আ.লীগ ভেতরে বিব্রত, প্রকাশ্যে তা বলছে না

0
92
Print Friendly, PDF & Email

উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতা এবং প্রশাসনের সহায়তায় ভোট জালিয়াতির ঘটনায় আওয়ামী লীগের ভেতরেই অসন্তোষ আছে। প্রকাশ্যে কেউ কিছু না বললেও এই নির্বাচনে সরকারের হস্তক্ষেপ নিয়ে দলের অনেকেই বিব্রত।
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কেউ কেউ মনে করেন, উপজেলা নির্বাচনে শক্তি প্রয়োগ করায় দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। অতি-উৎসাহী কিছু নেতা এবং সরকারের কেউ কেউ এসব ঘটনার নেপথ্যে থেকে দলের উচ্চপর্যায়ের বাহবা নেওয়ার চেষ্টা করলেও এতে নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলের ‘দাবি’ই প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে।
তিন ধাপের উপজেলা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, এই নির্বাচনে ক্রমান্বয়ে সহিংসতা বাড়ছে এবং সরকারের হস্তক্ষেপও বেড়েছে। তৃতীয় ধাপে সরকারি দল-সমর্থিত প্রার্থীরা বেশিসংখ্যক উপজেলায় পাস করলেও প্রশাসনকে ব্যবহার ও হতাহতের ঘটনা তুলনামূলক বেড়েছে। আজ রোববার চতুর্থ ধাপে ৯১টি উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে। এ নির্বাচন নিয়েও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল নানা আশঙ্কা করছেন।
সরকারের উচ্চপর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা নির্বাচনে সরকারের বিশেষ সংস্থাকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর দুজন উপদেষ্টা ও দলের কয়েকজন নেতা এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার একজন উপদেষ্টার বাসভবনে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। এ বৈঠকে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা যায়।
বৈঠক থেকেই একজন উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট এলাকার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের নির্বাচনের আগেও আওয়ামী লীগের উচ্চ ও মধ্যম সারির কয়েকজন নেতা ধানমন্ডির কার্যালয়ে বৈঠক করে প্রশাসনের শীর্ষ ও মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের টেলিফোনে দিকনির্দেশনা দেন।
আওয়ামী লীগের গত পাঁচ বছরে স্থানীয় নির্বাচন এবং সংসদীয় আসনের উপনির্বাচন মিলিয়ে পাঁচ হাজারের বেশি স্থানে ভোট গ্রহণ হলেও এতে কোনো সহিংসতা ছিল না। এবার উপজেলা নির্বাচনের তিন ধাপে চারজন নিহত এবং কয়েক শ আহত হয়েছেন। বাগেরহাটে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রহারে নিহত হয়েছেন। যশোরে বিএনপি-সমর্থিত একজন চেয়ারম্যান প্রার্থী আওয়ামী লীগ-সমর্থিতদের প্রহারে গুরুতর আহত হন।
আওয়ামী লীগবিরোধী এলাকা বলে পরিচিত নোয়াখালী জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে তিনটিতেই আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। ফেনীর তিনটির মধ্যে সবকটিতে সরকারি দল জিতেছে। বরিশালে পাঁচ এবং ভোলার চারটির মধ্যে সবগুলোতেই আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছে। এসব এলাকার নির্বাচনে প্রশাসনকে ব্যবহার করার অভিযোগ আছে।
আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বলে পরিচিত বৃহত্তর ফরিদপুর ও ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলায় বিএনপির অনেক প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এসব এলাকায় তুলনামূলক নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে বলে জানা যায়।
আবার কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগের প্রার্থীও প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনেছেন। বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দায়ী করেছে তাঁর পরিবার। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাচনে তৃণমূলের ভোটে মনোনয়ন পাওয়া আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাঁর পরাজয়ের পেছনে প্রশাসনের পক্ষপাতকে দায়ী করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
উপজেলা নির্বাচনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরেই সমালোচনা হচ্ছে। দলের মধ্যম সারির কয়েকজন নেতা জানান, উপজেলার মতো স্থানীয় নির্বাচনে জোরজবরদস্তি করা ঠিক হয়নি। স্বৈরাচারের পতনের পর স্থানীয় নির্বাচনে নিরপেক্ষতার যে একটা ঐতিহ্য গড়ে উঠেছিল, তাকে এভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করা ঠিক হচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের দুজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দলের পক্ষ থেকে যখন বলা হতো, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে ভুল করেছে, তখন জনগণ তা গ্রহণ করেছিল। কিন্তু এখন উপজেলা নির্বাচনের পর এ বক্তব্য জনগণ কতটুকু সঠিক মনে করবে, তা বলা মুশকিল।
তবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ নির্বাচনে প্রশাসনকে ব্যবহারের অভিযোগ নাকচ করে দেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘এ অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমার নিজের উপজেলায়ও আমরা হেরেছি। প্রশাসনকে ব্যবহার করলে আমরা হারতাম না।’

শেয়ার করুন