প্রাণ ফিরছে না দশম জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে। অধিবেশনের শেষ দিকে এসে আরো নিষ্প্রাণ হয়ে পড়েছে সংসদ। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সরকার এবং বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যদের অধিকাংশের অনুপস্থিতির কারণেই এই অবস্থা।
তাছাড়া জনগুরুত্বপূর্ণ কোনো বিল না থাকায় যুক্তিতর্ক নেই সংসদে। এ কারণে সংসদ কার্যক্রমে কোনো ‘উষ্ণতা’ নেই। নিরুত্তাপের মধ্যেই মঙ্গলবার বিকেল ৫ টায় ফের বসছে মুলতবি অধিবেশন। চলবে আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত।
গত ২৯ জানুয়ারি প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ওই দিন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিলেন, ‘দশম সংসদের কার্যক্রম হবে প্রাণবন্ত।’ তবে দিন যতই গড়াচ্ছে ততই নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ছে সংসদ।
সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশির ভাগ সময়ই সংসদে উপস্থিত থাকলেও বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ ঠিক তার বিপরীত। অধিকাংশ সময়ই তিনি সংসদে উপস্থিত থাকেন না। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদও প্রথম দু’এক দিন ছাড়া সংসদে হাজির হননি।
বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, জাতীয় পার্টি সংসদ কার্যকর করতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। ধারাবাহিকভাবে অনুপস্থিত থাকবেন না তারা। সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করবেন তারা। কিন্তু বাস্তবতা অনেকটাই উল্টো।
স্পিকারও নতুন-পুরনো সব সংসদ সদস্যকে অধিবেশনের কার্যক্রমে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তার অনুরোধ কাজে আসছে না অনেকের ক্ষেত্রেই। তাদের অনুপস্থিতির কারণে প্রতিটি কার্যদিবসে কোরাম সংকট দেখা দিচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরে শুরু করতে হচ্ছে অধিবেশন।
প্রতিদিনই কোনো-না-কোনো মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ঘুমিয়ে নিচ্ছেন অধিবেশন চলাকালেই। নিজের আসন ছেড়ে অন্য কোনো সংসদ সদস্যের কাছে গিয়ে গল্পগুজব কিম্বা আড্ডায় মশগুল থাকতেও দেখা গেছে অনেককে। সব মিলিয়ে ঢিলেঢালা ভাবেই চলছে অধিবেশন।
বিরোধী দলীয় চীফ হুইফ অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘তারা সংসদে উপস্থিতির সংখ্যা বাড়াতে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের অনুরোধ করেছেন। স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের নেতা হাজী সেলিমও যথারীতি সংসদে উপস্থিত থাকছেন। কিন্তু সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে।’
প্রধানমন্ত্রী সংসদে উপস্থিত সত্বেও কেন সরকারি দলের অধিকাংশ সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা অনুপস্থিত থাকেন -সেই প্রশ্ন তুলেছেন সংসদে বিরোধীদলের অনেক সংসদ সদস্য।
তবে তারা এও বলছেন, নবম সংসদের অধিবেশনগুলোর মত কুরুচিপূর্ণ ও অশ্রাব্য ভাষার প্রয়োগ নেই দশম সংসদে। এই সংসদে গঠনমূলক সমালোচনা আছে। আছে সরকার ও বিরোধীদলের অবস্থানসহ চমৎকার বোঝাপড়াও।