যেভাবে খুন হন কামরুল ও ফোরকান

0
184
Print Friendly, PDF & Email

চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের রহস্য উন্মোচন হতে শুরু করেছে। চাঁদার টাকা ভাগ বাটোয়ারার বিরোধকে কেন্দ্র করে বন্ধুদের হাতে খুন হন কামরুল ও ফোরকান। সাত বন্ধু একসঙ্গে বসে মাদকদ্রব্য সেবন করেন। পরে পাঁচ বন্ধু মিলে এই দুজনকে হত্যা করে লাশ সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেন। হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী জাহাঙ্গীর প্রকাশ ছুট্টুকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

দুই বন্ধু কামরুল ও ফেরকানকে হত্যার পর লাশ নগরীর ষোলশহর দুই নম্বর গেইট এলাকার সেপটিক ট্যাংকে ফেলা হয়েছিলো। এই ঘটনায় দায়ের করা মামলার ৫ নম্বর আসামি জাহাঙ্গীর প্রকাশ ছুট্টুকে (২৬) গ্রেফতারের পর বুধবার পুলিশ পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম রহমত আলীর আদালতে বুধবার দুপুরে জাহাঙ্গীরকে হাজির করে খুলশী থানা পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানায়। শুনানি শেষে আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর জাহাঙ্গীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয়ে নেওয়া হয়। এই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

গোয়েন্দা পুলিশের নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, জিজ্ঞাসাবাদে ছুট্টু জানিয়েছেন কামরুল ও ফোরকানকে হত্যায় তিনি নিজে এবং আরও চারজন অংশ নিয়েছেন। এই চারজন হলেন- শাহ আলম, সাদ্দাম, সাহেদ ও জীবন। রোববার দিবাগত রাতে ষোলশহর দুই নম্বর গেইট এলাকার কবরস্থান সংলগ্ন নির্মাণাধীন বাড়ির ভেতরে ড্যান্ডি (মাদক) সেবন করেন জাহাঙ্গীর (ছুট্টো), শাহ আলম, সাদ্দাম, সাহেদ, জীবন, কামরুল ও ফোরকান। মাদক সেবনের পর এক পর্যায়ে কামরুল ও ফোরকানকে হত্যা করার প্রস্তুতি নেন অপর পাঁচ বন্ধু। পাঁচজন মিলে কামরুল ও ফোরকানের গলায় দড়ি দিয়ে ফাঁস লাগান। দুইজনকে নিস্তেজ করে তাদের হাত-পা বেঁধে নেশার কাজে ব্যবহৃত ব্লেড দিয়ে কামরুলের রগ কাটা হয়। আর ফোরকানের পুরো শরীরে ব্লেড দিয়ে আঁচড়িয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয়।

মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর দুইজনকে ফেলে দেওয়া হয় পার্শ্ববর্তী নির্মাণাধীন ভবনের সেপটিক ট্যাংকে।

এদিকে ঘটনার পরদিন পুলিশ লাশ উদ্ধারের পর ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন ও খুনিদের গ্রেফতারে পুলিশের পাশাপাশি মাঠে নামেন গোয়েন্দারা। ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান, হত্যাকারীদের অবস্থান চিহ্নিত করা এবং তাদের গ্রেফতার করতে গোয়েন্দারা সহায়তা নেন নির্ভরযোগ্য সোর্সদের। আশ্রয় নেওয়া হয় প্রযুক্তির। মোবাইল ফোন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে খুনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে প্রথমেই নগরীর পাঁচলাইশ থানার টেকনিক্যাল এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় জাহাঙ্গীর প্রকাশ ছুট্টোকে।

পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এবং গোয়েন্দা পুলিশের অনুসন্ধান দলের অব্যাহত প্রচেষ্টায় খুনের সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে নিশ্চিত হন গোয়েন্দারা।

ছুট্টোকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করে গোয়েন্দা পুলিশ নিশ্চিত হয় হত্যাকারী কয়েকজন খাগড়াছড়িতে লুকিয়ে রয়েছে। তাদেরকে গ্রেফতার করতে সেখানে ছদ্মবেশে ওঁৎ পাতেন গোয়েন্দারা। বুধবার ভোরে খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ি এলাকা মারিশ্যা থেকে গ্রেফতার করা হয় শাহ আলম, সাহেদ ও সাদ্দামকে।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের গেয়েন্দা শাখার সহকারী কমিশনার কামরুজ্জামান জানান, কামরুল, ফোরকান এবং তাদের হত্যাকারীরা স্থানীয় ছিঁচকে চোর। মোবাইল ফোন চুরি, অন্ধকারে পথচারীদের পথ আগলে জিনিসপত্র লুট করা, চলন্ত পণ্যবাহী ট্রাক থেকে পণ্য ছিনতাই, মাদক সেবন এবং খুচরা বিক্রেতা হিসেবে কাজ করতো তারা। মূলত চাঁদার টাকা ভাগাভাগি ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুন হয় কামরুল ও ফোরকান। তারা এমইএস কলেজের ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলো।

শেয়ার করুন