নিখোঁজ বিমানটি বিধ্বস্ত কিংবা বিস্ফোরিত হয়নি

0
171
Print Friendly, PDF & Email

মালয়েশিয়ার নিখোঁজ বিমানটি কোথায় এবং কি অবস্থায় আছে তা নিয়ে নানা কথা এতদিন শোনা গিয়েছিল। কেউ কেউ মনে করছিলেন বিমানটি হয়তো জলে কিংবা স্থলে বিধ্বস্ত হতে পারে। কিন্তু এবার সেই ধারণাটা মিথ্যা প্রমাণিত হলো। অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা ভিত্তিক জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পরমাণু অস্ত্র বিস্তাররোধ সংস্থা (সিটিবিটিও) জানিয়েছে, মালয়েশিয়ার নিখোঁজ বিমান কোথাও বিস্ফোরিত কিংবা বিধ্বস্ত হয়নি। সংস্থাটি এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। ফলে ধারণা করা হচ্ছে, বিমানটি কোথাও আছে। মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ ধারণা করছেন, পাইলট কিংবা কো পাইলট আত্মাহত্যাও করতে পারেন। এদিকে বিমানটি খুঁজতে নিজ দেশে তল্লাশি শুরু করেছে চীন। বিমানটির অবস্থান চিহ্নিত করার চেষ্টায় ৩০ লাখ মানুষ যোগ দিয়েছে। এটি বৃহত্তম তল্লাশি অভিযান হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে। খবর এপি, এএফপি ও আল-জাজিরা’র।

জাতিসংঘ মহাসচিব বাব কি মুনের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, বিমানটি দুর্ঘটনায় পতিত হলে অর্থাত্ বিধ্বস্ত হলে সেটা সিটিবিটিও জানতে পারবে। কারণ এক্ষেত্রে যে চারটি প্রযুক্তি ব্যবহূত হয় তার মধ্যে তিনটি প্রযুক্তিই সিটিবিটিও’র আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থা (আইএমএস) ব্যবহার করে। সংস্থাটি ক্ষুদ্র পরমাণুর বিস্ফোরণও ধরতে পারে। আর বড় একটি বিমান বিধ্বস্ত হলে ধরা তো পড়বেই। সিটিবিটিও’র নির্বাহী সচিব ল্যাসিনা জারবো গত সপ্তাহে বলেছিলেন, তিনি পরীক্ষা করে দেখবেন বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে কিনা। বিধ্বস্ত হলে সেটা জানা যাবে। জারবো বলেন, তিনি বিমান সম্পর্কিত তথ্যের বিশ্লেষনে জাতিসংঘের অন্তর্ভুক্ত দেশের সব বিজ্ঞানীদের সতর্ক থাকার আহবান জানিয়েছিলেন।

নির্বাহী সচিব বলেন, তাদের এমন একটি নেটওয়ার্ক আছে যার দ্বারা সারা পৃথিবীতে কোনো পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটলে কিংবা ভূমিকম্পে হলেও তারা জানতে পারবে। এজন্য ‘ইনফ্রাসাউন্ড’ কিংবা ‘ইনফ্রাসোনিক’ নামের দুটি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। তবে ইনফ্রাসাউন্ড হচ্ছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য প্রযুক্তি। তিনি সিটিবিটিও’র আন্তর্জাতিক তথ্য কেন্দ্রকে (আইডিসি) বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার কোনো তথ্য আছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে বলেছিলেন। তিনি আরো বলেন, ইনফ্রাসাউন্ড প্রকৃতির এবং মনুষ্যসৃষ্ট সব বিস্ফোরণের তথ্য জানতে পারে। মনুষ্যসৃষ্ট বিস্ফোরণের মধ্যে রয়েছে রাসায়নিক বিস্ফোরণ, বিমান এবং রকেট বিস্ফোরণ ইত্যাদি। ফলে যদি বিমানটি বিস্ফোরিত কিংবা বিধ্বস্ত হতো তাহলে সেটা তারা জানতে পারতেন। আইডিসি নিয়মিতভাবে বাণিজ্যিক বিমানের ওঠা-নামার তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। এর আগে ২০০৯ সালে জাপানের একটি বিমান নারিতা বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হলে আইডিসি সেটা জানতে পারে।

স্যাটেলাইট প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল গ্লোব বলেছে, এখন তারা ২৪ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকায় অনুসন্ধান চালাচ্ছে এবং প্রতিদিন ভারত মহাসাগরের একটি নতুন এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে নতুন নতুন স্যাটেলাইট ছবি যুক্ত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তাদের কর্মসূচিতে ৩০ লক্ষাধিক লোক অংশগ্রহণ করেছে। অংশগ্রহণকারীরা ২৯ লাখ এলাকা ‘ট্যাগ’ করেছে এবং তাদের ‘ম্যাপ ভিউজ’ এর সংখ্যা প্রায় ২৫ কোটি ৭০ লাখ। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, গত ৮ মার্চ ২৩৯ যাত্রী ও ক্রুসহ বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার পর তারা ১১ মার্চ থেকে তাদের পাঁচটি শক্তিশালী স্যাটেলাইটের মাধ্যমে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে। ১১ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। ২৬টি দেশ অভিযানে অংশ নিয়েছে।

কুয়ালালামপুরে চীনের রাষ্ট্রদূত হুয়াং হুইকাং জানান, চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। দক্ষিণ করিডোরে অনুসন্ধানে নেতৃত্ব দিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া। নিউজিল্যান্ড জানিয়েছে, তারা মালয়েশিয়া সরকারের অনুরোধে অস্ট্রেলিয়ায় একটি বিমান পাঠিয়েছে। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, বিমান নিখোঁজের তদন্তে পাইলট এবং সহকারী পাইলটের বিরুদ্ধে তদন্ত চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক সংযোগও খোঁজা হচ্ছে। মালয়েশিয়ার বিরোধী দলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, তিনি পাইলট জাহারি আহমেদ শাহের সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলেন। তবে বিমান নিখোঁজের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগসূত্র খোঁজাটা সমীচীন নয়। আনোয়ার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার তদন্তের সমালোচনা করেন। মালয়েশিয়ার পরিবহন মন্ত্রী এক টুইটার বার্তায় বলেছেন, প্রার্থনা করেন এবং আশা করেন যেন আমরা কিছু একটা পাই।

আত্মহত্যার গুঞ্জন

বিমানের পাইলটের সহকারী শেষ বার্তাটা পাঠিয়েছিলেন। ফলে মালয়েশিয়ার তদন্ত দল মনে করছেন, পাইলট কিংবা কো পাইলট আত্মহত্যা করতে পারেন। মালয়েশিয়ার বিমানের প্রধান নির্বাহী আহমাদ জুহারি ইয়াহিয়া সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিমানটির যোগাযোগ ব্যবস্থা কখন অকার্যকর হয়েছিল সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। বোয়িং কোম্পানির ৭৭৭-২০০ইআর মডেলের বিমানের বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মনে এই ধারণা বদ্ধমূল হচ্ছে যে কেউ বিমানটিকে এর নির্দিষ্ট গন্তব্য থেকে সরিয়ে অন্যপথে কয়েক হাজার মাইল দূরে নিয়ে গেছে, ক্রমেই তদন্তকারীদের মধ্যে এমন ধারণা জোরালো হয়ে উঠছে। উত্তরে কাস্পিয়ান সাগরের তীর থেকে দক্ষিণ ভারত মহাসাগর পর্যন্ত বিশাল এলাকায় বিমানটির খোঁজে নতুন অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে। নিখোঁজ বিমানের খোঁজে এত বড় এলাকা নিয়ে এত বড় অভিযান নজিরবিহীন। মালয়শীয় কর্তৃপক্ষের বিশ্বাস, থাইল্যান্ড উপসাগরের আকাশে থাকার সময় বিমানটির কেউ একজন এর যোগাযোগ ব্যবস্থাগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল।

শেয়ার করুন