আইনের দুর্বলতা ও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের উদাসিনতার কারণে ওয়াক্ফ এস্টেটের সম্পত্তি বেহাত হয়ে যাচ্ছে। এতে করে যেসব মহৎপ্রাণ ব্যক্তি জনকল্যাণে তাদের সম্পত্তি ওয়াক্ফ করে গেছেন তা এখন লুটপাটের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। তবে ধর্মমন্ত্রী ওয়াক্ফর সম্পত্তি বেহাত হয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেছেন, বেহাত হওয়া সম্পত্তি উদ্ধারে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিব বলেন, মৃত্যুর পর আমলনামা টিকিয়ে রাখতে সম্পত্তি ওয়াক্ফ করা হয়। এসব সম্পত্তি কোনভাবেই বেহাত হওয়া চলবে না ।
ইসলামের সুবিবেচনা এবং ত্যাগের আদর্শ থেকে সম্পত্তি ওয়াক্ফ দু’ধরনের হয়ে থাকে। বংশধরদের জন্য ওয়াক্ফ-এ আওলাদ এবং সমাজ ও মানব কল্যাণে ওয়াক্ফ-এ সাবিলিল্লাহ। বায়তুল মোকাররম মসজিদের খতিব বলেন, মৃত্যুর পর আমলনামা বন্ধ হয়ে যায়। শুধু রেখে যাওয়া বই, সুসšত্মান এবং সদগায়ে জারিয়া হিসেবে জনহিতকর কাজ এই তিনটিতে মৃতরা সওয়াব পেতে থাকেন। যারা ওয়াক্ফ’র সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল বা লুটপাট করছে তারা দোযখের আগুনে পুড়বে।
তিনি বলেন, জনহিতকর কাজে মানুষ যে দান করে যায়, ওয়াক্ফ করে যায় সেই প্রতিষ্ঠান, সেই ওয়াক্ফ যতদিন থাকবে ততদিন ঐ মৃত ব্যক্তির উপর তার সওয়াব পৌছতে থাকবে। আল্লাহর জন্য ওয়াক্ফ করার যে আমানত তার যাতে খেয়ানত না হয়, যত্রতত্র এটা যাতে নষ্ট না হয়, ব্যয় না হয়।
১৯৬২ সালে ওয়াক্ফ অধ্যাদেশে প্রশাসকের অনুমোদনে সম্পত্তি হ¯ত্মাšত্মরের বিধান এবং ২০১৩ সালে বিক্রি, ইজারা এবং অংশিদরিত্বের ভিত্তিতে উন্নয়নের বিধান করা হয়। তবে ২০১৩ সালের আইনে বিশেষ প্রয়োজনে বিক্রি বা ইজারা নিষেধ করা আছে। ওয়াক্ফ প্রশাসনের বিশেষ কমিটির সুপারিশ এবং সরকারের অনুমোদন ছাড়া সম্পত্তি বিক্রির উপরও আছে নিষেধাজ্ঞা। ওয়াক্ফ প্রশাসন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধিন।
ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ওয়াক্ফ সম্পত্তি বেহাতের কথা স্বীকার করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান। তিনি বলেন, বেহাত হওয়া ওয়াক্ফ সম্পত্তি কি অবস্থায় আছে তা যাচাই বাছাই করে এগুলো পুনরুদ্ধারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ওয়াক্ফ প্রশাসকের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর প্রতিনিধি, ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন মনোনিত মুফতি ও মতোয়াল্লিদের সমন্বয়ে বিশেষ কমিটিগুলো ওয়াক্ফ সম্পত্তি বিক্রি বা ইজারা দিয়ে আসছে।
উচ্চ আদালতের একটি আদেশে ওয়াক্ফ প্রশাসককে দেওয়ানী আদালত এবং হাইকোর্টের অধিন¯ত্ম একটি আদালতের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। সুপ্রিমকোর্টের পক্ষ থেকে যাদেরকে এতো মর্যদা ও ক্ষমতা দেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে যারা দশকের পর দশক ধরে বিভিন্ন ওয়াক্ফ সম্পত্তি বেহাতে জড়িত রয়েছেন, বঞ্চিত করেছেন ওয়াক্ফকারীদের বংশধর ও সমাজের মানুষদের তাদেরকে অবশ্যই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে।