বাংলাদেশে দুর্বল গণতন্ত্র : ডন

0
98
Print Friendly, PDF & Email

ক্রিকেট উন্মাদনায় মত্ত জনগণ। এতে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে বাংলাদেশে বিরোধী দল সংক্রান্ত বিষয়াদির সমাধা হয়ে গেছে। সবমিলিয়ে বাংলাদেশের তৃতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের জন্য সবকিছুই ভাল যাচ্ছে। পাকিস্তানের প্রভাবশালী পত্রিকা ডন-এর এক সম্পাদকীয়তে এ কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়েছে, বিরোধীদের বর্জনে জানুয়ারির নির্বাচনে অর্ধ সংখ্যক আসনের ফল নির্ধারণ হয়েছে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়। ওই পরিস্থিতি বিবেচনায়, প্রধানমন্ত্রী যে উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি নির্বাচন চুরি করেছেন সেই বাস্তবতা ভুলে যাওয়া মুশকিল। গণতান্ত্রিক আদর্শচ্যুত হওয়ার এ নজিরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন-পীড়ন। বিরোধী দল জামায়াতে ইসলামীর এক নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। অন্য ১৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ২ জন অনেক নেতার বিরুদ্ধে বিতর্কিত পরিস্থিতিতে ‘যুদ্ধাপরাধ’-এর বিচার চলছে। সর্বশেষ টার্গেটে পরিণত হয়েছেন বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া। সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী হাসিনার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। নিজের ছেলে ও অন্য ব্যক্তিদের সহ তাকে অর্থ আত্মসাৎ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধ মামলার মতো শেখ হাসিনা পুরনো নথিপত্র বের করেছেন তার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বিচারের সম্মুখীন করার জন্য। ২০০১-০৬ পর্যন্ত খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি ও তার সহযোগীরা অর্থ-আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়। অর্থ-আত্মসাৎ নিঃসন্দেহে অপরাধ এবং অবশ্যই এর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। অভিযুক্তদের বিচারের সম্মুখীন করা উচিৎ। কিন্তু যে সময়টা বেছে নেয়া হয়েছে তা দুর্ভাগ্যজনক। আর শেখ হাসিনার পদক্ষেপ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সত্যিকারের অভিযানের তুলনায় বরং দমন-পীড়নে পরিণত হয়েছে। এ ধরনের পদক্ষেপের মাধ্যমে বিরোধী দলের ওপর অকুণ্ঠিত নির্যাতন করে হয়তো শেখ হাসিনা ক্ষমতার সময়কাল কিছুটা প্রলম্বিত করতে পারবেন তবে এতে সুদূরপ্রসারী ক্ষতির শিকার হবে বাংলাদেশ। এরকম পদক্ষেপ অবলম্বনের ফলে দেশটির উদীয়মান গণতন্ত্রের ওপর কি প্রভাব পড়ছে সেটা উপলব্ধি করার সময় এসেছে বাংলাদেশ সরকারের। স্থীতিশীলতার জন্য বাংলাদেশে শান্তি প্রয়োজন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি বাদ দিলে দেশটির অর্থনৈতিক প্রগতি প্রশংসনীয়। আজ হয়তো বিরোধী দলকে পরাভূত মনে হচ্ছে। কিন্তু যখন রাজনীতির পালাবদল হবে- যা কিনা হতে বাধ্য, তখন আজকের শাসকগোষ্ঠীর ওপর যদি তাদের নিজেদেরই অরুচিকর ওষুধ প্রয়োগ করা হয়, তাতে বিস্মিত হওয়ার কিছু থাকবে না।

শেয়ার করুন