এবার পরিকল্পনা করেই তৃণমূলের নেতাকর্মীদের দুঃখের সঙ্গী হচ্ছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। তৃণমূলে ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সেই তালিকা ধরেই আর্থিক, আইনি ও মানসিক সহযোগিতা দেবে দলটি।
সূত্র জানায়, এ বিষয়ে জরুরি নির্দেশনা দিয়েছেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন বাংলানিউজকে বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বিষয়ে দল বরাবরই আন্তরিক। দলের নির্বাহী কমিটির সভায় সেভাবে চূড়ান্ত কোনো তালিকা এখনো না হলেও ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের সহযোগিতার উদ্যোগ থাকবে দলের।
বিএনপির দফতরের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। যারা দলের জন্য নিবেদিত ও নানা সময়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের সহযোগিতার উদ্যোগ অবশ্যই দলের রয়েছে।
বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয় ও নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ বিষয়ে একাধিক ‘গ্রুপ’ কাজ করে যাচ্ছে। চূড়ান্ত তালিকা তৈরির পর ধাপে ধাপে ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের আইনি ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে এসব গ্রুপ।
অপর সূত্র জানায়, গুলশানের গ্রুপটি কাজ করছে তারেক রহমানের নির্দেশনা মেনে। বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন সহকারীসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও বিএনপিমনা কয়েকজন সাংবাদিক এ গ্রুপে থাকছেন বলেও সূত্রের দাবি।
অন্যদিকে খালেদা জিয়ার নির্দেশনায় নয়াপল্টনে অপর গ্রুপটি কাজ করছে।
সূত্র জানায়, একাধিক গ্রুপ হলেও সেগুলোর উদ্দেশ্য অভিন্ন। বিএনপির দফতরের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদসহ আরও কয়েকজন নেতা ও কর্মকর্তা এসব গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
দলের একজন আইনজ্ঞ নাম না প্রকাশের শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, নিহত বা গুম হওয়া নেতাকর্মীদের স্বজন ও মামলার শিকার নেতাকর্মীদেরকে আর্থিক ও আইনি সহযোগিতা দেওয়া হবে।
এছাড়া আহতাবস্থায় থাকা, পঙ্গুত্ব বরণ করা নেতাকর্মীদের সহযোগিতা দেওয়া হবে। যেসব নেতাকর্মীর বাড়িতে প্রতিহিংসামূলকভাবে হামলা হয়েছে তাদের পাশেও দাঁড়াবে এসব গ্রুপ।
সূত্র জানায়, ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের একাধিক তালিকা করা হচ্ছে গ্রুপগুলোর মাধ্যমে। সে তালিকার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে সহযোগিতার ধরন।
ফেব্রুয়ারি মাসেই খালেদা জিয়া এ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে রেখেছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের।
দলের নেতাকর্মীদের মামলার অবস্থা নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
এতে আইনজীবী ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন, শাহজাহান ওমর, জয়নাল আবেদীন, আমীনুল হক, বদরুদ্দোজা বাদল, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী, সম্পাদক মাহবুবউদ্দিন খোকন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, আইনজীবীদের উদ্দেশ্যে এক পর্যায়ে খালেদা বলেছেন, বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দিন দলের ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের। তারা যেন বুঝতে পারেন, দল তাদের গুরুত্ব বোঝে ও সব সময় তাদের পাশে আছে।
এছাড়াও খালেদা জিয়া ৭৫টি সাংগঠনিক জেলা বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকদের প্রতিও কঠোর নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন তৃণমূলের পাশে দাঁড়াতে। বিপদগ্রস্ত নেতাকর্মীদের পাশে কে থাকছেন আর কে থাকছেন না সেটাও তিনি মনিটরিং করছেন বলে গুলশান কার্যালয় সূত্র জানায়।
দায়িত্বশীল অপর সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে কেন্দ্র থেকে ৭৫টি সাংগঠনিক জেলায় কিছু টাকাও প্রদান করা হয়েছে, যা তৃণমূলের সহায়তার জন্যই দেওয়া।
এ টাকার পরিমাণ নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি। তিন থেকে চার লাখ টাকা করে জেলাগুলোতে পাঠানো হয়েছে বলে অসমর্থিত সূত্রের দাবি।
ভিন্ন সূত্র জানায়, বিএনপিমনা ব্যবসায়ীরাই এসব টাকা দিয়েছেন।