উপকূলে ভাসমান মৃতদেহগুলো কার

0
113
Print Friendly, PDF & Email

নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় মেঘনা নদীর উপকূলীয় অঞ্চলে ভেসে উঠেছে বেশ কয়েকটি মৃতদেহ। গত শনিবার থেকেই স্থানীয়দের চোখে পড়লেও সোমবার মাত্র দুটি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। স্থানীয়দের দেয়া তথ্য মতে, এমন মৃতদেহের সংখ্যা ২০টির মতো হবে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত অজ্ঞাত পরিচয় এসব লাশ নিয়ে ঘণীভূত হচ্ছে রহস্য।

এসব মৃতদেহ সম্প্রতি মালয়েশিয়ার নিখোঁজ বিমানের যাত্রীদের হতে পারে প্রথমে এমন কথা কেউ বলেছে। এখন আবার এরা কোনো ডাকাতগোষ্ঠীর সদস্য হতে পারেন এমন ধারণা প্রবল হচ্ছে। অতিসম্প্রতি ওই এলাকায় ডাকাতদের আস্তানায় র‌্যাবের অভিযান ও বন্দুকযুদ্ধ, এরপর রক্তমাখা ট্রলার জব্দ, সর্বশেষ উদ্ধারকৃত একটি মৃতদেহ থেকে মোবাইল সিমকার্ড উদ্ধার এসব তথ্য শেষোক্ত ধারণাটিকেই প্রতিষ্ঠিত করছে।

মেঘনায় প্রায় ২০টি মৃতদেহ ভাসছে এমন খবর গতকাল রোববার প্রথম গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। তখন পুলিশ কোনো মৃতদেহ চোখে পড়েনি বলে জানায়। তবে সোমবার দুপুরে দুই স্থানে তিনটি লাশ ভেসে ওঠার খবর পেয়ে একটি স্থান থেকে দুটি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। কিন্তু এখনো মেলেনি তাদের পরিচয়। ভাসমান এসব লাশের রহস্য উদ্ঘাটনে প্রশাসন তৎপর। তবে ইতোমধ্যে স্থানীয়দের মধ্যে এ নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে হাতিয়ার সুখচর ইউনিয়নের আমানুল্যাহ গ্রামের মহিউদ্দিনের ছেলে আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি ডাকাত বাহিনী ওই ইউনিয়নেরই বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল জাগলার চর ও চরগাসিয়ায় আস্তানা গেড়েছে। তারা ওই চরগুলোর ম্যানগ্রোভ বন ধ্বংস করে জমি বের করে তা ভূমিহীন ও স্থানীয় বিত্তবানদের কাছে বিক্রি করছে। পাশাপাশি তারা নদীতে জেলেদের নৌকায় ডাকাতি ও অপহরণের মতো তাণ্ডব চালায়।

হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মো. ফজলে রাব্বী জানান, গত ১২ মার্চ দস্যু গ্রুপটি ডাকাতির প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-১১ (কুমিল্লা) এর ডিএডি শাহজাহান আলীর নেতৃত্বে র‌্যাবের একটি দল জাগলার চরে ডাকাতদের আস্তায় অভিযান চালায়। র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাতদের ১৪ থেকে ১৫ সদস্য পালিয়ে যায়। এসময় ডাকাত সরদার আলাউদ্দিনকে ২টি বন্দুক, বেশকিছু ইয়াবা ও কয়েকটি কার্তুজসহ আটক করে র‌্যাব। পর দিন ১৩ মার্চ আটককৃত ডাকাত সরদার আলাউদ্দিনকে হাতিয়া থানায় সোপর্দ করার সময় র‌্যাব হাতিয়া থানাকে এমন তথ্য জানিয়েছে। ডাকাত আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে হাতিয়া থানায় তিনটি মামলা হয়েছে।

এছাড়া তার বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ ও অস্ত্র আইনসহ বিভিন্ন থানায় প্রায় ১১টি মামলা রয়েছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।

