বৈদেশিক ঋণের ৭৫ শতাংশই লুট হয় : বারকাত

0
118
Print Friendly, PDF & Email

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেছেন, গত চল্লিশ বছরে সরকারিভাবে যে আড়াই লক্ষ কোটি টাকার বৈদেশিক ঋণ-অনুদান এসেছে তার ৭৫ শতাংশই লুঠ করেছে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তরা।

তিনি বলেন, বিত্তবানদের এই লুটপাটের কারণে ক্ষমতাধররা অধিকতর ক্ষমতাবান হয়েছেন, আর ক্ষমতাহীন দরিদ্রের অক্ষমতা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। দুর্বৃত্ত-লুটেরাদের সঙ্গে বাজার-অর্থনীতি, রাজনীতি ও সরকারের সম্মিলিত স্বার্থের সম্মিলনই এ অবস্থার জন্য দায়ী।

শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘বাংলাদেশে দারিদ্র্য-বৈষম্য-অসমতা:একীভূত রাজনৈতিক-অর্থনীতির তত্ত্বের সন্ধানে’ শীর্ষক সেমিনারে লোকবক্তার বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

আবুল বারকাত বলেন, মূলত সাংবিধানিক বিধান ও অধিকার থেকে বঞ্চিতরাই দরিদ্র। সেই হিসাব অনুযায়ী দেশের ৮৩ শতাংশ লোক দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করছেন। অন্যদিকে দেশের ১৫ কোটি মানুষের মধ্যে ৬৬ শতাংশ মানুষ নিরঙ্কুশ দরিদ্র্য। এদের সংখ্যা ৯ কোটি ৮৯ লাখ। ৩১ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ মধ্যবিত্ত। এদের সংখ্যা ৪ কোটি ৭০ লাখ। আর ২ দশমিক ৭ শতাংশ মানুষ ধনী। এদের সংখ্যা মাত্র ৪১ লাখ।

এসময় তিনি সর্বশেষ ২০১০ সাল পর্যন্ত ধনী-দরিদ্র শ্রেণির একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। পরিসংখ্যানে তিনি বলেন, দেশের মোট ১৫ কোটি মানুষের মধ্যে ৪১ লাখ ধনী, ৭০ লাখ উচ্চ মধ্যবিত্ত, ১ কোটি ৪৬ লাখ মধ্যম-মধ্যবিত্ত, ৪ কোটি ৭০ লাখ মধ্যবিত্ত, ২ কোটি ৫৪ লাখ নিম্ন মধ্যবিত্ত, ৯ কোটি ৮৯ লাখ নিরঙ্কুশ দরিদ্র এবং ৫ কোটি ৭৫ লাখ লোক চরম দরিদ্র। এই দারিদ্র্য সীমা থেকে রেহাই পেতে হলে সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী রাজনীতি কোন দূর্বল প্রতিপক্ষ নয়। তারা ইসলামের মূলমন্ত্র ত্যাগ করে ‘অর্থনৈতিক ক্ষমতাভিত্তিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে’ রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। তারা এজন্য ধর্মকে তাদের মূল হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, মাদরাসা শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই বেকার। দেশে প্রতি ৩ জন ছাত্রের মধ্যে একজন মাদরাসা ছাত্র রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৭৩ শতাংশ কওমী মাদরাসার ছাত্র রয়েছে। যেখানে প্রতিবছর ব্যয় হয প্রায় এক হাজার ৪’শ কোটি টাকা। কিন্তু তাদের প্রায় ৭৫ শতাংশই বেকার থাকেন। যা দেশের উন্নয়নের জন্য বড় বাঁধা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, দেশ ‘রেন্টসিকারদের’ কবলে পড়েছে। এ জন্য আমাদের হতাশ হওয়ার কারণ নেই। দেশকে ভালোবেসে সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে সব সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

ঢাকা স্কুল অব ইকনোমিকস’র পরিচালক ড. কাজী খলীকুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, অধ্যাপক ড. মো: মোয়াজ্জেম হোসেন খান প্রমুখ।

শেয়ার করুন