হংকংয়ের মতো পুঁচকেদের কাছে হার এর পর সুপার টেন এ যে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হচ্ছে, আগে-ভাগে সেই পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে সমর্থকদের প্রতি সাকিবের আহ্বান ছিল একটাই, বেশি বেশি প্রত্যাশা না করা। সুপার টেন এ বাংলাদেশের গ্রুপের ৪ প্রতিপক্ষ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন, তারা কেউ বাজে ক্রিকেট না খেললে জয়ের সম্ভাবনা নেই-মিডিয়াকে সে বাস্তবতার কথাই জানিয়েছিলেন সাকিব। তার সে অনুমানই ফলে গেছে। সুপার টেন এ প্রতিপক্ষদের টার্গেটে বাংলাদেশ, নেট রান বাড়িয়ে নিতে বাংলাদেশ তাদের লক্ষ্য-ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এ প্রশ্ন উড়িয়ে দিলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৭৩ রানে হেরে তা হাড়ে হাড়ে উপলদ্ধি করেছেন মুশফিকুর।
টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রথম ১০ ওভার পর্যন্ত ওভারপ্রতি ৭.৪ এর বেশি রান না দিয়েও শেষটা সেভাবে করতে পারেনি বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনিং পার্টনারশিপের ৭২ বলে ৯৭, এবং শেষ ১০ ওভারে ৯৫ই ম্যাচে লড়াই থেকে ছিটকে ফেলেছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের স্পিনকে ভারতের সমকক্ষ কাতারে আনতে রাজি নন উইন্ডিজ কোচ, বাংলাদেশের স্পিন উপদেষ্ঠা কোচ সাকলায়েন মুস্তাককে নিজেদের দলে ভিড়িয়ে নিয়ে স্পিন অস্ত্র ধারালো করে সে জবাবই দিয়েছেন ওটিস গিবসন। তার লেগ স্পিনার স্যামুয়েল বাদরি (৪/১৫), আর বাঁ হাতি পেস বোলার স্যান্টোকি (৩/১৭) তোপে টি-২০তে নিজেদের দ্বিতীয় লোয়েস্টের লজ্জা (৯৮/১০) যে পেতে হলো বাংলাদেশকে। তামীমের (৫) উইকেট বিলিয়ে দেয়া দিয়ে শুরু ব্যাটিং হতাশার মহড়া, বিজয়ের স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পা দেয়া (১০), মুমিনুলের বাজে শটে আত্মহুতি (১৬), আর ব্যাট-প্যাডের বিশাল ফাঁক দিয়ে সাকিবের বোল্ড আউটে (০)-এমন বাজে ডিসপ্লে যে দেখতে চায়নি কেউ। ৪র্থ জুটির ৩৫-এ বড় লজ্জা থেকে বাঁচিয়েছে বাংলাদেশকে। পুরো ইনিংসে ১টি মাত্র ছক্কায় ২২ রানের ইনিংসে দায়মুক্তি কিছুটা পেতে চেয়েছেন মুশফিকুর (২২ রান)। হাফফিট মাশরাফিও চেষ্টা করেছেন সাধ্যমত (১৯)। তবে বড় হার এড়ানো যে সম্ভব হয়নি। অথচ, এই ওয়েস্ট ইন্ডিজকেই কি না টি-২০ বিশ্বকাপের অভিষেকে লজ্জা দিয়েছে বাংলাদেশ, এই ম্যাচের আগে ৪টি লড়াইয়ে ২-২এ ছিল সমতা।
পাওয়ার প্লেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩৬/০ স্কোরে টি-২০ সেনশেসন গেইলের রান মাত্র ৫, তাও আবার ১৫ বলে! জানেন, প্রথম বাউন্ডারির শটে গেইলকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২২তম বল মোকাবেলা পর্যন্ত। গেইল নির্ভর ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলই কি না শেষ পর্যন্ত স্কোর টেনে নিয়েছে ১৭১/৭ পর্যন্ত! আসলে গেইলকে থামানোর কৌশল নিয়ে এতো বেশি ভেবেছে যে, অন্যদের নিয়ে পরিকল্পনা পরিকল্পনারই কোন সময় পায়নি বাংলাদেশ। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে (৪৩ বলে ৭২) সেটাই জানিয়ে দিয়েছেন আর এক উইন্ডিজ ওপেনার ডুয়াইন স্মিথ!
