প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল নিয়ে এত কথা, আজকেই বন্ধ করে দেব। কালকেই বন্ধ করে দিই? তাতে কী অবস্থা হবে? আসলে কেউ ব্যবসা চেয়েছেন, পাননি। সেজন্যই এত দুঃখ, এত ব্যথা। যদি আপনারা বলেন, তাহলে কালই এগুলো বন্ধ করে দিতে পারি। তিনি বলেন, বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বাস্তবায়িত হলে তখন আর রেন্টাল-কুইক রেন্টালের প্রয়োজন থাকবে না। গতকাল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে এক প্রশ্নোত্তরে সংসদ নেত্রী আফম বাহাউদ্দিন নাছিমের এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিতীয়বার আমরা যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করি তখন বিএনপি বিদ্যুৎ উৎপাদন আমাদের আগের মেয়াদের ৪ হাজার ২০০ মেগাওয়াট থেকে নামিয়ে ৩ হাজার ২০০ মেগাওয়াটে রেখে গিয়েছিল। এ অবস্থায় আমরা ২০০৯ সালে ক্ষমতা নিয়ে দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ভাড়াভিক্তিক রেন্টাল-কুইক রেন্টাল পদ্ধতিতে যাই। আমরা যখন ক্ষমতায় আসি তখন কুইক-রেন্টাল ছাড়া উপায় ছিল না। বাড়তি বিদ্যুৎ কি মানুষের কাজে লাগছে না। আসলে সুখ পেলে মানুষ দুঃখের কথা ভুলে যায়। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন যে হারে বেড়েছে তা অতিতের কোনো সময়ে ছিল না। সর্বশেষ গত ১৮ মার্চ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় ১১ হাজার ৮৮৪ মেগাওয়াট। এর আগে আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আফম বাহাউদ্দিন নাছিম এক সম্পূরক প্রশ্ন করে বলেন, সরকার জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ভাড়াভিক্তিক রেন্টাল-কুইক রেন্টাল পদ্ধতিতে গিয়েছিল। এখন তো বিদ্যুতের একটি স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসছে তাই ভাড়াভিক্তিক এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র কমিয়ে আনা যায় কি না। একই সঙ্গে ভাড়াভিক্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আলাদা কোনো নীতিমালা করার চিন্তা সরকারের আছে কি না জানতে চান। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেত্রী প্রশ্নোত্তরে আরও বলেন বর্তমানে মানুষ বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে ৬২ থেকে ৬৪ শতাংশ। আজ যে সকল মানুষ বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে না তারা কি পাবে না। তা তো হতে পারে না। তাই আপনারা যারা রেন্টাল-কুইক রেন্টাল নিয়ে এতো কথা বলছেন তারা তো এসি রুমে বসেই সরকারের সমালোচনা করছেন। এতো কথা কেন হয় আমি বুঝি না। যদি বলেন আমি এখনই বন্ধ করে দিতে পারি। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কি অবস্থা হবে?। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বিদ্যুতের এমন অবস্থা করে দিয়েছিল, রেন্টাল ও কুইক-রেন্টাল ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। বিদ্যুতের জন্য তখন এক ধরনের হাহাকার ছিল। তখন জেনারেটরে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য মানুষ ৩০ থেকে ৩৫ টাকা খরচ করত। আমরা সে অবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছি। লোডশেডিং কমিয়ে এনেছি। শেখ হাসিনা আক্ষেপ করে বলেন, আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, সমস্যা জিইয়ে রাখতেই যেনো সবাই পছন্দ করেন। অনেকেই সুখ পেলে দুঃখের দিনের কথা ভুলে যায়। এ বিদ্যুৎ দিয়ে এসি চালিয়ে তারা আমাদের সমালোচনা করে। কেউ হয়তো ব্যবসা পায়নি, সেজন্য তাদের এতো জ্বালা। আমরা ৬২ থেকে ৬৪ শতাংশ মানুষকে বিদ্যুৎ দিতে পারছি। এটাকে আমরা শতভাগে উন্নীত করতে চাই। আবদুর রহমান বদির এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, যে কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত বিদ্যুতের প্রাপ্যতা। দেশের আর্থ-সামাজিক খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার বিদ্যুৎ খাতের ওপর যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করেছে। যার ফলে ২০১৩ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতার ক্ষেত্রে ১০ হাজার মেগাওয়াটের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত যেসকল বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎ প্রকল্প বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে তারা ১৫ বছর পর্যন্ত কর অব্যাহতির সুযোগ পাচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে এলে রেন্টাল-কুইক রেন্টালগুলোর প্রয়োজন থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেনারেটর চালিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গেলে প্রতি ইউনিটে ৩০-৩৫ টাকা খরচ হতো। রেন্টাল-কুইক রেন্টালে এত টাকা খরচ হয় না। শেখ হাসিনা জানান, বাংলাদেশের ৬৪ ভাগ মানুষ এখন বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায়। চাহিদা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। কিছু বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে রেন্টাল-কুইক রেন্টালের আর প্রয়োজন হবে না।