অপ্রতিরোধ্য জামায়াতকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় সরকার

0
125
Print Friendly, PDF & Email

জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে সরকার। কোনোভাবেই দলটিকে ঠেকাতে পারছে না সরকার ও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিলেও উপজেলা নির্বাচনে জামায়াত চমকের পর চমক দেখাচ্ছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকার জন্য সমালোচিত এ দলের সমর্থন পাওয়া প্রার্থীরা স্থানীয় নির্বাচনে আনুপাতিক হারে অন্য দলের চেয়ে ভালো ফল করছে। যা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে।

অনেকে মনে করছেন, ক্রমেই জামায়াত অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরামের সদস্যরা জামায়াতের চমকে দেয়া এ ফলাফলের কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না।

স্বাধীনতার প্রশ্নে বিতর্কিত এ দলটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের পরও জনসমর্থন বেড়েই চলেছে। তবে আওয়ামী লীগের একজন উপদেষ্টা জামায়াতের সুশৃঙ্খল সাংগঠনিক কাঠামোকেই এ সাফল্যের পেছনের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন।

জামায়াতের অব্যাহত সাফল্য নিয়ে আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী ফোরামের সদস্যরা চিন্তিত হলেও এখনই তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হচ্ছেন না।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি চলতি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম দফায় জামায়াতের সমর্থন পাওয়া প্রার্থীদের মধ্যে ১৩ জন উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর ২০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন। ওইদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, দেশের মানুষ কেন জামায়াতকে ভোট দেয় বুঝতে পারছি না। তবে গবেষণা না করে এ ব্যাপারে এর চাইতে বেশি কিছু বলতে পারবো না।

এদিকে আজ সোমবার রংপুরের পীরগঞ্জের ফতেপুরে পৈত্রিক বাড়ি জয়সদনে এক কর্মী সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। ওই সভায় তিনি জামায়াতের সমর্থন পাওয়া প্রার্থীরা উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কর্মী সম্মেলনে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, বিভিন্ন উপজেলায় জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীদের জয় অত্যন্ত লজ্জার। তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘জামায়াত কীভাবে এ নির্বাচনে অংশ নেয়, তারা তো আইনগতভাবে নিষিদ্ধ।’

গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনে জামায়াতের সমর্থন নিয়ে ৮ জন উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৫ মার্চ তৃতীয় দফায়ও এ দলটির সমর্থন নিয়ে আরো ৮ জন উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। প্রথম দফায় নির্বাচনের পর বিএনপি ও জামায়াতকে ঠেকাতে সরকার সমর্থকরা সব ধরনের চেষ্টা করেছে বলে বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।

বিএনপির নেতারা বলেছেন, সরকার জয় নিজেদের ঘরে তুলতে ফ্যাসিবাদী শক্তি প্রয়োগ করেছে। ভোটারদের সরকার সমর্থক ক্যাডাররা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেয়নি।

তৃতীয় দফা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জনসম্মুখে ব্যালট ছিনতাই, ভোট জালিয়াতি ও সংঘর্ষের ঘটনার পরও নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার দাবি করায় নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নির্লজ্জ, বেহায়া ও সরকারের আজ্ঞাবহ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।

১৬ মার্চ তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ মন্তব্য করেন। সে সময় তিনি ইসির বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন।

অপরদিকে প্রশাসনকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে সরকার দলীয় ক্যাডাররা ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, জালভোট প্রদান, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ করেছেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান। ১৫ মার্চ নির্বাচনের পর গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ অভিযোগ করেন।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, নির্বাচনের ফলাফল নিজের ঘরে নিতে সরকার দলীয় ক্যাডাররা নারকীয় তা-ব চালিয়েছে। ভোটগ্রহণ শুরুর পরপরই আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন উপজেলার অধিকাংশ ভোটকেন্দ্র দখল করে নেয়। জামায়াত ও ১৯ দলীয় জোট সমর্থিত প্রার্থীর এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। কোথাও কোথাও বোমা ফাটিয়ে গুলি চালিয়ে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে ক্যাডাররা।

সরকারের বিভিন্ন বাধার মুখেও জামায়াত সমর্থিত প্রাথীদের নির্বাচিত করায় তিনি দেশবাসীকে ধন্যবাদও জানান।

তবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করেনি বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ। তিনি বলেন, তৃতীয় ধাপে বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকায় আমাদের প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। আজ সোমবার ১৭ মার্চ সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়েছে। প্রথম দুটি ধাপে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় আমাদের সমর্থিত কম প্রার্থী বিজয়ী হয়েছে। এবার আমরা তা থেকে বেরিয়ে এসে জয় পেয়েছি। আশা করছি বাকি ধাপগুলোতে আমরাই জয়ী হবো।

জামায়াতকে ইঙ্গিত করে তোফায়েল বলেন, ‘১৯৭১ সালে যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনি তারাই এখন বিএনপির নেতৃত্বে ষড়যন্ত্র করছে।’

শেয়ার করুন