ফেঁসে যাচ্ছেন বিএনপির আরও পাঁচ শীর্ষ নেতা

0
78
Print Friendly, PDF & Email

দুর্নীতির অভিযোগে ফেঁসে যাচ্ছেন বিএনপির আরও পাঁচ নেতা। অর্থ পাচারের অভিযোগে গত মাসে মামলা হয়েছে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে। এ মামলায় তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো করেছে। একই ধরনের অভিযোগে ফেঁসে যাচ্ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী শাজাহান ওমর ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আলী আসগর লবী। তাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার সংক্রান্ত অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুদক। সূত্র জানায়, ওই নেতারা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মন্ত্রী ও এমপি থাকাকালে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থসম্পদ অর্জন করেন। ২০০৬ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময় তারা বিদেশে টাকা পাচার করেন। পাচার করা টাকায় প্রায় সবাই লন্ডন, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় বাড়ি কিনেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ অনুযায়ী, ওই পাঁচ বছরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ বিএনপি নেতারা ও তাদের স্ত্রী-সন্তানরা অন্তত ২০০ কোটি টাকা পাচার করেছেন। এজন্য তাদের স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে খন্দকার মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী বিলকিস আক্তার হোসেন, দুই ছেলে মাহবুব হোসেন ও মারুফ হোসেন, এম মোরশেদ খানের ছেলে ফয়সাল মোরশেদ খান, ইকবাল হাসান মাহমুদের স্ত্রী রোমানা মাহমুদ ও তাদের ছেলে আবেদ হাসান মাহমুদ, আলী আসগর লবীর দুই ছেলে সাকিব আসগর ও ফয়সল আসগরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করা হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে। অর্থ পাচারের অভিযোগে এরই মধ্যে বিএনপি নেতা ড. খন্দকার মোশাররফকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে দুদক কমিশনার (তদন্ত) মোঃ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু কারও নাম উল্লেখ না করে আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। ওই সময়ের সংসদ সদস্য যারা বিভিন্ন সময় মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, এমন পাঁচজনের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ দুদকের হাতে রয়েছে। তথ্যপ্রমাণগুলো এখন যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যাচাই শেষে আইনানুগ পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সূত্র জানায়, বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী-এমপি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা বিদেশে অর্থ পাচার করে সেসব দেশে বাড়ি কিনেছেন_ এমন অভিযোগ ২০১১ সালে দুদকে আসে। এর মধ্যে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্তের বর্ণনা রয়েছে, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নেয়। অনুসন্ধানের জন্য দুদকের চারজন চৌকস কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয় কমিশন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হলেন_ দুদকের উপপরিচালক হারুনুর রশীদ, শাহীন আরা মমতাজ, এসএম সাহিদুর রহমান ও মোঃ মোনায়েম হোসেন। দায়িত্ব পেয়ে তারা সংশ্লিষ্টদের নামে বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্যবিবরণী সংগ্রহ করেন। এতে বৈদেশিক লেনদেন বিবরণীও সংগ্রহ করা হয়। ওইসব তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। এর মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে নোটিশ দিলে তিনি হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট নোটিশের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। তবে অনুসন্ধান কাজের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় দুদক কর্মকর্তা অনুসন্ধান কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অনুসন্ধানে এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ২০১০ সালে যুক্তরাজ্যের লন্ডন শহরের ১৫ হান্টিংটন এলাকার কেন্ট ডিএফাইভের টুএফডি অ্যাপার্টমেন্টটি কিনেছেন। তিনি ওই বছর মার্চের ৫ তারিখে এইচএসবিসি ব্যাংকের মাধ্যমে অ্যাপার্টমেন্টটির জন্য ব্রিটিশ মুদ্রা পাউন্ড পাঠান। অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য ৩ লাখ ৬০ হাজার পাউন্ড, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা। ২০০৮ সালে এম মোরশেদ খান যুক্তরাষ্ট্রে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার করেন। এম মোরশেদ খানের ছেলে ফয়সাল মোরশেদও অর্থ পাচার করেছেন বলে তথ্য পেয়েছে দুদক। দুদকের অনুসন্ধানে অর্থ পাচারের তালিকায় আলী আসগর লবীর দুই ছেলে সাকিব আসগর ও ফয়সল আসগর এবং ইকবাল হাসান মাহমুদের স্ত্রী রোমানা মাহমুদ, ছেলে আবেদ হাসান মাহমুদেরও নাম রয়েছে। দুদক কর্মকর্তারা জানান, সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি পাচার হওয়া টাকা বিদেশি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা ও উত্তোলনের দালিলিক তথ্যপ্রমাণ উদ্ধার করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিদেশে কেনা বাড়ি ও ফ্ল্যাটের কাগজপত্রের কিছু কিছু কপিও সংগ্রহ করা হয়েছে। এদিকে প্রায় ১০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করার অভিযোগে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর রমনা থানায় মামলা দায়ের করে দুদক। এজাহারে বলা হয়, খন্দকার মোশাররফ ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ৯ কোটি ৫৩ লাখ ৯৪ হাজার ৩৮১ টাকা যুক্তরাজ্যে পাচার করেছেন। এ মামলায় বুধবার রাতে গুলশানের নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে দুদক। পরে তাকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।

শেয়ার করুন