খালেদা জিয়া ও তারেকের বিচার শুরু

0
142
Print Friendly, PDF & Email

দুর্নীতির দুই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তার বড় ছেলে তারেক রহমানের বিচার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় আদালত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছে। এ দুই মামলায় আরো চারজন করে আসামি রয়েছেন। বিচারক আগামী ২১ এপ্রিল এ দুই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন। ঢাকার বিশেষ জজ ৩-এর বিচারক বাসুদেব এ আদেশ দেন। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। চার্জ গঠনের ঘোষণার পরপরই ক্ষোভ প্রকাশ করে বেগম খালেদা জিয়া কোর্ট রিপোর্টারদের বলেন, কার বিরুদ্ধে চার্জ হলো, কিসের চার্জ হলো। আমাকে তো জিজ্ঞাসা করলো না আমি দোষী না নির্দোষ। আমাকে চার্জ পড়েও শোনানো হলো না। এর পাশাপাশি আদালতের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এর আগে খালেদা জিয়ার পক্ষে অভিযোগ গঠনের জন্য সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত। এতে আদালত কক্ষে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা হইচই শুরু করেন। পরে আজই অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ দেয়া হবে জানিয়ে এজলাস ত্যাগ করেন বিচারক। আদালতে হট্টগোল এবং নিরাপত্তার বিষয়ে এডিসি প্রসিকিউশন আনিছুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আদালতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। ভেতরে হইচই হট্টগোল হয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি।
দুদকের দায়ের করা মামলা দু’টিতে হাজিরা দেয়ার জন্য গতকাল দুপুর পৌনে একটার দিকে আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন খালেদা। এজলাস কক্ষে তিনি উপস্থিত হন দুপুর ১টায়। ১টা ৫ মিনিটে বিচারক আসন গ্রহণ করার পর শুরু হয় শুনানি। ১টা ৪০ মিনিটে শুনানির সময় হট্টগোল শুরু হলে বিচারক এজলাস ত্যাগ করেন। এরপর ৩টা ১৭ মিনিটে আবারও শুরু হয় শুনানি। এ সময় আবারও হট্টগোল শুরু হলে ৩টা ২৩ মিনিটে ফের এজলাস থেকে নেমে যান বিচারক। এ সময় আদালতের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, এ আদালতের প্রতি আমাদের কোনো আস্থা নেই। আমরা ন্যায়বিচার পাবো না। সুতরাং আমরা এ কোর্টে কোনো মামলা করবো না। এজলাস থেকে বিচারক নেমে যাওয়ার পর বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে পেশকার আরিফুর রহমান আইনজীবীদের জানান, খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এছাড়া মামলার সাক্ষীর জন্য আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য্য করার বিষয়টিও জানান তিনি। এর আগে দুপুর ১২টায়  জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার চার্জ শুনানির জন্য সময় বাড়ানোর আবেদন করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। খালেদার আইনজীবীদের পক্ষে আবেদন করেন অ্যাডভোকেট তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ। এদিকে খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরা উপলক্ষে আদালত এলাকায় গ্রহণ করা হয় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এ সময় বিএনপির শীর্ষ নেতারাসহ বিএনপি সমর্থক আইনজীবী ও হাজার হাজার নেতাকর্মী আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন। হাজিরা শেষে বিকেল ৩টা ৫৫ মিনিটে আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়ার ক্ষোভ
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আদালতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটা কেমন ধরনের চার্জ গঠন করা হলো? বিচারক আমাকে জিজ্ঞাস করল না আমি দোষী না নির্দোষ। সব সময় দেখেছি বিচারক তার চেয়ারে বসে মামলার আদেশ প্রদান করেন; কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিচারক তার এজলাস থেকে তার কক্ষে গিয়ে পেশকারের মাধ্যমে এ চার্জ গঠন করলেন। কোনো রকম শুনানি ছাড়াই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় কীভাবে চার্জ গঠন করা হলো। গতকাল বুধবার দুপুরে মহানগর দায়রা জজ বিশেষ আদালত-৩ এর আদালত কক্ষে তিনি এ প্রশ্ন তোলেন। এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার পক্ষে অভিযোগ গঠনের জন্য সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট
গত বছর ৮ আগস্ট জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়াসহ চারজনের নামে তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ। মামলার অভিযোগ বলা হয়, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেওয়া হয়েছে বলে কাগজপত্রে দেখানো হয়, যার কোনো বৈধ উৎস ট্রাস্ট দেখাতে পারেনি। জমির মালিককে দেওয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি এ মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ খান। ২০১১ সালের ৮ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া হাইকোর্ট থেকে আট সপ্তাহের জামিন পান। ১৭ জানুয়ারি খালেদা জিয়া ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জামিননামা দাখিল করেন। মামলায় অভিযুক্ত অপর তিন আসামি হলেন, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছ চৌধুরীর তৎকালীন একান্ত সচিব, বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও মনিরুল ইসলাম খান জামিনে আছেন। হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু হতেই পলাতক।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দুর্নীতির অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এতিমদের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ এনে এ মামলা দায়ের করা হয়। মামলার অপর আসামিরা হলেন, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান। তারেক রহমান সরকারের নির্বাহী আদেশে দেশের বাইরে আছেন। মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ জামিনে আছেন। তবে শরফুদ্দিন আহমেদ আদালতে হাজির না থাকায় বুধবার তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। অপর দুই আসামি ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু হতেই পলাতক। মামলাটি তদন্ত করে দুদকের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ অপর চারজনকে অভিযুক্ত করে ২০০৯ সালের ৫ আগস্ট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

শেয়ার করুন