মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অচিরেই বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন আরো ৮ রাজাকার। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রায় শেষের পথে। তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা নতুন এই ৮ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আগামী এপ্রিল ও মে মাসের মধ্যেই জমা দেবেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া ইতিমধ্যেই চিফ প্রসিকিউটর এই ৮ ব্যক্তির মামলা পরিচালনার জন্য প্রসিকিউটর নির্দিষ্ট করে সংশ্লিষ্টদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন বলে সুত্র নিশ্চিত করেছে।
তদন্ত সংস্থার সূত্র মতে, ট্রাইব্যুনালে নতুন যে ৮ রাজাকার বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন তারা হলেন, কিশোরগঞ্জের সৈয়দ মো. হোসেন ওরফে হাছেন আলী। তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৬ জুন থেকে তদন্ত করছেন হরি দেবনাথ এবং আদালতে মামলা পরিচালনা করবেন প্রসিকিউটর আবুল কালাম আযাদ।
তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছেন রাজশাহীর রাজাকার লাহার আলী শাহ। তার বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ১ অক্টোবর থেকে তদন্ত করছেন মো. আতাউর রহমান। এই মামলা পরিচালনা করবেন প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম। তৃতীয় জন হচ্ছেন, পিরোজপুরের ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার। তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ১৯ মে থেকে তদন্ত করছেন মো. হেলাল উদ্দিন। মামলা পরিচালনা করবেন প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম।
যশোরের জাতীয় পার্টির নেতা মাওলানা সাখাওয়াত হোসেনের অবস্থান তালিকার চার নম্বরে। তার বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ১ এপ্রিল থেকে তদন্ত করছেন মো. আব্দুর রাজ্জাক এবং মামলা পরিচালনা করবেন প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা বেগম। নেত্রকোনার রাজাকার আতাউর ননীর বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৬ জুন থেকে তদন্ত করছেন মো. শাহজাহান কবির এবং মামলা পরিচালনা করবেন প্রসিকিউটর সাবিনা ইয়াসমিন খান।
জামালপুরের আশরাফ হোসেনের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৬ জুন থেকে তদন্ত করছেন মতিউর রহমান এবং মামলা পরিচালনা করবেন প্রসিকিউটর তাপস কান্তি বল। বাগেরহাটের শেখ সিরাজুল ইসলাম ওরফে সিরাজ মাস্টারের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ২১ মে থেকে তদন্ত করছেন মো. হেলাল উদ্দিন এবং মামলা পরিচালনা করবেন প্রসিকিউটর সৈয়দ সায়েদুল হক।
আর অষ্টম রাজাকার হলেন, কিশোরগঞ্জের মো: নাসির। তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৬ জুন থেকে তদন্ত করছেন মো. আতাউর রহমান এবং মামলা পরিচালনা করবেন প্রসিকিউটর শেখ মোশফেক কবির।
তদন্ত সংস্থার তথ্য মতে, তদন্তাধীন অপরাধীদের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তদন্ত করতে গিয়ে মামলার সংশ্লিষ্ট নথিপত্র জব্দ এবং সাক্ষীদের কাছ থেকে জবানবন্দি গ্রহণ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা সানাউল হক রাইজিংবিডিকে বলেন, মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে ৮ ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত এগিয়ে চলছে। এর মধ্যে নাসির ও সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রায় শেষ হওয়ার পথে। এপ্রিল মাসেই এ দুই জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে জমা দেয়া হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি বাকী ৬ জনের তদন্ত প্রতিবেদন মে মাসের মধ্যে দাখিল করা সম্ভব হবে।’
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সুত্র আরো জানায়, মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে সাক্ষীদের সাক্ষ্য নিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় যে সব এলাকায় বেশি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল সেই সব স্থানও পরিদর্শন করেছেন তারা।
রাজাকার কমান্ডার ও বর্তমান জাতীয় পার্টির নেতা মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন যশোরের কেশবপুরের চিংড়া, বগা, ভাণ্ডার খোলা ও গৌরীঘোনা এলাকায় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিলেন বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধকালীন কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে ২৯ জনকে হত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে মো. নাসিরের বিরুদ্ধে।
তদন্ত সংস্থা সূত্রে আরো জানা যায়, পিরোজপুরের জনগণের কাছে একাত্তরে এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম ছিল আবদুল জব্বার। তার নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের সময় পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়ায় ব্যাপক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। তদন্তাধীন ব্যক্তিদের মধ্যে নাসির ও জব্বার মানবতাবিরোধী অভিযোগের তদন্তের কথা জানতে পেরে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। পলাতক অবস্থায়ই তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।