কি হবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলে

0
110
Print Friendly, PDF & Email

শাহবাগ আন্দোলন শুরু হওয়ার পরপরই জামায়াত-ই-ইসলামীকে রাজনৈতিক দল হিসাবে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সারা দেশে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। সারা দেশে জামায়াতকে কার্যত নিষিদ্ধ করার বিষয়ে ব্যাপক জনমত গড়ে উঠে।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা, ধর্ষণ, দেশের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবিদের হত্যা, মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার, জোরপূর্বক ধর্মাšত্মরীত করা জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সরাসরি সাহায্য করে জামায়াত। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিম-ল থেকে বাদ দেওয়ার জন্য জামায়াতের এইসব কূকর্মই যথেষ্ট।

স্বাধীনতার পূর্বে, পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমীর ছিলেন গোলাম আযম। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এই গোলাম আযম পূর্ব পাকি¯ত্মান পুনঃরদ্ধার কমিটি গঠন করে ইসলামী রাষ্ট্রগুলো থেকে তার আন্দোলনের জন্য সমর্থন জোগানোর চেষ্টা করেন। কিšত্ম গোলাম আযমের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরবর্তী জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় এসে গোলাম আযমকে পুনঃরায় বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ তৈরি করে দেন। দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে রাজনীতি অপরাধে তৎকালীন সময়েই গোলাম আযমকে নিষিদ্ধ করা যেত। কিন্তু সরকার তা করেনি।

দুঃখের বিষয় হল ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে জামায়াতের ঘৃণ্য অপরাধের জন্য আজ পর্যন্ত দলটির কোন নেতা দেশবাসীর কাছে প্রকাশ্যে দুঃখ প্রকাশ বা ক্ষমা চাননি। জামায়াতের যদি পূর্নকালীন বিচার না হয় তবে ভবিষ্যতেও দলটি ক্ষমা প্রার্থণা করবে না।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যেমন নাৎসি বাহিনীকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ঠিক তেমনি ভাবে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে দৈনিক একটি ইংরেজি পত্রিকার জাতীয় একটি সমিক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে জামায়াতের এখনও ১ দশমিক ৮ ভাগ জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে জামায়াতের যে শুধুই দেশে জনসমর্থন রয়েছে তাই নয় বজন্ত আত্মর্জাতিক অঙ্গণেও দলটির ভাল লবিং রয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে আল-জাজিরার মত আত্মর্জাতিক গণমাধ্যম বেশগুরুত্বের সাথে লেখালেখি করেছে।

জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ও সল্প জনপ্রিয় ছাত্র শিবির বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট শাসনামলে মার-দাঙ্গা করার জন্য প্রায় প্রতিদিনিই খবরের পাতার মূল শিরোনাম হয়েছে। সম্প্রতি আইএইচএস জেন এর ‘গ্লোবাল টেরোরিজম ও ইনসার্জেন্সি এ্যাটাক-১৩’ ছাত্র শিবিরকে পৃথিবীর তৃতীয় সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসাবে উল্লেখ করেছে। বিগত বছরের মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচারের সময় সারা দেশজুড়ে ব্যাপক তা-ব চালায় এই ছাত্র সংগঠনটি।

এত কিছুর পরও জামায়াতের কৌশলগত মূল পৃষ্ঠপোষক বিএনপি কিšত্ম সব সময় জামায়াতের নিষিদ্ধের ব্যাপারে সব সময় অনিহা প্রকাশ করেছে। বিএনপি পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বিএনপি যদি জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগ করে তবে সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য ও ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য জামায়াতের সাথে জোট বাধবে আওয়ামী লীগ।

৫ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করার পর প্রধাণমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণমাধ্যমকে বলেছিলেন যে জামায়াতকে নিষিদ্ধের ব্যাপারে তার সরকার কাজ করবে। তবে তিনি বলেন যেহেতু জামায়াতের বিষয়ে উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে তাই সরকারের পক্ষ থেকে এখনই কোন পদক্ষেপ নিত পারছে না। জামায়াতকে যদি নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলে তাদের ভোট কিšত্ম বিএনপির বক্সেই যাবে। এটি সত্য যে বিএনপির রাজনৈতিক দল হিসাবে নিজেস্ব একটি স্বকিয়তা রয়েছে, সুতরাং জামায়াতের অপকর্মের ভার বিএনপি কেন নিবে।

যদি নিষিদ্ধ করা হয় তবে জামায়াতের উচিত তুরস্কের একেপি পার্টি থেকে শিক্ষা নেওয়া। জামায়াত যদি সত্যিই নিষিদ্ধ হয় দলটির উচিত হবে নতুন নামে একটি দল গঠন করে যুদ্ধাপরাধী ইস্যু থেকে নিজেদের দুরে রেখে নবযাত্রা শুরু করা।

তবে যদি জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা না হয় তবে কি হবে? আদতে কিছুই হবে না, নিষিদ্ধে নামে মূলত জামায়াতকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা হবে। যতক্ষণ পর্যšত্ম দলটি ধর্মনিরপেক্ষ না হতে পারবে, যতক্ষণ পর্যšত্ম জামায়াত মহিলা অথবা অন্যধর্মের কোন মানুষকে দলের প্রধান নির্বাচিত না করে ততদিন পর্যšত্ম হয়তো দলটি কোনঠাসা হয়ে থাকবে। কিšত্ম জামায়াত কি এই সব মেনে নেবে?

যদি জামায়াত ধর্মভিত্তিক রাজনীতি বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে আগামী সাধারণ নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করে তারপরেও কিšত্ম দেশের সাধারণ মানুষ তাদের অন্য চোখে দেখবে। যদি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় তবে তুরস্কের একেপি পার্টির কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে রাজনৈতিক অঙ্গণে ফিরে আসতে পারে জামায়াত। জামায়াত আদতেই নিষিদ্ধ হবে কিনা তা সময় আসলেই বলা যাবে।

শেয়ার করুন