জাতীয় সংসদ ভবনের চারপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ নিয়ে সমালোচনার প্রেক্ষিতে স্থপতি লুই আই কানের প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মূল নকশা আনার উদ্যোগ নিয়েছে সংসদ সচিবালয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন বলে সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে। গত বছর সংসদের চারপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরির উদ্যোগ নেয়ার পর বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ আসা শুরু হয়। সে সময় অনেকেই অভিযোগ করেন, এর মাধ্যমে মূল নকশায় আঘাত করা হবে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি গণপূর্ত অধিদপ্তর, স্থাপত্য অধিদপ্তর এবং সংসদের নিরাপত্তা শাখার সঙ্গে এক বৈঠকে শেখ হাসিনা নকশার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চান। তখনই মূল নকশার ‘কিছু অংশ’ বাংলাদেশের কাছে না থাকার বিষয়টি উঠে আসে।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়, লুই কানের প্রতিষ্ঠান জাতীয় সংসদ ভবনের কাজের জন্য বাংলাদেশের কাছে এখনো ৮৭ লাখ টাকা পাবে। এ কারণে মূল নকশা সংশ্লিষ্ট অনেক কিছুই বাংলাদেশের হাতে নেই। স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি মো. আহসানুল হক খান বলেন, “লুই কানের প্রতিষ্ঠানের টাকা পাওনা থাকার কথা জানার পরপরই প্রধানমন্ত্রী আমাদের নকশা আনার নির্দেশ দিয়েছেন। এখন সংসদ সচিবালয় তা বাস্তবায়ন করবে।” তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তীতে লুই কান কয়েকবার বাংলাদেশে কাজের জন্য আসেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মূল নকশা সংশ্লিষ্ট কিছু ‘প্ল্যান’ তিনি হস্তান্তর করতে পারেননি। পরবর্তীতে এ নিয়ে কোনো সরকার আগ্রহ দেখায়নি।
গত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলেও সংসদ এলাকায় মূল নকশার বাইরে স্পিকার-ডেপুটি স্পিকারের জন্য বাসভবন বানানো হয়। উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তখন ভবন দুটি তৈরি হয়। এ সংক্রান্ত একটি মামলা এখনো বিচারাধীন। নকশা সংগ্রহের উদ্যোগের বিষয়ে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, “সংসদ সচিবালয় থেকে সংশ্লিষ্টদের কাছে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। আশা করি নকশা আমাদের হাতে চলে আসবে।” সংসদ সচিবালয়ের গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সেলিম খান বলেন, “মূল নকশার হাতে না পাওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা বেষ্টনী দেয়ার পরিকল্পনা স্থগিত রাখা হয়েছে। ওগুলো হাতে পেলে আমরা বুঝতে পারবো নিরাপত্তা বেষ্টনী মূল নকশা বহির্ভূত হবে কিনা।”
এর আগে গত বছরের ২ জুন সংসদ কমিশনের বৈঠকে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ ভবন সংরক্ষণে মূল নকশার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় এমন কিছু না করার ব্যাপারে মত দেন। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলারও পরামর্শ দেন তিনি। স্থপতি আহসানুল হক খান বলেন, “লুই কানের ছেলের কাছ থেকে এসব নকশা আনা যাবে। ইতোমধ্যে তার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয়েছে।”১৯৬১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের আমলে বর্তমান সংসদ ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। সে সময় স্থপতি মাজহারুল ইসলামকে এই ভবনের স্থপতি নিয়োগ করা হয়। তার প্রস্তাবেই লুই আই কান এই প্রকল্পের প্রধান স্থপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি এ ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।