দেশব্যাপী আবারো শুরু হয়েছে ব্যাপক গ্রেফতার অভিযান। টার্গেট হচ্ছে বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী। চতুর্থ দফার উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে এই অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। কোনো কোনো এলাকায় বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা পুলিশের অত্যাচার ও গ্রেফতারের ভয়ে বাড়িতে ঘুমাতে পারছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনেকে ভয়ে নিজ এলাকা ছেড়ে রাজধানীসহ অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।
উপজেলা নির্বাচন ঘিরে দেশব্যাপী চলছে ব্যাপক সহিংস ঘটনা। প্রথম দফা নির্বাচনের চেয়ে দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে সহিংস ঘটনা বেড়েছে। আবার দ্বিতীয় দফার চেয়ে তৃতীয় দফায় সহিংসতা আরো বেড়েছে। দ্বিতীয় দফায় নিহত হয়েছে একজন। তৃতীয় দফার নির্বাচনে নিহত হয়েছে তিনজন। আহত হয়েছে অসংখ্য মানুষ। এই নির্বাচনের পরেও দেশব্যাপী সহিংস ঘটনা ঘটে। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে আগামী ২৩ মার্চ দেশের ৯২ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এই নির্বাচনের আগেই শুরু হয়েছে সহিংসতা। ইতোমধ্যে ঝালকাঠি, পিরোজপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় সহিংস ঘটনা ঘটেছে। প্রতিপক্ষের নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুরসহ প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের আহত করা হয়েছে। এখনো তা অব্যাহত রয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। কোনো কোনো এলাকায় পুলিশ-র্যাবের পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্সের সদস্যদের উপস্থিতিতেও সহিংস ঘটনা ঘটছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
এ দিকে পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে এই নির্বাচন ঘিরে চরম পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে সরকারপন্থীরা বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সামনেই ভাঙচুর ও হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে। আবার কোনো কোনো এলাকায় ভাঙচুর ও হামলার সময় পুলিশকে জানানোর পরেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ঝালকাঠির পুলিশ সুপার মজিদ আলী নয়া দিগন্তকে বলেন, যেখানে খবর পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই পুলিশ ও বিজিবি যাচ্ছে। তবে স্থানীয় সূত্র জানায়, পুলিশের চোখের সামনে ঘটনা ঘটলেও পুলিশ কিছু বলছে না। গত বুধবার রাতে বিভিন্ন এলাকায় প্রতিপক্ষের নির্বাচনী কেন্দ্র ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের সময় পুলিশকে খবর দেয়া হয়েছে। এমনকি বিষয়টি পুলিশ সুপারকেও অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশ সুপার কোনই ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
পুলিশ প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের গ্রেফতার ও হয়রানি করছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশের হয়রানি ও গ্রেফতার এড়াতে অনেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানিরও অভিযোগ মিলেছে। বিশেষ করে বিরোধী দল সমর্থক প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের বেলাতেই এমন ঘটছে বলে অভিযোগ মিলেছে। কোনো কোনো এলাকায় নিজেরাই নিজেদের অফিস ভাঙচুর করে প্রতিপক্ষকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ দিকে এসব বিষয় নিয়ে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এভাবে সহিংস ঘটনা, মামলা, হয়রানি ও গ্রেফতারের ঘটনা ঘটলেও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট এলাকার কর্মকর্তাদের তাৎক্ষণিক সব কিছু জানানো হলেও তাদের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এ নিয়ে কোনো কোনো নির্বাচনী এলাকায় ক্ষোভ রয়েছে। এ দিকে গ্রেফতারের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন কার্যালয় থেকে দাবি করা হচ্ছে এসব গ্রেফতার নির্বাচন সংশ্লিষ্ট নয়। আগের কোনো ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় এই গ্রেফতারের ঘটনা ঘটছে।
নির্বাচনের বাইরেও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের আবারো ব্যাপক হারে গ্রেফতার শুরু হয়েছে সারা দেশে। খন্দকার মোশাররফ ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতাই ইতোমধ্যে আবারো গ্রেফতার হয়েছেন। যাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদের অনেককে জিজ্ঞাসাবাদের নামে রিমান্ডেও নেয়া হচ্ছে। বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের জন্য প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও অভিযান চলছে। যেসব এলাকায় নির্বাচন চলছে এবং যেখানে সরকারবিরোধীরা শক্তিশালী সেখানেই বেশি বেশি অভিযান চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।