ভিক্ষা চাই না। কাজ করে খেয়ে বাঁচতে চাই। পৃথিবী আমার চোখের আলো কেড়ে নিয়েছে। আসুন স্যার, আপনার ওজন মেপে নিন। আপনাদের দেওয়া সামান্য কয়টি টাকায় চাল-ডাল কিনে খাব। আর আমি আমার ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে মানুষ করে তুলব। তাই আসুন, আমার কাছে ওজন মেপে যান। এতে আমি আপনাদের মতো বাঁচতে পারব।’
এমনটাই দেখা যায় প্রতিদিন মেহেরপুর শহরের হোটেলবাজারে তিন রাস্তার মোড়ের পাশে বসে এভাবে মানুষকে আকর্ষণ করে ওজন মেপে দিয়ে পাঁচটি করে টাকা নেন অন্ধ নূর ইসলাম (৫৪)।
নূর ইসলাম মেহেরপুর শহরের নতুনপাড়া এলাকার আরোজ শেখের ছেলে। তিনি ছোটবেলা থেকে ভিক্ষাবৃত্তি অপছন্দ করতেন। শহরের বাসস্ট্যান্ডে মুটেগিরি করে খেতেন। কিন্তু প্রায় ১৩ বছর আগে তিনি কঠিন অসুখে পড়েন। অসুখ ভালো হলেও তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হতে পারেননি। তার চোখের আলো নিভে যায়। হয়ে যান অন্ধ। স্ত্রী আর চার সন্তান নিয়ে তিনি ভেঙে পড়েননি। ছয়জন মানুষ খেয়েপরে বাঁচতে হবে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করে তুলতে হবে। এ সময় ভিক্ষা করে খাওয়া ছাড়া একজন অন্ধ মানুষের আর কী করতে পারে? কিন্তু তিনি ভিক্ষার থলে কাঁধে তুলে নেননি। সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কাজ করে খাবেন। আর এ থেকেই তার এ পেশা।
এই ওজন মাপা যন্ত্রটি কেনার মতো তার টাকা ছিল না। তার টাকা না থাকলেও এগিয়ে আসেন ছোট ভাই। কিনে দেন একটি ওজন মাপার যন্ত্র। সেই থেকে নূর ইসলাম শহরের হোটেলবাজারের তিন রাস্তার মোড়ের পাশে অবস্থিত কোহিনুর বেকারির সামনে বসেন। তিনি তার কৌশলে মানুষকে কাছে ডাকেন। ওজন মেপে দেন। বিনিময়ে ৫ টাকা করে পান।
নূর ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, সকাল-বিকেল তিনি ওই জায়গায় বসে মানুষের ওজন মেপে দেওয়ার কাজটি করেন। এতে দিনে তার ১৫০ থেকে ২০০ টাকা আয় হয়। অন্ধ হওয়ার কারণে এ ক্ষেত্রে তিনি ওজনের পরিমাণ বলার সময় অনেক সময় অন্যের সহযোগিতা নেন।
তিনি আরো বলেন, তিন মেয়ের মধ্যে বড় দুই মেয়েকে কিছুদূর লেখাপড়া শিখিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। তারা ভালো আছে। ছোট মেয়ে শাহিদা খাতুনকে তিনি ভর্তি করেছেন মেহেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে। শাহিদা খাতুন এ বছর নবম শ্রেণিতে পড়ছে। একমাত্র ছেলে শাকিবুল ইসলাম মেহেরপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। এ দুই সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করার স্বপ্ন দেখেন তিনি।
প্রতিবন্ধী নূর ইসলামের স্লোগান ‘ভিক্ষা নয়, কাজ করে খেতে চাই’। সেই সঙ্গে তিনি প্রতিবন্ধীদের সহযোগিতায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।