সেনাবাহিনীকে দেওয়া হচ্ছে ৪৮ হাজার একর জমি নতুন সেনানিবাস ও সামরিক স্থাপনা

0
110
Print Friendly, PDF & Email

নতুন সেনানিবাসসহ বিভিন্ন ধরনের সামরিক স্থাপনার জন্য দেশের পাঁচ জেলায় ৪৮ হাজার একর জমি সেনাবাহিনীকে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু জমি হস্তান্তরও করা হয়েছে। কিছু জমি বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। উচ্চপর্যায়ের সরকারি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ওই সূত্র জানায়, গত ৯ ফেব্রুয়ারি সেনাসদরে জেনারেলদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব জমি বরাদ্দ দেওয়ার কথা জানান। প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে বলেন, ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’-এর ধারাবাহিকতায় এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হচ্ছে। বৈঠকে সেনাবাহিনীর জন্য আরও যেসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হাতে নেওয়া হয়েছে, তা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
সূত্র জানায়, সিলেটে জালালাবাদ সেনানিবাসে ১৭ পদাতিক ডিভিশন নামে নতুন একটি ডিভিশন (তিন ব্রিগেড নিয়ে এক ডিভিশন) গঠন করা হয়েছে। এই ডিভিশনের জন্য একটি পদাতিক ব্রিগেড এবং দুটি নতুন পদাতিক ব্যাটালিয়ন গঠন করা হয়। সরকারের পরিকল্পনা আছে ছয় বছরে এই ডিভিশনের জন্য ৩৬টি নতুন ইউনিট গঠন করা হবে। এই ডিভিশনের জন্য সিলেটের শাহপরান বাইপাস এলাকায় দেড় হাজার একর জমি অধিগ্রহণের জন্য নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে জেনারেলদের জানান।
প্রথম আলোর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে সিলেটের জেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, এসব জমিতে কোনো স্থাপনা নেই।
প্রস্তাবিত পদ্মা সেতুর আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ এবং নিরাপত্তার জন্য ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকায় নতুন এই ব্রিগেডের জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি জমি বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে নোয়াখালী জেলায়। সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ এলাকার জন্য নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চর কেরেং এলাকায় ১২ হাজার, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম সীমান্তের তিন উপজেলা হাতিয়া, সুবর্ণচর ও সন্দ্বীপ থেকে ৪৫ হাজার একর জমি চেয়েছিল সেনাবাহিনী। প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে তিন উপজেলা থেকে ৩৫ হাজার একর এবং চর কেরেং থেকে ১০ হাজার একর জমি সেনাবাহিনীকে দেওয়ার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। এসব ভূমি বিরোধপূর্ণ চরাঞ্চল বলে জানা গেছে। তবে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় সূত্র জানায়, সামরিক স্থাপনার জন্য ঈশ্বরদীর লক্ষ্মীকুণ্ডাচর, চর পুরুলিয়া ও ডিক্রি তালবাড়িয়া থেকে দুই হাজার একর জমি চেয়েছিল সেনাবাহিনী। সেখান থেকে ৭৩০ একর জমি সেনাবাহিনীকে দেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানা গেছে।
উপজেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, কক্সবাজারের রামু এবং বান্দরবানের রুমাতে দুটি পূর্ণাঙ্গ সেনানিবাস স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য সেনাবাহিনীর কাছে জমি হস্তান্তরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। রুমা থেকে ৯৯৭ একর বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এসব জমির সীমানা নির্ধারণের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। পার্বত্য শান্তি চুক্তির আওতায় এসব স্থাপন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। কক্সবাজারের রামুতে জমি বরাদ্দের বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, সেনাবাহিনীর আধুনিকায়নের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয় নিরাপত্তা-ঝুঁকির বিবেচনা থেকেই। কিন্তু সেটা জাতীয় জীবনের অন্যান্য প্রয়োজনের সঙ্গে কতখানি সামঞ্জস্যপূর্ণ তা বিবেচনায় নিতে হবে। তা ছাড়া এসব উন্নয়নের জন্য যে ব্যয় হবে, তা অর্থনীতির ওপর কোনো চাপ ফেলবে কি না, সেটাও ভেবে দেখতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো প্রতিরক্ষা নীতি নেই। কিসের আলোকে এসব করা হবে, সেটা আগে ঠিক করতে হবে।’

শেয়ার করুন