খালেদার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন, সাক্ষ্য ২১ এপ্রিল

0
111
Print Friendly, PDF & Email

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের দুর্নীতির মামলায় সময়ের আবেদন নামঞ্জুর করে অভিযোগ গঠন করেছে আদালত। বুধবার ঢাকা ৩ তম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচার বাসুদেব রায় ওই অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন। একই সঙ্গে আগামি ২১ এপ্রিল মামলা দুটিতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছে আদালত।
এরআগে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বিচারকের খাস কামরায় গিয়ে আদালতের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেন। পরে আইনজীবী এজলাসে না এসেই অভিযোগ গঠনের আদেশ ও সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ঠিক করেন।

বুধবার সকালে ওই মামলায় হাজিরা দিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ঢাকার নিম্ন আদালতে হাজির হন। বেলা পৌনে এক টার সময় তিনি আদালত চত্বরে হাজির হন। এ সময় খালেদার আইনজীবীরা বিএনপি চেয়ারপার্সনকে সাথে নিয়ে আদালত কক্ষে ঢোকেন।

এজলাসে ঢোকার পরপরই ঢাকার বিশেষ জজ-৩ এর আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়ের আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুইটি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হয়। দুপুর ১টা ১০মিনিটের দিকে শুনানি শুরু হলে দুই পক্ষের আইনজীবীবের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয় এবং মামলার শুনানিতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়।

পরে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বিচারককে জানান, এই আদালতের প্রতি তাঁদের আস্থা নেই।

আদালত সূত্রে জানা যায়, অভিযোগ গঠনের ওই শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে জানান- উচ্চ আদালতের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ করে যেহেতু আপিল করা হয়েছে সেহেতু মামলা সেখানে বিচারাধীন রয়েছে। এজন্য শুনানি মুলতবি রাখা যায়।

এ কথা শোনার পর বিচারক এ সম্পর্কে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বক্তব্য জানতে চান। দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর মোশারফ হোসেন তাজুল আদালতকে জানান, এতদিন খালেদা জিয়া না আসতে পারার কারণে কোনো কিছু করা যায়নি। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ যেহেতু নাই, সেহেতু শুনানি করা যাবে।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ মামলার শুননির সময় বাড়ানোর আবেদন বিচারক নাকচ করে দিলে হট্টগোল শুরু হয়। এ সময় বিচারকের ওপর চড়াও হন খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবীরা। অকথ্য ভাষাও ব্যবহার করতে থাকেন তারা। এ অবস্থায় বিচারক এজলাস ছেড়ে উঠে চলে যান।

এ সময় বিপুল সংখ্যক বিএনপি নেতাকর্মী আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হন। সকাল ১০টা থেকেই বিএনপিপন্থি আইনজীবী ও বিএনপি নেতাকর্মীরা আদালত চত্বরে জাড়ো হন এবং তারা সবাই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে নানা শ্লোগান দেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তিনি তাঁর গুলশানের বাসভবন থেকে আদালতের উদ্দেশে রওনা হন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানা উল্লাহ মিয়া  বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। এ মামলার হাজিরা দিতেই তিনি আদালতে হাজির হন।

এ উপলক্ষ্যে আদালত চত্বরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।সরকার পক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দীর্ঘ দিন ধরে নানা অজুহাতে মামলায় আদালতে হাজির হওয়া থেকে বিরত রয়েছেন।আজ যদি কোনোভাবে খালেদা জিয়া আদালতে হাজির না হন তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকবে না।আদালত এর আগে তারিখে সাফ জানিয়ে দেন, এই তারিখে বিএনপি চেয়ারপারসন আদালতে হাজির না হলে তার অনুপস্থিতেই মামলার বিচার কাজ শুরু করা হবে।

বুধবার মামলা দুইটিতে দুদকের পক্ষে অভিযোগ গঠন এবং খালেদা জিয়াসহ অন্যান্য আসামিদের পক্ষে অব্যাহতির আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। দীর্ঘদিন মামলা দুইটি এ অবস্থায় থাকলেও খালেদা জিয়া আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় অভিযোগ ও অব্যাহতির আবেদনের ওপর শুনানি করা সম্ভব হয়নি।

তাই বুধবার খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দুইটিতে অভিযোগ গঠনের শুনানি হতে পারে বলে আদালত সূত্র জানিয়েছে।

খালেদা জিয়া মামলা দুইটিতে এর আগে তিনবার নিম্ন আদালতে এসেছেন। ২০০৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ও ২০১২ সালের ২ ফেব্রুায়রি এবং ওই বছর ১১ অক্টোবর তিনি আদালতে হাজিরা দেন।

প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ মামলাটি ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় দায়ের করা হয়।

মামলাটিতে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানও এ মামলার আসামি।

আসামি তারেক রহমান সরকারের নির্বাহী আদেশে দেশের বাইরে আছেন। মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ জামিনে আছেন। ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু হতেই পলাতক।

অন্যদিকে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট দুদকের দায়ের করা এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।

উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে কাকরাইলে সুরাইয়া খানমের কাছ থেকে ‘শহীদ জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর নামে ৪২ কাঠা জমি কেনা হয়। কিন্তু জমির দামের চেয়ে অতিরিক্ত ১ কোটি ২৪ লাখ ৯৩ হাজার টাকা জমির মালিককে দেয়া হয়েছে বলে দাবি করা হলেও জমির মালিককে দেয়া ওই অর্থ ছাড়াও ট্রাস্টের নামে মোট ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা অবৈধ লেনদেনের তথ্য পাওয়ায় অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হয়।

শেয়ার করুন