ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে নতুন করে জটিলতা দেখা দিয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য আসম হান্নান শাহকে আহ্বায়ক করে ২১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি চূড়ান্ত করা হলেও শেষ পর্যন্ত ফের নাটকীয় সিদ্ধান্ত আসতে পারে। কমিটি গঠন নিয়ে দলের মধ্যে দুটি গ্র“পের দ্বন্দ্ব-কোন্দল স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বর্তমান আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকাবিরোধী বলে পরিচিতরা চাচ্ছেন যত দ্রুত সম্ভব হান্নান শাহকে আহ্বায়ক করে কমিটি বের করে আনতে। কিন্তু নানা চেষ্টা তদবির করেও আপাতত তারা সফল হতে পারেননি। কারণ খোকাসমর্থকরাও ইদানীং বেশ সক্রিয়। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে তারা পরামর্শ দিচ্ছেন- হয় খোকাকেই আহ্বায়ক করা হোক, নয় তো মহানগরীকে দুই ভাগ করে কমিটি গঠন করা হোক। বিএনপি চেয়ারপারসনের এক আস্থাভাজন উপদেষ্টা খোকার পক্ষ নেয়ায় তৈরি হচ্ছে নতুন নাটকীয়তা। একটি সূত্র জানিয়েছে, সাদেক হোসেন খোকাকে আহ্বায়ক করে নতুন কমিটি দেয়া হলে, তাতে আপত্তি জানাবে তার বিরোধীরা। তবে মহানগরকে দুই ভাগ করে কমিটি গঠন করলে তাতে সম্মতি থাকতে পারে তাদের।
সূত্র জানায়, ৯ মার্চ বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দ্রুত মহানগর কমিটি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী ১৫ মার্চের আগেই কমিটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন শোনা যাচ্ছে ৩১ মার্চ উপজেলা নির্বাচন শেষে কমিটি ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ১২ মার্চ সাদেক হোসেন খোকা এক সংবাদ সম্মেলনে নগরীর আহ্বায়কের পদে আর নয় এমন ঘোষণা দেয়ায় কমিটি গঠন নিয়ে নাটকীয়তা সৃষ্টি হয়। ওই সময় তিনি আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার জন্য নিজের দোষ স্বীকার না করে দলের ছয় নেতাকে দায়ী করেন। এরপর তার বক্তব্য নিয়ে দলে তোড়পাড় শুরু হয়। খোকার বক্তব্যের জবাবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ওইদিন বলেন, যারা দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নে জড়িত, তাদের মুখেই এসব কথা মানায়। তিনি (খোকা) ব্যর্থতা আড়াল করতে নানা কথা বলছেন।
কমিটি নিয়ে সিনিয়র নেতাদের এমন পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে চাপা উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বিষয়টি চেয়ারপারসন পর্যন্ত গড়ায়। তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করতে সিনিয়র নেতাদের পরামর্শ দেন। এরপর থেকে মহানগর কমিটি নিয়ে সিনিয়র নেতারা প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছেন না। তবে কমিটি নিয়ে ভেতরে ভেতরে খোকা ও তার বিরোধীরা পৃথক পরিকল্পনা তৈরি করছেন। উপজেলা নির্বাচন শেষ হওয়ার পর উভয় গ্র“প তাদের পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামবে।
সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াসহ দলের একটি অংশ খোকাকে সরিয়ে যে কোনো মূল্যে নতুন কমিটি বের করতে নানা কৌশল করছেন। সরকারবিরোধী আন্দোলনে ঢাকা মহানগর কমিটি ব্যর্থ এমন অভিযোগ সামনে রেখে খোকাকে সরানোর মিশনে নামে ওই গ্র“পটি। দলের নীতিনির্ধারকসহ চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেও তারা বুঝাতে সক্ষম হন খোকার কমিটি ব্যর্থ। খালেদা জিয়াও মহানগরী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ব্যর্থতার জন্য তাদের ভর্ৎসনা করেন। সব মিলিয়ে খোকা-সালামকে বাদ দিয়ে হান্নান শাহকে আহ্বায়ক করে খসড়া কমিটি চূড়ান্ত করা হয়। যে কোনো সময় কমিটি ঘোষণা হচ্ছে দুই সপ্তাহ থেকে এমন গুঞ্জন চলছে। তবে খোকা সমর্থকরা সক্রিয় হওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।
সূত্র জানায়, ব্যর্থতার দায়ভারে কমিটি থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না সাদেক হোসেন খোকা। তাই সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিপক্ষদের পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, আপনাদেরও তো মহানগরীতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল আপনারা কোথায় ছিলেন? খোকার এমন ঘোষণার পর নড়েচড়ে বসেন খোকাসমর্থক বলে পরিচিত দলের সিনিয়র নেতারা। চেয়ারপারসনের এক ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা খালেদা জিয়ার কাছে গিয়ে খোকাকে দিয়ে কমিটি পুনর্গঠন করার অনুরোধ জানান।
তা না হলে দুই ভাগ করে কমিটি করার প্রস্তাব দেন তিনি। এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানসহ দলের বড় একটি অংশ চায় খোকাকে রেখেই কমিটি পুনর্গঠন করা হোক। মহানগরীতে খোকার বিকল্প কেউ নেই বলেও তারা বিভিন্ন জায়গায় বলে আসছেন। আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে নেতাকর্মীদের রাজপথে নামাতে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন পড়বে। নতুন কমিটিতে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের পক্ষে এত টাকা খরচ করা সম্ভব নয় বলেও যুক্তি খোকাসমর্থকদের।
২০১১ সালের ১৪ মে যুক্তরাজ্য সফরে যাওয়ার দিন খালেদা জিয়া সাদেক হোসেন খোকাকে আহ্বায়ক ও আবদুস সালামকে সদস্য সচিব করে ২১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করেন। ছয় মাসের মধ্যে সর্বস্তরের কাউন্সিল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঢাকা মহানগর শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটি নির্বাচন করারও নির্দেশনা দেয়া হয় তখন। কিন্তু পৌনে তিন বছরেও মহানগরীর পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়নি।