মন্ত্রীদের চাপে পরিকল্পনামন্ত্রী

0
114
Print Friendly, PDF & Email

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীর চাপের মুখে রয়েছে খোদ পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দের দাবি জানিয়ে সরকারের সিনিয়র মন্ত্রীরা তাদের অফিসিয়াল প্যাডে সরাসরি পরিকল্পনামন্ত্রীকে এই চিঠি দিচ্ছেন। এ পর্যন্ত ছয় মন্ত্রীর কাছ থেকে তিন হাজার ৫৯৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দের দাবি পেয়েছে বলে পরিকল্পনা কমিশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত পরিকল্পনা কমিশনের কাছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অর্থবছরের বাকি সময়ের জন্য মোট তিন হাজার ৩৭৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। গতকাল এসেছে বাণিজ্যমন্ত্রী, নৌপরিবহন মন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ চিঠি দিয়ে ১৮২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়েছেন। আর নৌপরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান চেয়েছেন ৬৪০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। তিনি চলতি অর্থবছরে চারটি প্রকল্পের জন্য এই বরাদ্দ চেয়েছেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ভোলার একটি পৌরসভার অবকাঠামোগত উন্নয়নে ২০ কোটি টাকাসহ মোট ১৮২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়েছেন তার চিঠিতে। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭৬টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন প্রকল্পের জন্য অতিরিক্ত ৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে বলা হয়েছে। এই প্রকল্পটি তৃতীয় সংশোধিত প্রকল্প। নৌপরিবহন মন্ত্রী মো: শাহজাহান খানের মন্ত্রণালয়ের চারটি প্রকল্পের মধ্যে ১০টি ড্রেজার কেনা, ১২টি গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ খনন ইত্যাদি রয়েছে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ২০১০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছেন। তিনি চিঠিতে বলেছেন, অপ্রতুল বরাদ্দের কারণে এখন ঠিকাদারের চুক্তির বিপরীতে তাদের বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এমনকি প্রকল্পের চাহিদা অনুযায়ী কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ রয়েছে পাঁচ হাজার ২২৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা। চাহিদা মেটাতে অতিরিক্ত আরো ২০১০ কোটি টাকা বৃদ্ধি করে মোট সাত হাজার ২৭৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। চলতি (২০১৩-১৪) অর্থবছরে সংশোধিত এডিপিভুক্ত ১০০টি প্রকল্পের অনুকূলে অতিরিক্ত এ বরাদ্দ চেয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর এই চিঠি। এ ছাড়াও চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে, যোগাযোগের জন্য গ্রামীণ সড়ক উন্নয়ন বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ওয়াদাগুলোর মধ্যে অন্যতম। সারা দেশে সড়ক ও ব্রিজ/ কালভার্ট নির্মাণের বিষয়ে এলাকার জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের যেমন ব্যাপক চাহিদা আছে তেমনি দরিদ্র জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে এসব কার্যক্রম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের চিঠিতে সেতু বিভাগের বাজেট থেকে ৫১০ কোটি টাকা কর্তন করে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ দিতে বলা হয়েছে। চিঠিতে তিনি বলেছেন, নিয়মিত ও চলমান প্রকল্পগুলো মূল্যায়ন করা হয়েছে। এতে করে চলতি অর্থবছরে আরো অতিরিক্ত ৮৬৯ কোটি টাকা দরকার। অন্যথায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। অন্য দিকে শিক্ষামন্ত্রী চেয়েছেন ২১৫ কোটি টাকা জিওবি খাত থেকে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, এর আগে এমনভাবে মন্ত্রীদের পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো চিঠি তেমন একটা আসত না। কিন্তু এবার এই হারটা অনেক বেশি। প্রকল্পগুলো যখন অনুমোদন দেয়া হয় তখন সময় ও ব্যয় সঠিকভাবে নিরূপণ করেই দেয়া হয়। কিন্তু বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অর্থের অপচয় করার কারণে টাকা শেষ হয়ে যায় কিন্তু শেষ হয় না প্রকল্প। ফলে এক দিকে মেয়াদ বাড়ে, অন্য দিকে ব্যয়ও বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে নতুন করে প্রকল্প টাকার অভাবে নেয়া যায় না। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়নের হার মাত্র ৩৮ শতাংশ। অর্থবছরের আর মাত্র চার মাস বাকি আছে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি স্থানীয় সরকার বিভাগে ৫৫ শতাংশ, সেতু বিভাগে মাত্র ৫ শতাংশ, সড়ক বিভাগ ৪০ শতাংশ এবং শিক্ষা ৪০ শতাংশ বলে বাস্তবায়ন, মূল্যায়ন ও পরিবীক্ষণ বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

শেয়ার করুন