আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর ভরসা কমিয়ে এবার দলীয় কর্মীদের ওপর নির্ভরতা বাড়াতে চায় আওয়ামী লীগ। সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে দলটি। দলকে কর্মী নির্ভর করতে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন শাখা-সংগঠনকে শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠে কাজ করছে দলটি। এক্ষেত্রে সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ঢাকা মহানগর কমিটি। আর ক্ষমতাসীন এ দলটির ঢাকা মহানগর কমিটিকে ঢেলে সাজাতে দলের সিনিয়র নেতারা পর্যালোচনা করছেন। তবে খুব তাড়াতাড়ি ঢাকা মহানগর কমিটি গঠন করা সম্ভব নাও হতে পারে বলে জানিয়েছেন নগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।
জানা গেছে, ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা দলীয় কার্যক্রমে সময় দেয়ার চেয়ে ক্ষমতা ব্যবহারে বেশি মনোযোগী হন। বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবেলায় কিছু ত্যাগী নেতাকর্মী সব সময় মাঠে সক্রিয় থাকলেও এদের সংখ্যা ছিল খুবই কম। বেশির ভাগ নেতাকর্মীই ব্যস্ত ছিলেন লবিং-তদবিরে। সে কারণে বিরোধী দলের আন্দোলন-সংগ্রাম রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলার চেয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর বেশি নির্ভর করতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। কিন্তু ক্ষমতাসীন এ দলটি এখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর ভরসা কমিয়ে দলের কর্মীদের মাঠে সক্রিয় রাখতে চায়।
এ জন্য মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্বের চিন্তা করছে আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা। আর এরই অংশ হিসেবে কেন্দ্রিয় নেতারা ঢাকা মহানগর কমিটির আওতায় থাকা ওয়ার্ড ও ইউনিয়নগুলোর কাউন্সিল অনুষ্ঠান করছে। ইতোমধ্যে এ কাজে অনেক দূর এগিয়েছে দলটি।
চলতি মার্চ মাসের মাঝামাঝিতে ঢাকা মহানগর কমিটি গঠনের চিন্তা থাকলেও শেষ পর্যন্ত দলটির পক্ষে তা সম্ভব হয়ে উঠছে না। কারণ, কেন্দ্রীয় সংগঠনের বিভিন্ন ব্যস্ততায় এখনও মহানগর আওয়ামী লীগের সবগুলো ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও থানা সংগঠনের কাউন্সিল এখনও শেষ করা সম্ভব হয়নি।
মহানগর আওয়ামী লীগের দফতর সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ১০২ সাংগঠনিক ওয়ার্ডের মধ্যে কাউন্সিল হয়েছে ৪৪টির। আর ১৮টি ইউনিয়নের ১২টির কাউন্সিল ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বাকি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কাউন্সিল শেষ হতে এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যেতে পারে।
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ শীর্ষ নিউজকে জানান, আগামী দিনে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে ঢাকা মহানগর কমিটিকে শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম। সে লক্ষ্যে মাঠে কাজও চলছে। খুব কাছাকাছি সময়ের মধ্যে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করা সম্ভব নাও হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। তবে চলতি বছরের জুনের মধ্যেই মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন সম্পন্ন হতে পারে বলে জানিয়েছেন এম এ আজিজ। সাংগঠনিক ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও থানা কমিটি গঠনের পর দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তের আলোকেই এসব শাখার কমিটি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, আসলে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর কমিটি কবে গঠন করা হবে এটি দলের হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নেবে। আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে যেকোনো সময় কমিটি গঠন করা সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি। দলকে আরো শক্তিশালী করতে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করার প্রয়োজনীয়তার কথাও জানান তিনি।
তবে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী সেলিম শীর্ষ নিউজকে জানিয়েছেন, মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন করতে আর কতদিন লাগতে পারে এ ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। তার নির্বাচনী এলাকার আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কাউন্সিল আগামী ২২ মার্চ হওয়ার কথা রয়েছে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কমিটি গঠিত হয় ২০০৩ সালের ১৮ জুন। ৯ বছর পর ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর সম্মেলন হয়েছিল ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের। এর দুই মাসের মধ্যে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর এলাকার সকল সাংগঠনিক ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও থানা কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও বিভিন্ন কারণে এখনও তা সম্ভব হয়নি।