বাংলাদেশের বিপক্ষে ইতোপূর্বের ২টি টুয়েন্টি-২০ তে ০ এবং ৬ স্কোর বলে গেইল ছিলেন সাবধানী। সোহাগ গাজী জুজু শুরুতে পেয়ে বসেছিল তাকে। তবে ইনিংসের প্রথম ছক্কায় লং অফের উপর দিয়ে সেই সোহাগ গাজীকেই নিয়েছেন বেছে গেইল। শুরুতে ধুঁকতে থাকা গেইল ইনিংস টেনে নিয়েছেন ৪৮ পর্যন্ত। উইন্ডিজের আতঙ্ক বলে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল যাকে, সেই অফ স্পিনার সোহাগ গাজী উইকেটহীন, খরচা করেছেন সবচেয়ে বেশি রান (৪৮)।
আসলে মুশফিকুরের মুখস্ত বোলিং লাইন আপেই ভুগেছে বাংলাদেশ। পেস বোলিং অল রাউন্ডার হিসেবে জিয়াকে দলে ফিরিয়ে এনে সেই জিয়াকে বল হাতে তুলে দিতে অপেক্ষা করেছেন মুশফিকুর ১৯তম ওভার পর্যন্ত। এবং সেই ওভারে গেইল তার শিকারে পরিণত। এই ম্যাচেও সাকিবকে একটানা ৪ ওভার বোলিং করিয়েছেন তিনি। এই ম্যাচেও বাজে ফিল্ডিংয়ের অপবাদ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ ৫ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যোগ করেছে ৫৫ রান, তার জন্য দায়টা নিতে হবে বাংলাদেশ ফিল্ডারদের। মুশফিকুর নিজে উইন্ডিজকে উপহার দিয়েছেন বোনাস ২টি বাউন্ডারি, ২টিই বাই খাত থেকে, এবং দু’টিই তার দু’পায়ের ফাঁক দিয়ে (১৮তম ওভারে)। শেষ ওভারে স্যামীর ক্যাচ ফেলে দিয়ে বোনাস বাউন্ডারির দায়টা মাহামুদুল্লাহ’র, পরের শটে রিয়াদের ক্যাজুয়াল ফিল্ডিংয়ে আরো একটি বাউন্ডারি। ১৬তম ওভারে রিয়াদকে গেইল লং অনে যে শটটি নিয়েছিলেন, সে শটটি সোজা ফিল্ডার বিজয়ের দিকেই ধাবিত,অথচ গোল বাঁচানোর জন্য গোলরক্ষক যেভাবে বল ফিস্ট করাকে আদর্শ মনে করেন, সেভাবে ফিল্ট করতে যেয়ে তা বাউন্ডারিতে পরিণত করে গেইলকে পুরস্কৃত করেছেন বিজয়।
২৭তম জন্মদিন পালনের পরদিন টি-২০তে রাজকে টপকে সর্বাধিক উইকেটে (৪৩টি) বেছে নিয়েছেন সাকিব লেন্ডন সিমন্সকে। এমন একটি দিনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এই প্রথম ম্যাচে তিন উইকেটের মুখ দেখেছেন আল আমিন (৩/২১)। প্রথশ স্পেলটি এককথায় অসাধারণ (১-০-৩-০), শেষ ওভারে সেখানে ৩ রানে তিন উইকেট! যার মধ্যে পর পর ২ ডেলিভারীতে স্যামুয়েলস এবং আন্দ্রে রাসেল তার শিকার! টিমমেটদের বাজে ফিল্ডিংয়ের দায় থেকে নিস্কৃতি দিতে এদিন অসাধারণ ২টি ক্যাচ নিয়েছেন তামীম! জিয়াকে লং অফে যে শটটি নিয়েছিলেন গেইল, তা ছক্কা ধরে নিয়েছিল সবাই। তবে বাউন্ডারি রোপের ভেতরে বলটি লুফে নিতে না পেরে কৌশলে বলটি শুন্যে উড়িয়ে বাউন্ডারি রোপের ভেতরে লাফিয়ে তা লুফে নেয়ার দৃশ্য সত্যিই কল্পনাকেও মানাবে হার। ওই ক্যাচের মাধুর্যকেও হার মানিয়েছেন তামীম শর্ট থার্ডম্যানে এ্যাক্রোবেটিক ক্যাচে ব্রাভোকে ফিরিয়ে দিয়ে! ৭৩ রানে উইন্ডিজের কাছে বিশাল হারে শুরু সুপার টেন এ মনে রাখার মতো কেবল এই দু’টি ক্যাচই।