নদীর ধারে পড়ে আছে অর্ধগলিত মৃতদেহ

এদিকে একই দিন ওই এলাকা সংলগ্ন ওয়ালী বাজারের পাশে মেঘনা নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় সৌরশক্তি চালিত একটি রক্তমাখা ট্রলার দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ট্রলারটির ব্যাপারে কোনো দায় দায়িত্ব নেইনি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ট্রলারটি ডাকাতদের বলে তাদের ধারণা। কারণ হাতিয়া উপকূলের ডাকাতদের ট্রলারে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকে। প্রশাসন স্বীকার না করলেও ১২ মার্চের অভিযানে ডাকাতদের সঙ্গে র‌্যাবের বন্দুক যুদ্ধ হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

র‌্যাবের অভিযান ও রক্তমাখা ট্রলারের ঘটনায় স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে নানা আলোচনা ও গুঞ্জন চলছে। কেউ কেউ বলছেন, ১২ মার্চ হাতিয়ার জাগলার চর ও চরগাসিয়ায় আলাউদ্দিন ডাকাতের আস্তানায় অভিযান চলকালে র‌্যাবের সঙ্গে ডাকাতদের বন্দুকযুদ্ধ হয় এবং ওই ট্রলারটি ডাকাতদেরই।

এখন ওই ঘটনাস্থলের আশপাশের এলাকায় ভাসমান লাশের সন্ধান পাওয়া গেছে। এছাড়া সোমবার যে দুটি লাশ পাওয়া গেছে সেগুলোর অবস্থা দেখে মনে হয় এ দুই ব্যক্তি ৪/৫ দিন আগে মারা গেছ্নে। অন্য যেসব লাশ স্থানীয়দের চোখে পড়েছে সেগুলোও ফুলে ফেঁপে যাওয়া এবং অর্ধগলিত।

এদিকে নদীতে ভাসমান এক লাশের সঙ্গে একটি মোবাইল ফোনের সিমকার্ড পেয়েছে স্থানীয় স্থানীয় সুখচর বোবাজারের বাসিন্দা দিদার উদ্দিন। তিনি ওই কার্ডটিতে একটি নম্বর পান। ওই সিম থেকেই নম্বরটিতে কল দেন তিনি। অপরপক্ষ থেকে ফোন রিসিভ করলে তিনি বলেন, ‘র‌্যাব তোমাদের দলের সবাইকে তো মেরে ফেলেছে। লাশ নদীর কূলে ভাসছে। তোমরা লাশ নিয়ে যাচ্ছ না কেন?’ এর পরপরই ওই প্রান্ত থেকে নম্বরটি বন্ধ করে দেয়া হয়। দিদার বাংলামেইলকে বলেন, এ ঘটনা প্রমাণ করে লাশগুলো ডাকাত সদস্যদের।

অনেকটা সেরকমই ইঙ্গিত দিয়েছেন হাতিয়া থানার ওসি সৈয়দ মো. ফজলে রাব্বী। তিনি বাংলামেইলকে বলেন, ‘উদ্ধারকৃত লাশ দুটির সার্বিক অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে এগুলো কোনো সাধারণ জেলে কিংবা মানুষের নয়। এরা জলডাকাত। তাদের শরীরে বেশ কিছু জগমের চিহ্ন দেখা গেছে। যদি তাই না হতো তাহলে লাশের খবর পেয়ে আত্মীয় স্বজনরা কেউ না কেউ ছুটে আসতো।’ লাশগুলো পাঁচ থেকে ছয়দিন আগের বলেও তার ধারণা।

কুকুরে খাচ্ছে অজ্ঞাত পরিচয় সেসব লাশ

এদিকে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা ১২ মার্চ এক ডাকাত আটকের পর বাংলামেইলসহ স্থানীয় সংবাদকর্মীদের জানান, ওই দিন র‌্যাব সদস্য ১৭ থেকে ২০ জনের মতো ডাকাতকে মেরে নদীতে ফেলে দিয়েছে। তারা এমন কথা গ্রেপ্তার হওয়া ডাকাত আলাউদ্দিনের পরিবারসহ একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে শুনেছেন।

তবে এ বিষয়ে আলাউদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

শেয়ার করুন