প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত সাধারণ নির্বাচনের সময় স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে জনগণ যেভাবে রুখে দাঁড়িয়েছে- তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘একাত্তরের মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতি গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সন্ত্রাসী ও স্বাধীনতা বিরোধীদেরকে প্রতিহত করেছে এবং দেশকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাধীনতা পুরস্কার-২০১৪ প্রদানকালে এ কথা বলেন ।
জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এবং জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের অমর চেতনা বাস্তবায়নে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতিবছর দেশের নাগরিক বা সংগঠনকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া হয় ।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য নয়জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটকে চলতি বছরের স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়া হয় ।
পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা হচ্ছেন Ñ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য সাবেক গণপরিষদ সদস্য মোহাম্মদ আবুল খায়ের (মরণোত্তর), শহীদ মুন্সি কবির উদ্দিন আহমেদ (মরণোত্তর), শহীদ কাজী আজিজুল ইসলাম (মরণোত্তর), লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব) মোঃ আবু ওসমান চৌধুরী, ড.খসুরুজ্জামান চৌধুরী (মরণোত্তর), শহীদ এস বি এম মিজানুর রহমান (মরণোত্তর) ও ডা. মোহাম্মদ হারিছ আলী (মরণোত্তর), শিক্ষায় অধ্যক্ষ মোঃ কামরুজ্জামান (মরণোত্তর), সংস্কৃতিতে শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী এবং কৃষি-গবেষণা ও উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি)।
প্রধানমন্ত্রী এ বছর স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে তাঁদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পুরস্কার প্রদান করেন। পুরস্কারের মধ্যে রয়েছে- একটি করে ৫০ গ্রাম ওজনের স্বর্ণপদক, দুই লাখ টাকার একটি চেক ও একটি সনদপত্র।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট তাদের জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করেছিল। তারা প্রিজাইডিং অফিসার, বিজিবি ও পুলিশ হত্যা, বাসে, রেলে আগুন, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, সম্পদ নষ্টসহ নানা অপকর্ম করেছিল।
তিনি বলেন, ‘একটি বিষয়ে আমি সত্যি প্রশংসা করি, সেসময় প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনী, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী একাত্তরের মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ নির্বাচন যাতে অনুিষ্ঠত হতে পারে, জানমাল যাতে রক্ষা হয়- দৃঢ়তার সাথে তা মোকাবেলা করতে পেরেছিল। যার জন্য দেশে শান্তি ফিরে আসে। দেশে গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা পায় ।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার দেশের অর্থনীতির অগ্রগতির পাশাপাশি বাংলাদেশকে একটি উদার গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও শান্তিকামী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, যারা উড়ে এসে জুড়ে বসে- দেশের জন্য তাদের কোন মায়া থাকে না। ভোগ করার মানসিকতা দিয়েই তারা দেশ চালায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা ত্যাগ স্বীকার করেছে, যখন তাদের হাতে ক্ষমতা এসেছে ,তখনই দেশের উন্নতি হয়েছে।’
তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রে আমরা সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করতে পেরেছি বলেই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল একটাই- দেশকে আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে দাঁড় করানো। যে জাতি যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করতে পারে, সে জাতি কেন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আর হানাহানি, জঙ্গিবাদ চাই না। আমরা বাংলাদেশকে সেভাবে গড়তে চাই যেখানে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, হানাহানি থাকবে না। বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়া ও বিশ্বের একটি উন্নত দেশ।
যারা স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন তাদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে তারাও মুক্তিযোদ্ধাদের মতো অবদান রেখেছেন।
সবাইকে লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামীকাল ২৬ মার্চ প্যারেড স্কয়ারে লাখো কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হবে। সকলকে আমন্ত্রণ জানাই। যারা দূরে আছেন তারা নিজ নিজ জায়গা থেকে একাত্ম হবেন। আমরা এ দেশটা সুন্দরভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুসহ স্বাধীনতা যুদ্ধের সকল শহীদ, জাতীয় চার নেতা, স্বাধীনতা যুদ্ধে নির্যাতিত নারী, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূঁইয়ার পরিচালনায় পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি, প্রধান মন্ত্রীর মুখ্য সচিব, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রীবর্গ, তিন বাহিনী প্রধানগণ, কূটনৈতিকবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, বিচারপতিগণসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।