রাজধানীর রামপুরা থেকে উদ্ধার করা সোনার বারের চালান দুবাই থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় এসেছে। সোনার চালানটি এক প্রভাবশালী এমপির। এদিকে সোনার বার জব্দের রহস্যজনক তালিকার ঘটনায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ৪ জনকে আটক করেছে। এরা হলেন রামপুরা থানা পুলিশের সিভিল টিমের গাড়িচালক কনস্টেবল সজীব, সোর্স রনি এবং উদ্ধার করা গাড়িচালক সমীর বিশ্বাস ও আরোহী মাহিন। তবে গত ১১ দিনেও সোনার চালানের মূল হোতাকে গ্রেফতার এবং সোনার বারের রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেননি পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তারা।
রামপুরা থানা পুলিশের ৭০ পিস সোনার বার জব্দের ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার রাতে রামপুরা থানা থেকে মামলার ডকেট ডিবিতে পাঠানো হয়। এর আগেই ডিবি রামপুরার বনশ্রী এলাকা থেকে সজীব ও রনিকে আটক করে। এরও আগে আটক করা হয় সমীর বিশ্বাস ও আরাহী মাহিনকে।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গত ১৩ মার্চ রাতে রামপুরার ব্যাংক কলোনির বালুর মাঠ এলাকায় রামপুরার থানার সিভিল টিমের এসআই মঞ্জুরুল আলম একটি প্রাইভেটকার তল্লাশি করার সময় ওই গাড়ির চালক ও দুই যাত্রী পালিয়ে যায়। পরে প্রাইভেটকারটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে মেরাদিয়া বাজারে অবস্থিত রামপুরা থানায় আনা হয়। থানার পাশে একটি মসজিদের সামনের রাস্তায় গাড়িটি ফেলে রাখা হয়। ওই সময় অর্থাৎ ১২ মার্চ দিবাগত রাত ১২টা থেকে ১৫ মার্চ রাত ১০টা পর্যন্ত থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালা ছুটিতে ছিলেন। ১৬ মার্চ রাত ১১টার দিকে সমীর ও মাহিন নামে দুই যুবক পরিত্যক্ত গাড়ির মালিক দাবি করে থানায় গেলে তাদের আটক করে পুলিশ। থানার ওসি তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। একপর্যায়ে তারা জানায় যে, ওইগাড়ির পেছনের সিটের নিচে একটি কালো ব্যাগের ভেতর সোনার বার রয়েছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে থানার ওসি ও সেকেন্ড অফিসারের উপস্থিতিতে ওই গাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। গাড়ির পেছনের সিটের নিচ থেকে কালো রঙের একটি ব্যাগ জব্দ করা হয়। সেখানেই থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই কামরুজ্জামান একটি জব্দ তালিকা তৈরি করেন। তালিকায় উল্লেখ করা হয়, গাড়ি থেকে উদ্ধার করা ব্যাগের ভেতর থেকে ৭০ পিস সোনার বার পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, সোনার বার জব্দের পর রাত ১টার দিকে রামপুরা থানার ওসির কাছে পুলিশের একটি বিভাগের সহকারী কমিশনার মোবাইল ফোনে সোনার চালান ছেড়ে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। সহকারী কমিশনার ওসিকে আরো জানান যে, এই চালানটি দুবাই থেকে চট্টগ্রাম হয়ে ঢাকায় আসে। চট্টগ্রামের আলোচিত ছয় সোনা চোরাচালান সিন্ডিকেটের মধ্যে একজন ওই চালানের মালিক এবং তিনি একজন প্রভাবশালী এমপি। এ ঘটনার পর রামপুরা থানার ওসি সোনা জব্দ করার বিষয়টি চেপে যান। তিনি মাহিন ও সমীরকে আদালতে না পাঠিয়ে থানার হাজতখানায় রাখেন। পরের দিন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ হয়। এ সময় আটকৃতরা ব্যাগে ২৩৫টি সোনার বার ছিল বলে দাবি করে। পরে ১৮ মার্চ সকালে গাড়িচালক সজীবের মাধ্যমে পুলিশের মতিঝিল বিভাগের এক পদস্থ কর্মকর্তা জানতে পারেন যে, রামপুরা থানায় সিভিল টিমের তল্লাশির সময় গাড়ি থেকে ২৩৫ পিস সোনার বার উদ্ধার হয়েছে। এ ঘটনার পর পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামেন। ৭০ পিস সোনার বার উদ্ধার এবং দুইজনকে দুইদিন আটক করে বিষয়টি প্রকাশ না করায় পুলিশের সন্দেহ হয়। ১৮ মার্চ রামপুরা থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই কামরুজ্জামান বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ওই দিন বিকেলে ডিএমপি এক আদেশে রামপুরা থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালা ও পরিদর্শক (তদন্ত) নাসিম আহমেদকে প্রত্যাহার করা হয়। আর আটক ওই চারজনকে নেয়া হয় রিমান্ডে। এরই মধ্যে ২০ মার্চ মামলার তদন্ত এবং আটকদের ডিবি পুলিশে হস্তান্তর করা হয়।
সূত্র জানায়, সমীর বিশ্বাস ভারতীয় নাগরিক। তিনি সোনা চোরাচালান চক্রের সহযোগী। এ বিষয়ে তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবির সহকারী কমিশনার ইকবাল হোসেন বলেন, প্রকৃতপক্ষে কতটি সোনার বার জব্দ করা হয়েছিল এবং সোনার বার জব্দ করার বিষয়টি কী কারণে দুই দিন গোপন রাখা হয়েছিল এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই তাদের আটক করা হয়েছে। তবে কেবল তদন্ত শুরু করেছি। শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না।