টেনশনে দুই দল

0
94
Print Friendly, PDF & Email

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তৃতীয় ধাপের মতো এবারও বিজয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে দলে বাড়তি টেনশন কাজ করছে। অন্যদিকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে বিগত তিন ধাপের চেয়ে এবার আরও বেশি শঙ্কায় বিএনপি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীসহ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলার চিত্র তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছে বিএনপি। এ ছাড়া প্রায় অর্ধশত উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থীর পাশাপাশি জামায়াতকে নিয়েও বাড়তি চিন্তায় দলটি। সব মিলিয়ে চতুর্থ ধাপে উৎসবের নির্বাচন নিয়ে জনমনে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।  তিন দফা উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি ১২৩, আওয়ামী লীগ ১১৭, জামায়াত ২৮ এবং স্বতন্ত্রসহ অন্যান্য দল সমর্থিত প্রার্থীরা ২৪টিতে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন।দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও উপজেলায় অংশ নিচ্ছেন সংসদের বাইরে থাকা প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা। তিন দফা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে ভোটকেন্দ্র দখল, জাল ভোটসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ এনেও আগামীকাল চতুর্থ ধাপে অংশ নিচ্ছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ছাড়াও পৃথকভাবে জাতীয় পার্টি, জামায়াতসহ প্রথম সারির সব রাজনৈতিক দলও নির্বাচনী মাঠে। ফলে এ নির্বাচনের নানা শঙ্কা সত্ত্বেও তৃণমূলে রাজনৈতিক দলগুলোর জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের মাপকাঠি নির্ধারণ সম্ভব বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির জন্য উপজেলা নির্বাচন একটি অগ্নিপরীক্ষা বলে মনে করছেন তারা।সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন নিয়ে টেনশনে থাকলেও চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে প্রধান দুই দল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দল সমর্থিত প্রার্থীকে জেতানোর সব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে দুই দলের কেন্দ্রীয় নেতারা নিরলসভাবে কাজ করে গেলেও প্রায় অর্ধশত উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী রয়ে গেছেন। তারপরও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।  আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আওয়ামী লীগ যখন ঐক্যবদ্ধ হয়, তখন কেউ হারাতে পারে না। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে আমাদের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ঐক্যের অভাব ছিল। এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সংগঠিত। তাছাড়া বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যাও কমে গেছে। যে কারণে চতুর্থ পর্বের নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ উপজেলায় দল সমর্থিত প্রার্থীরাই জয়ী হবে।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম জানান, ভোট হচ্ছে মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। সেই অধিকার রক্ষায় এখন বাংলাদেশের মানুষকে জীবন দিতে হচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও বাধার কারণে যশোরসহ সারা দেশে মানুষের সেই ভোটের অধিকার বিনষ্ট হচ্ছে। আমাদের ভোট ও গণতন্ত্রের অধিকার আদায়ে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তিনি আশা করেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে চতুর্থ ধাপের উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা অধিকাংশ উপজেলায় বিজয়ী হবেন। গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের স্বার্থে নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের জনগণকে ভোটকেন্দ্র পাহারা দেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি।জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ : উপজেলা নির্বাচনের চতুর্থ পর্বে জয়ের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বিএনপিকে পেছনে ফেলতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দল সমর্থিত প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত করতে কেন্দ্র থেকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দলীয় এমপি, কেন্দ্রীয় ও দলের সহযোগী সংগঠনের নেতাদের। চতুর্থ পর্বের নির্বাচন সামনে রেখে তারাও নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যেসব উপজেলায় দুর্বলতা ছিল তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে অধিকাংশ উপজেলাতেই। নিশ্চিত করা হয়েছে একক প্রার্থী। মিটিয়ে ফেলা হয়েছে দলীয় কোন্দল। তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের একত্রে মাঠে নামাতেও সক্ষম হয়েছে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃত্ব। যে কারণে চতুর্থ পর্বের নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ উপজেলায় দল সমর্থিত প্রার্থীরাই জয়ী হবেন বলে আশাবাদী দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা।   