দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির কাছে আগামী আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ মুখ্য বিষয় থাকবে না। তাদের মূল দাবি থাকবে ‘সবার অংশগ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।’ উপজেলা নির্বাচন শেষ হওয়ার পর আগামী জুন মাস নাগাদ এই দাবি নিয়ে নতুন করে আন্দোলনের মাঠে নামার চিন্তাভাবনা করছে দলটি। তবে কৌশল পরিবর্তন করে আগামী দিনে যতটা সম্ভব শান্তিপূর্ণ
আন্দোলন করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বিএনপির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, গত ডিসেম্বরে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর উপস্থিতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে আলোচনায় কিছু প্রস্তাব আসে। সেই প্রস্তাবের সূত্র ধরেই বিএনপি আগামী আন্দোলনের দাবি নির্ধারণ করছে। সেখানে পদত্যাগ না করে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা খর্ব করার কথা বলা হয়েছিল। বিএনপি মনে করছে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও শক্তিশালী করা যেতে পারে, যাতে নির্বাচনের সময়ে তারা নিজেরাই সংশ্লিষ্ট প্রশাসন পরিচালনা করতে পারে। এ জন্য অবশ্য সংবিধান সংশোধন করার প্রয়োজন হবে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা খর্বের প্রস্তাব এসেছিল। তিনি থাকবেন কী থাকবেন না সেটি মুখ্য নয়, বিএনপির দাবি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, যেখানে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ থাকবে। প্রধানমন্ত্রী থাকবেন কী থাকবেন না, তিনি থাকলেও কিভাবে থাকবেন- সংলাপে না বসে সেটি বলা যাবে না। সংলাপের মাধ্যমেই সেটা ঠিক করতে হবে। ‘এখানে অবশ্যই দেওয়া-নেওয়ার বিষয় আছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিশেষ কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েও মীমাংসা হতে হবে। তা ছাড়া বর্তমানে উপজেলা নির্বাচনেও সহিংসতা হচ্ছে। নির্বাচনে সরকার প্রভাব খাটাচ্ছে। প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারছে না।
একই উপায়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব (দপ্তর) রুহুল কবীর রিজভী এ প্রতিবেদককে বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের ধরন যাই হোক সেটি তো আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ করতে হবে। সেই আলোচনার উদ্যোগই তো সরকার নিচ্ছে না।
বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকার সংলাপের উদ্যোগ না নিলে বিএনপি জুন নাগাদ আন্দোলনে নামবে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিএনপি সমর্থিত পেশাজীবী নেতাদের কাছে জুন থেকে আন্দোলনে নামার ইঙ্গিত করেছেন। এরপর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাজবাড়ীর জনসভায় তিনি বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনের পরই আন্দোলন শুরু করবেন। সম্প্রতি তিনি আরো জোর দিয়ে বলেছেন, বিএনপি আন্দোলনে নামবেই। কেউ ঠেকাতে পারবে না।
জানা গেছে, গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিএনপি নেতারা পরিকল্পনা করেছিলেন- আগে দল গুছিয়ে তারপর আন্দোলন শুরু করবেন। এর মধ্যে যেসব নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন তাঁরাও মুক্তি পাবেন। নেতা-কর্মীরা কিছুটা বিশ্রামও পাবেন। কিন্তু এখন সেই পরিকল্পনার কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। দল পুনর্গঠন ছাড়াই আন্দোলন শুরু করবেন। এপ্রিলে যে জাতীয় কাউন্সিল করার কথা ছিল সেটিও আপাতত হচ্ছে না।
বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের নেতারা এখন মনে করছেন, উপজেলা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নেতা-কর্মীরা একে অপরের কাছাকাছি চলে আসছেন। এতে দল গোছানোর কাজ অনেকটাই হয়ে যাচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনের পর দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া খুব দ্রুততম সময়ে বেশ কয়েকটি জেলা সফর করবেন। এরপরই কৌশল নির্ধারণ করে আন্দোলনের মাঠে নামবে দলটি।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী এ ব্যাপারে কালের কণ্ঠকে বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ নেতাদের যেভাবে কারাবন্দি করা হচ্ছে তাতে দল পুনর্গঠন করাও কঠিন। তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দল গোছানোর কাজ হয়ে যাচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনের পর চেয়ারপারসন জেলা সফর করবেন। এরপরই আন্দোলন শুরু হবে।