আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া আওয়ামী লীগ চতুর্থ ধাপের উপজেলা নির্বাচনে আরও ভালো ফলাফল করতে চায়। জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে দলের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাওয়ার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে ফলাফল ভালো করায় দলের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে বিদ্রোহী প্রার্থী আরও কমিয়ে আনা হয়েছে। আওয়ামী লীগের উপজেলা নির্বাচন পরিচালনা কমিটি মনে করে, প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় হোঁচট খাওয়ার মূল কারণ তৃণমূলে অন্তকলহ এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারা। এতে করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে অনেকটা অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল। এসব বিষয়কে সামনে রেখে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ঘুরে দাঁড়ানোর যে পরিকল্পনা এঁটেছিল আওয়ামী লীগ; তারই সুফল পেয়েছে তৃতীয় দফার উপজেলা নির্বাচনে।
এ ব্যাপারে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি জানায়, দলের তৃণমূলে অভ্যন্তরীণ-দ্বন্দ্ব মিটমাট করে একক প্রার্থী নির্বাচন করায় তৃণমূলের কর্মী-নেতাদের মনোবল আগের তুলনায় এখন আরও চাঙ্গা। তাই আগামী ২৩ মার্চ চতুর্থ ধাপের ৯২টি উপজেলায় অধিক সংখ্যক প্রাথীর্র জয়ের আশা নিয়ে ব্যাপক সাংগঠনিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই নানারকম কর্মসূচি ও সাংগঠনিক থেরাপির মাধ্যমে বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দলের হাইকমান্ড থেকে একক প্রার্থীর পক্ষে আরও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। ফলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মাঝে বইছে উৎসবের আমেজ।
এদিকে তৃতীয় ধাপে ৮১টি উপজেলা নির্বাচনের মধ্যে ৮০টি উপজেলার ফলাফলে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৪১ জন জয় পাওয়া নিয়ে দলের এক বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, তৃতীয় ধাপে উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বসাতে পেরেছি বলেই ফলাফল ভালো হয়েছে। আগামী দুই ধাপের নির্বাচনেও আমরা এভাবে এগিয়ে গেলে জয়ী হব। এ বিশ্বাস আমাদের আছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা কমেনি।
একইভাবে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতারা মনে করেন, চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে ফলাফল তৃতীয় ধাপের চেয়ে কয়েক গুণ বাড়বে। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরাজয়ের পরে আওয়ামী লীগ নেতারা প্রকাশ্যে পরাজয়ের প্রধান হিসেবে বিদ্রোহী প্রার্থী ও সাংগঠনিক দুর্বলতাকেই দায়ী করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক শীর্ষ পর্যায়ে নেতা জানান, প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের ফলাফল বিপর্যের পর বিদ্রোহী প্রার্থীদের সাথে আলোচনা করার জন্য দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের একাধিক সিনিয়র নেতাকে দায়িত্ব দেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বিদ্রোহী প্রার্থীদের সাথে আলোচনা করেন এবং একক প্রার্থীর পক্ষে সকলকে কাজ করার জন্য নেত্রীর দিক-নির্দেশনার কথা জানান। এতে তৃণমূলের দ্বন্দ্ব মিটিয়ে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে কড়া নির্দেশ যায় কেন্দ্র থেকে। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে এবার অবস্থানও আগের চেয়ে কঠোর আছে। বিদ্রোহীদের কারণে সুবিধাজনক অবস্থায় পৌঁছতে পারেনি প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে। ফলে শেষমেষ আটঘাট বেঁধেই বিদ্রোহী প্রার্থীদের বসানোর কার্যক্রম হাতে নেয় দলটি। এক্ষেত্রে তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে, তাদের সরাসরি ভোটে প্রার্থী নির্বাচন করে প্রার্থী ঠিক করা হয়।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় আওয়ামী লীগ অনেকটা উদাসীনই ছিল। তৃণমূলেও ছিল বিরোধ। তাই আগের দু’ধাপের নির্বাচনে ভালো ফলাফল করতে পারেনি দলটি। কিছু সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ায় তৃতীয় ধাপে মোটামুটি ভালো ফলাফল পাওয়া গেছে। আগামীতে আরও ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া এই দুই ধাপে অনেক উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় আমাদের ভোট ভাগ হয়েছে। তৃতীয় ধাপে আমরা এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলাম, যার ফলও পেয়েছি। আগামী চতুর্থ ধাপের উপজেলা নির্বাচনগুলোতেও আওয়ামী লীগের জয়ের ধারা অব্যাহত থাকবে বলেও আশা প্রকাশ করেন সাংগঠনিক সম্পাদকবৃন্দ।
জানা গেছে, এর আগে অনুষ্ঠিত দু’ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে অনেকটা অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছিল। এ দুই দফার নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের চেয়ে অনেক পিছিয়ে পড়ায় দলটি এই অস্বস্তি বোধ করে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের ঠেকাতে না পারায় প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে ভালো করতে পারেনি। জানা গেছে-বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনের পাশাপাশি দলীয় সমর্থনের নামে যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করে প্রভাবশালী নেতা, মন্ত্রী-এমপিরা যাতে পকেট প্রার্থী না দেন সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। দলের জনপ্রিয় ব্যক্তিকে একক প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দেয়। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত সাত বিভাগের সাতটি টিমে দলের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করারও সিদ্ধান্ত হয়।
এদিকে উপজেলা নির্বাচনে সহিংসতার বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার মো: নাসিম ইনকিলাবকে বলেন, প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে সহিংসতা হবেই। ডিজিটাল ও মিডিয়ার যুগে কারচুপির সুযোগ নেই। হারলে কারচুপি বলবেন এটা হতে পারে না। যারা সহিংসতা করছে তাদের বিরুদ্ধে ববস্থা নেয়া হচ্ছে। সহিংসতা যেখানে হচ্ছে নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি বিশ্বাস করে না। তারা মাথা ঠা-া করে উপজেলা নির্বাচনে আসায় তাদের অভিনন্দন জানান ১৪ দলের এ মুখপাত্র।
উল্লেখ্য, এর আগে প্রথম দফায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ৯৮ উপজেলা ও ২৭ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দফায় ১১৫ উপজেলায় নির্বাচন হয়। এতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। পিছিয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ। দ্বিতীয় ধাপের ১১৫ উপজেলাও আওয়ামী লীগের অর্ধশত ছিল বিদ্রোহী প্রার্থী। তৃতীয় ধাপে বিদ্রোহী প্রার্থী কম থাকায় দলটি ঘুরে দাঁড়ায়।