দলীয় সূত্রমতে, ফলাফল যাই হোক তা মেনে নিতে এবং সহিংসতা, কেন্দ্র দখল, হানাহানি, মারামারির মতো ঘটনা এড়িয়ে আগামী পর্বে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন করতে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা এ বিষয়ে উপজেলা নেতাদের কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন। এ ছাড়া সারা দেশে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এবং সহযোগী সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নিজ নিজ এলাকার অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে দল সমর্থিত প্রার্থীদের জয়লাভ করাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।জানা গেছে, গত দুই দফার নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে ভুলত্র“টি সংশোধন করে তৃতীয় পর্বে ভালো ফলাফল করেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। চতুর্থ পর্বে দলের পক্ষে আরও ভালোভাবে কাজ করার ব্যবস্থা হয়েছে। তৃণমূল নেতা-কর্মীর মতামতের ভিত্তিতেই প্রার্থী নির্ধারণ করা হয়েছে। বসিয়ে দেওয়া হয়েছে স্থানীয় এমপিদের নিজস্ব বলয়ের প্রার্থীদের। এ ছাড়া দলের কেন্দ্রীয় নেতারা গিয়ে উপজেলার সব পর্যায়ের নেতাদের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে মাঠে নামাতে সক্ষমও হয়েছেন। তাছাড়া আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের উন্নয়ন ও বিগত সময়ের বিএনপি-জামায়াতের লুটপাট, দুর্নীতির চিত্র এবং বিগত নির্বাচনের আগে মানুষ হত্যার নির্মম চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।   আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, বিগত নির্বাচনগুলোতে দলীয় কোন্দল, একাধিক প্রার্থী থাকায় ভালো ফল করতে পারেনি। এবার ভুলত্র“টি থেকে শিক্ষা নিয়ে কাজ করা হয়েছে। অধিকাংশ উপজেলায়ই বিদ্রোহী প্রার্থী বসিয়ে একক প্রার্থী নিশ্চিত করা হয়েছে। আশা করছি, তৃতীয় পর্বের মতো চতুর্থ পর্বেরও ফলাফলে আমাদের দল সমর্থিত প্রার্থীরাই এগিয়ে থাকবেন।শঙ্কা সত্ত্বেও বিজয়ের বাইরে ভাবছে না বিএনপি : চতুর্থ দফা নির্বাচনে নানা শঙ্কা সত্ত্বেও অধিকাংশ উপজেলায় বিজয়ের বাইরে ভাবছে না বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা একক প্রার্থী দিতে শেষ চেষ্টা চালিয়েছেন। যেসব এলাকায় একক প্রার্থী নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে সেখানে দল সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য ১৯ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে কেন্দ্র থেকে চিঠি পাঠানো হয়। একাধিক প্রার্থীর উপজেলায় দল সমর্থিত একজনকে চিঠি পাঠানো হয়। বাকিদের বহিষ্কারসহ নানা ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। তারপরও গতকাল পর্যন্ত চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে ১৩৮ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।বিএনপির দফতর সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেন, তৃতীয় দফা নির্বাচনে সহিংসতায় উৎসাহী হয়ে চতুর্থ দফা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা শক্তির মহড়া দিচ্ছে। এতে ভোটাররা  ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন নির্বাহী বিভাগের হুকুমের  একান্ত ভৃত্যে পরিণত হয়েছে। দলের নেতা-কর্মীদের ভোট কেন্দ্র পাহারা দিয়ে বিএনপির প্রার্থীদের বিজয়ী করে আনার আহ্বান জানান তিনি।সূত্রে জানা গেছে, হামলা-মামলা, গুম-খুনে বিপর্যন্ত দলকে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় নিয়ে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে চায় দলটি। তবে চতুর্থ ধাপে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটগ্রহণ নিয়ে চরম আশঙ্কায় বিএনপি। দলের তৃণমূল পর্যায় থেকে প্রতিদিন কেন্দ্রে র‌্যাব, পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসনসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণায় নানাভাবে বাধার অভিযোগ আসছে। বিভিন্ন এলাকায় নেতাদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, ভয়ভীতি দেখানোসহ নানা হুমকির খবর পাওয়া গেছে। গ্রেফতার করা হচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থীসহ স্থানীয় নেতা-কর্মীদের।বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যুগ্ম মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, রুহুল কবির রিজভী এবং প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক কাজী আসাদুজ্জামান আসাদ উপজেলা নির্বাচনের সার্বিক বিষয় মনিটর করছেন। গতকাল পর্যন্ত একক প্রার্থী দেওয়ার জন্য শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তারপরও শেষ দিন দুজনকে বহিষ্কার করা হয়। এর মধ্যে একজন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য।দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও স্বার্থবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত থাকার অভিযোগ এনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল কাহের শামীম ও টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. শুকুর মাহমুদকে বহিষ্কার করা হয়। গতকাল দলের দফতর সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

শেয়ার করুন