ছোট দুটি শিশু – তাদের বাবা তোফাইল আহমদ – দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি। কারাগারে থেকেই তিনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন। আর কারাবন্দি বাবার জন্য ভোট চাইতে মাঠে নেমেছে তারই দুই শিশু সন্তান তাসফি (৮) ও তাসিন (৩)।
এই শিশুর প্রচারণায় যখন এলাকাজুড়ে নির্বাচনী জোয়ার লেগেছে তখনই বাধা হয়ে এসেছে নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার একটি ‘নোটিশ’।
ওই দুই শিশুকে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে বিরত রাখার আদেশ দিয়ে পার্বত্য বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহমদ জামিল চেয়ারম্যান প্রার্থী তোফাইল আহমদের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট রফিক আহমদের কাছে ওই নোটিশ পাঠিয়েছে।
রফিক আহমদ জানিয়েছেন, বাবার হয়ে ছেলেমেয়েরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে নির্বাচনী আচরণবিধিতে কোথাও বিধিনিষেধ নেই। তারপরও তাদের ‘গণতান্ত্রিক অধিকার’ হরণ করে ছোট্ট দুই শিশুকে তাদের বাবার হয়ে প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়াতে বলা হয়েছে।
তিনি জানান, তিনদিন ধরে কারাবন্দি চেয়ারম্যান প্রার্থী ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান তোফাইল আহমদের দুই ছেলেমেয়ে সালসাবিল আহমদ তাসফি ও তাসিনকে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে দূরে রাখতে বাধ্য হয়েছেন তাদের মা মনোয়ারা বেগম জেসমিন।
দীর্ঘ ১৮ মাস ধরে বাবার স্নেহ ও ভালোবাসা বঞ্চিত দুই শিশু তাদের বাবার জন্য ভোট চাইতে মাঠে ঘাটে গ্রামে গ্রামে ঘুরছিল। ওই শিশুদের বিশ্বাস, ভোটে জিতলে তাদের বাবা মুক্তি পেতে পারেন।
উল্লেখ্য ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতের রামু বৌদ্ধ বিহার সহিংসতায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান তোফাইল আহমদ জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে শুরু হয় পুলিশ ও প্রশাসনিক হয়রানি। পুলিশি হয়রানি থেকে রেহাই পেতে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পর তোফাইল আহমদ উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়ে এলাকায় এলেও গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে কক্সবাজার জেলা কারাগারে নিয়ে যায়।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুরুল আলম কোম্পানি ও উপজেলা জামায়াতে ইসলামির আমির রফিক আহমদ জানান, রামুর বৌদ্ধবিহার সহিংসতার ঘটনায় ‘জনপ্রিয়’ উপজেলা চেয়ারম্যান তোফাইল আহমদকে গ্রেফতার করা হলেও পরে তাকে ৮টি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এই মামলাগুলোর মধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ি থানার দুটি মামলা, একটি হত্যা মামলা, কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁওতে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তির দাবিতে হওয়া মিছিলে ভাংচুরের অভিযোগে করা ৩টি মামলা রয়েছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আহমদ জামিলের ওই নোটিশে বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন সূত্রে জনাব তোফাইল আহমদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় তার শিশু সন্তানকে ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতীয়মান হয় যে, নির্বাচনী প্রচারণায় কারাবন্দি প্রার্থীর পক্ষে তার শিশু সন্তানকে ব্যবহার ভোটারদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে অন্যায়ভাবে প্রভাবিত করতে পারে।’
ওই নোটিশের ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহমদ জামিল বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধিতে প্রচারণায় শিশু ব্যবহারে সুনির্দিষ্ট কোন বিধিনিষেধ নেই। কিন্তু কোন প্রার্থীর ছোট ছেলেমেয়ে যদি লিফলেট হাতে ভোটের জন্য ভোটারের কাছে যায় তাহলে ভোটার ওই শিশুর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যদিও ভোটার ভোট দেবেন প্রার্থীর যোগ্যতা দেখে, শিশুর আকুতিতে নয়!’
কারাবন্দি চেয়ারম্যান প্রার্থী তোফাইল আহমদের নির্বাচনী এজেন্ট ও উপজেলা জামায়াতের আমির রফিক আহমদ জানান, প্রতিপক্ষ সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থী শফি উল্যাহর লোকজন লিখিতভাবে ওই দুই শিশুকে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে সরিয়ে নেয়ার জন্য সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছেন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতেই সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আহমদ জামিল ওই ‘নোটিশ’ দিয়েছেন। – আমার দেশ