
উপজেলা নির্বাচন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এই নির্বাচন দলীয়ভাবে হয় না। দল থেকে হলে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া যেত। একটা নিয়ন্ত্রণ থাকত। এখন না আছে নিয়ন্ত্রণ, না আছে কিছু। অথচ গণনার সময় হিসাব করা হয় দলীয়ভাবে। সবাই সবাইকে চিনে, তাই দলীয়ভাবে হিসাব করে ফলাফল লিখে দেয়া হয়। আগামীতে এই ইলেকশনগুলো দলীয়ভাবে হওয়া উচিত।
নির্বাচনে কারচুপি ও অনিয়ম বন্ধ করতে ইভিএম চালুর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনিয়ম বন্ধে ইলেকট্রনিক ভোটিংয়ে যেতে হবে, তাহলে অনিয়ম বন্ধ হবে। অবৈধ ভোট দেয়া বন্ধ হবে। চিরদিনের মতো এসব অনিয়ম বন্ধ করতে ইভিএম চালু করতে হবে। উপজেলা নির্বাচনের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় আওয়ামী লীগ জড়িত নয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কারা কেন্দ্র দখল করেছে, টাকা ছিটিয়েছে, জাল ভোট করেছে একদিন তা প্রকাশ পাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। ক্ষমতায় থাকার কারণে অনেকেই প্রার্থী হয়েছেন প্রথম ধাপে। বসতে বলা হলেও তারা তা না শুনে বরং বলেছে বিজয়ী হয়ে আপার (শেখ হাসিনা) গলায় বিজয়ের মালা দেব। আরও কত কী। আমার এলাকায়ও প্রার্থী ছিল ৬ জন। এগুলো বিচার বিশ্লেষণ করে দেখি আমাদের ভোট বেশি কিন্তু সিট কম। পরের ধাপগুলোতে আমরা একক প্রার্থী দেয়ার ব্যবস্থা করি। তাতে বেশি সিটে আমাদের জয় আসে। তখন পত্র-পত্রিকায় লিখা শুরু হল অন্য কথা।
স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক তুলে এখন আবার বিএনপি দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি নিয়ে বিতর্ক তুলছে বলে অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) এখন ফর্মুলা পাল্টেছে, এতদিন বলেছেন জিয়া স্বাধীনতার ঘোষক, এখন বলছেন প্রথম রাষ্ট্রপতি। বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান, প্রথম উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ।
শেখ হাসিনা বলেন, কিছু অর্বাচীন উদ্দেশ্যমূলকভাবে ইতিহাস বিকৃত করছে। তারা মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়। পঁচাত্তরের পর থেকেই এ ধারা শুরু করে তারা। এরা একাত্তরে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে চায়। তাই তারা ইতিহাসকে বিকৃত করেছে, কখনও ঘোষণা (স্বাধীনতার) নিয়ে, কখনও অন্যভাবে। সত্য একদিন প্রকাশিত হবেই, এবং তা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখে বলেন, কেউ স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে ইয়াহিয়া খান তাকে গ্রেফতার করল না কেন? ইয়াহিয়াতো বঙ্গবন্ধুকেই গ্রেফতার করল। ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের শত্র“ হিসেবে ঘোষণা করে। আরতো কারও নাম নেয়নি। জিয়া আসলে নামেই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশ স্বাধীনের পর বঙ্গবন্ধু জিয়াকে প্রমোশন দিয়ে মেজর জেনারেল করেছেন। অথচ সে-ই গাদ্দারি করল, মুনাফেকি করল। পঁচাত্তরের পর অবৈধ উপায়ে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী বানাল, মাওলানা মান্নান খানকে মন্ত্রী বানাল, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুনর্বাসন করেছে। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক হলে কীভাবে তিনি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে ক্ষমতায় বসান।
শেখ হাসিনা বলেন, এতদিন ঘোষক নিয়ে ছিল, এখনতো ঘোষক থেকে রাষ্ট্রপতি বানিয়ে ফেলল। সিআইএ-সহ বিদেশী বিভিন্ন সংস্থা, দেশী-বিদেশী পত্র-পত্রিকা সব জায়গাতেই আছে ২৬ মার্চ কে স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন। তিনি বলেন, যে ৪০০ টাকা বেতনে মুজিবনগর সরকারের অধীনে চাকরি করত। সে নাকি প্রথম রাষ্ট্রপতি। এ সময় তারেক জিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, লন্ডনে বসে একটু পড়ালেখা করতে পারত। বিদেশে থাকলে তো একটু পড়াশোনা করার কথা। কিন্তু, সেটুকু পড়াশোনা করেছে কিনা জানি না। সরকারপ্রধান বলেন, বিএনপির জন্মই অবৈধ ও অসাংবিধানিক উপায়ে। যাদের জন্মটাই সমস্যা, তারা তো বেসামাল বলবেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অগণতান্ত্রিক সরকার আনার ষড়যন্ত্রকারীরা এখনও সক্রিয়। অনির্বাচিত কাউকে ক্ষমতায় আনতেই একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী উপজেলার নির্বাচন নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সহিংসতার সংবাদ প্রচার করছে বলেও প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন। সার্কাসের গাধার দড়ি ছেঁড়ার অপেক্ষার কৌতুকটি বলে শেখ হাসিনা বলেন, অনেকেই দড়ির দিকে তাকিয়ে থাকে- কবে দড়ি ছিঁড়বে, কবে ক্ষমতায় যেতে পারবে। গণতন্ত্রের ধারা যে কোনো মূল্যে বজায় রাখার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যখন গণতন্ত্র থাকে না, অগণতান্ত্রিক কেউ ক্ষমতায় থাকে। তখন ওনাদের দাম বেড়ে যায়। ওনারা নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থে গণতন্ত্র ধ্বংস করতে চান। শেখ হাসিনা বলেন, এখনও শেষ হয়নি। তারা পিছিয়ে যায়নি। তাদের ষড়যন্ত্র এখনও চলছে।
লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অগ্নিশিখা নিয়ে নতুন প্রজন্ম এগিয়ে যাবে। এই যে শিখা প্রজ্বলিত হল, কেউ তা নেভাতে পারবে না।
আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মতিয়া চৌধুরী, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ।