রাজনৈতিক দলগুলোর নতুন স্ক্রিপ্ট প্রয়োজন

0
126
Print Friendly, PDF & Email

বিগত কয়েক বছর ধরে অনেকটা এলোমেলো অবস্থায় রয়েছে দেশের অন্যতম বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি। দল পরিচালনায় কার্যকর নেতা বাছাই ও সরকার বিরোধী আন্দোলনে ক্রমাগত ব্যর্থতার কারণে দলটির আত্মবিশ্বাসে অনেকটা ফাটল ধরেছে।

ভাল পদের আশায় কেন্দ্রীয় ও মধ্যম পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে অন্তদ্বন্দ্ব স্পষ্ট দেখা দিচ্ছে। এছাড়া সাম্প্রতিক উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের হুংকারে দলটির ক্ষত আরও গভীর হয়েছে।

অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে শুধুমাত্র বিএনপি নেত্রী তার অবস্থান শক্ত করে ধরে রেখেছেন। নেত্রী দল পরিচালনার জন্য যোগ্য জ্যেষ্ঠ নেতা খুঁজে পাচ্ছেন না। আর এই সব কারণে অনেকটা হতাশায় ভুগছেন বিএনপি নেত্রী।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে দল পরিচালনা করতে ব্যর্থ নেতাদের পরিবর্তন করতে অনেকটাই বদ্ধ পরিকর বেগম জিয়া। তিনি চাইছেন দলে এমন কিছু নেতা থাকবে যারা নিমিষেই দলের তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যত্ম দলকে এক সুঁতোয় বাধতে সমর্থ হবেন।

নেত্রীর উপদেষ্টারাও দলের কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। এমনকি সরকারের কিছু উঠতি ভুল ধরে সমালোচনা করে সরকার বিরোধী আন্দোলন জোরদার করতেও অনেকটা ব্যর্থ উপদেষ্টারা।

বিএনপি সূত্র বলছে অনেক কেন্দ্রীয় নেতারা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্বও ঠিক মত পালন করছেন না। নিজেদের দায়িত্বে ব্যর্থ হয়ে নেতারা নতুন কোন কর্মসূচি দিতেও ব্যর্থ হচ্ছেন। তবে সূত্র বলছে সরকারের কঠোর মনোভাবের কারণে বিএনপি ও তার মিত্ররা সরকার বিরোধী আন্দোলনসহ কোন ধরনের কর্মসূচি পালন করতে পারছে না। এছাড়া জ্যেষ্ঠ ও মধ্যম ধারার অনেক নেতারা আটক হওয়ায় দলটির কার্যক্রম মূলত কিছুটা স্থবির হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাসহ অনেক মধ্যম পর্যায়ের নেতাদের বিরুদ্ধে সরকার হালি হালি মামলা দায়ের করায় নেতারা আইনী চাপের মুখে থাকায় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না।

তবে এত কিছুর মধ্যেও উপজেলা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কিছুটা পিঠচুলকানির আনন্দ নিচ্ছে বিএনপি। নির্বাচনের তৃতীয়ধাপ পর্যšত্ম ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তুলনায় কিছুটা এগিয়ে রয়েছে বিএনপি।

নির্বাচনের প্রথম দুইধাপে নিজেদের হারানো জনপ্রিয়তা ফিরে পেয়েছিল বিএনপি। তবে তৃতীয় ধাপে এসে বিএনপির চেয়ে কিছুটা এগিয়ে যায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

নির্বাচনের ফলাফল দেখে মনে হচ্ছে এখনও বিএনপি তৃণমূল পর্যায়ে তাদের শক্তি হারিয়ে ফেলেনি। উপজেলা নির্বাচনের বিজয়ধারা কাজে লাগিয়ে বিএনপিকে আরও শক্তিশালী হওয়া দরকার।

জামায়াতের ব্যাপারে বিএনপিকে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। বিএনপি একটি জনপ্রিয় দল, এটি আগেই বোঝা উচিত ছিল যে কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য বিএনপি একাই যথেষ্ট, তাদের কোন খুঁটিখাম্বার দরকার নেই।

এবার ক্ষমতাসীন দলের বিষয়ে কিছু না বললেই নয়। ৫ জানুয়ারির সাধারণ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের শারীরিক ভাষা পরিবর্তন হয়ে গেছে। নির্বাচনের পর দলটির ভাষা দেখে মনে হচ্ছিল যে শীগ্রই তারা সবাইকে নিয়ে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন করতে পারে।

বর্তমান চিত্র সবার কাছে স্পষ্ট। তবে মনে রাখার দরকার যে মুদ্রার আরও একটি পিঠ থাকে। সরকার সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করে সংবিধান রক্ষার মত ‘গুরুত্বপূর্র্ণ’ কাজ করেছে, পাশাপাশি নির্বাচনের পর দলের অবস্থান নিয়েও চিšত্মায় পড়েছে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে, তবে সব কিছু কিšত্ম দলটির নিয়ন্ত্রণে নেই। সঠিক গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রেও দলটি কিšুত্ম উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেনি। সাধারণত উপজেলা পর্যায়ে গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা হয়ে থাকে। কিšত্ম সাম্প্রতিক উপজেলা নির্বাচনে স্পষ্টভাবে দেশবাসি দেখেছে যে কিভাবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা নির্বাচনে ভোটচুরি, ব্যালট বাক্স ও পেপার ছিনতাই, ভোট কেন্দ্র দখল, ভোট জালিয়াতি করেছে। তাহলে কিভাবে আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা করে, তা সকলের কাছে বোধগম্য নয়। নির্বাচনের প্রতিটি ধাপেই ক্ষমতাসীন দল পেশি শক্তির প্রদর্শন করেছে। কোন রকমের ভয়, শরম লজ্জা ছাড়াই ক্ষমতাসীন দল ভোটে নগ্ন হ¯ত্মক্ষেপ করেছে।

এছাড়া ছাত্রলীগকে নিয়ে অনেকটা বেকায়দায় পড়েছে আওয়ামী লীগ। ছাত্রলীগকে কোন মতই থামানো যাচ্ছে না। প্রকাশ্য দিবালোকে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা অস্ত্রহাতে নিয়ে পুলিশের ভূমিকা পালন করছে। দেশবাসি দেখেছে কিভাবে পুলিশ ও ছাত্রলীগ বিরোধী দল দমন মিশনে অংশগ্রহণ করেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রধারী ছাত্রলীগ ক্যাডারদের কার্যকলাপ পুলিশি তান্ডবকেও ছাড়িয়ে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে এক উপজেলায় আওয়ামী লীগের একটি র‌্যালিতে বাঁধা দেওয়ায় কারণে একজন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ক্ষমা চেয়ে উদ্ধার হতেও দেখা গেছে। তাহলে একবার ভাবুন আমরা কি সব ভয়ংকর জিনিসকে দাওয়াত দিচ্ছি।

এইসব অনিয়মের জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে আরও একবার চিšত্মাভাবনা করা দরকার। অনিয়ম, অপরাজনীতি বন্ধে ক্ষমতাসীন দলটিকে শীগ্রই বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং তাদের কাজ ও চিšত্মায় পরিবর্তন আনতে হবে। তর্জন-গর্জনের রাজনীতির দিন শেষ। সাধারণ মানুষ রাজনৈতিকদের অপকর্মে বিরক্ত হয়ে গেছে। পেশি শক্তি কখনোই রাজনীতির চিরস্থায়ী বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। আপনাকে জনগণের মন জয় করতে হবে নাকি তাদের লাঠিপেটা করতে হবে। ইতিহাস বলছে অত্যাচার, অবিচার করে কেউ চিরদিন ক্ষমতাসীন থাকতে পারে না। জনগণের মার কিšত্ম বড় ভয়ংকর।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। আগামী বছরগুলোতে রাজনীতিবিদদের ভিন্নভাবে চিšত্মা করতে হবে। রাজনীতিবিদদের এখন ইতিবাচক চিšত্মা করতে হবে কারণ নেতিবাচক চিত্মা নিয়ে এই পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে টিকে থাকা যাবে না।

শেয়ার করুন