হঠাৎ আসা ধূলি-ঝড় এলোমেলো করে দিল সবকিছু। দমকা হাওয়ার তোড়ে জায়ান্ট স্ক্রিন থেকে খসে পড়ল ব্যানার। কাল বিকেলে কালবৈশাখীর এমন আগমনী বার্তার পর আর কেউ মাঠে থাকেনি। নেট প্র্যাকটিস অসমাপ্ত রেখেই বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়েরা দৌড়ে উঠে যান ড্রেসিংরুমে। একটু পর শুরু হলো টিপটিপ বৃষ্টি। মাঠকর্মীরা দ্রুত ঢেকে ফেলেন উইকেট ও তার আশপাশের জায়গা। বৃষ্টি কিছুক্ষণ পর থেমে গেলেও মুশফিকুর রহিমরা আর অনুশীলনে নামেনি। তবে প্রকৃতির এই হঠাৎ বিরূপ আচরণ আজকের বাংলাদেশ-হংকং ম্যাচে কোনো ছায়া ফেলবে না বলেই পূর্বাভাস স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের। আবহাওয়া বার্তায় ঝড়-বৃষ্টিরও কোনো আশঙ্কা নেই। ঝড় যদি ওঠেও, সেটা উঠতে পারে কারও ব্যাট থেকে। বিদ্যুৎ চমকালেও সেটা হয়তো চমকাবে কারও বোলিংয়েই। দুই দলের জন্যই ম্যাচটা আনুষ্ঠানিকতা রক্ষার। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে ‘সুপার টেন’-এ এক পা দিয়ে রাখা বাংলাদেশ দল পাখির চোখ করেছে আরেকটি বড় জয়কে। অন্যদিকে প্রথম দুই ম্যাচেই হেরে যাওয়া হংকং গড়তে চায় ইতিহাস। দলটার অধিনায়ক জেমি অ্যাটকিনসন পরশু আফগানিস্তান ম্যাচের পর অবলীলায় বলে ফেললেন, ইতিহাসটা গড়তে চান টেস্ট খেলুড়ে বাংলাদেশ দলকে হারিয়েই। শুনে স্বপ্নবিলাস মনে হতে পারে। তবে ক্রিকেটে যে এ রকম হয় না, তা তো নয়! বড় দলগুলো মাঝে মধ্যে ছোট দলের সামনে হোঁচট খাবে, প্রত্যাশিত জয়ের আনন্দ ধরা দেবে পরাজয়ের গ্লানি হয়ে—তবেই না অনিশ্চয়তার ক্রিকেট সার্থক! এ কারণেই তুলনায় অনেক শক্তিশালী আফগানিস্তান ও নেপালকে উড়িয়ে দেওয়ার পরও হংকং ম্যাচের আগে বাংলাদেশ দলের অস্ট্রেলিয়ান কোচ শেন জার্গেনসেন মনে করিয়ে দিলেন, ‘টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যেকোনো কিছুই হতে পারে।’ মজার ব্যাপার হলো, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের এই অননুমেয় চরিত্রটাই দ্বিতীয় পর্বে কথা বলবে বাংলাদেশের হয়ে। প্রথম পর্বে আফগানিস্তান, নেপাল আর হংকংয়ের কাছে বাংলাদেশ যেমন ‘বড় ভাই’ হয়ে থাকল, দ্বিতীয় পর্বের আসল বিশ্বকাপে সেই বাংলাদেশই আবার ‘ছোট ভাই’। কাজেই ক্রিকেটের অনিশ্চয়তার সুযোগ বাংলাদেশই বা নেবে না কেন! জার্গেনসেন সে কারণেই বললেন, ‘এটা আমাদের জন্য দারুণ একটা সুযোগ। ছয়-সাত মাস আগেও বাছাইপর্ব খেলতে হবে বলে আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম। তখনই আমার মনে হয়েছিল, আমরা যদি আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলে এই পর্বটা পার হতে পারি, তাহলে পরের চারটা ম্যাচের চাপ সামলে নিতে পারব।’ তবে দ্বিতীয় রাউন্ডে বাংলাদেশ দল যাচ্ছে একটা সংশয় নিয়ে। আফগানিস্তান ম্যাচে পাওয়া চোট নিয়ে নেপালের বিপক্ষে খেলে ফেললেও হংকংয়ের বিপক্ষে আর মাঠে নামা হচ্ছে না পেসার মাশরাফি বিন মুর্তজার। আজ সকালেই ঢাকার বিমান ধরবেন তিনি। চট্টগ্রামে করানো সিটি স্ক্যানে বড় কোনো সমস্যা ধরা পড়েনি ঠিকই, তবে চোটের জায়গায় ব্যথা নাকি দ্বিগুণ বেড়েছে। ঢাকায় গিয়ে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পরই নিশ্চিত হওয়া যাবে, আসল বিশ্বকাপে মাশরাফিকে পাবে কি না বাংলাদেশ। মাশরাফির কণ্ঠ অবশ্য কালও আশাবাদী শোনাল, ‘ব্যথা অনেক বেড়েছে। তবে যেহেতু কোনো ফ্র্যাকচার ধরা পড়েনি, আশা করি গুরুতর কিছু না। ঢাকায় গিয়ে দেখি কী অবস্থা।’ মাশরাফি খেলবেন না বলে একটা পরিবর্তন তো অবধারিতই। দলে ঢুকতে পারেন পেসার রুবেল হোসেন। আর কোনো পরিবর্তনের কথা শোনা যায়নি কাল রাত পর্যন্তও। নতুন করে কিছু না ঘটলে বাকি দলটা আগের ম্যাচের মতোই থাকার কথা। আফগানিস্তান সম্পর্কে কিছুটা ধারণা ছিল। কিন্তু নেপালের মতো হংকংও বাংলাদেশ দলের কাছে পুরোই অচেনা। কিছু ভিডিও ফুটেজ আর অন্য দলের বিপক্ষে তাদের খেলা দেখে যতটুকু ধারণা পাওয়া গেছে, সেটাই সম্বল। সেই ধারণা থেকে বাংলাদেশ দলের ওপেনার এনামুল হকের মূল্যায়ন, ‘ওরা চার-পাঁচটা পেস বোলার খেলায়। এটাই ওদের শক্তি।’ তবে আইসিসির সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে খেলে এনামুলের কাছে একটা বিষয় পরিষ্কার, ‘অভিজ্ঞতার ঘাটতিটাই সবচেয়ে বড়।’ বাংলাদেশ সে জায়গায় এগিয়ে আছে লক্ষ-কোটি মাইল। শেষ ম্যাচে সেটির প্রতিফলনটা স্কোরবোর্ডে ফেলেই ‘আসল বিশ্বকাপে’ পা রাখতে চায় বাংলাদেশ।