উপজেলা নির্বাচনে আরো প্রকট হয়েছে জাপা’র দৈন্যদশা

0
129
Print Friendly, PDF & Email

সংসদে প্রধান বিরোধী দল আবার সরকারের মন্ত্রিসভায়ও সরব উপস্থিতি জাতীয় পার্টির (জাপা)। অথচ চলমান উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম তিনটি দফাতেই অত্যন্ত লজ্জাজনকভাবে হেরেছে দলটি।

৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ‘বিতর্কিত’ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাত্র ৩৪টি সংসদীয় আসনে জয়লাভ করেও দেশের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে সংসদে আসীন হয় জাপা। দেশের অন্যতম প্রধান ও বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি তার জোট গত নির্াযচন বর্জন করে। আর এই সুযোগটি কাজে লাগায় সামরিক শাসনের মধ্যদিয়ে জন্ম নেয়া জাতীয় পার্টি। তবে ‘বিতর্কিত’ এই নির্বাচন ঘিরে দলের চেয়ারম্যান ও সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদের নানা ‘নাটকীয়তা’ সবচেয়ে ক্ষতি করেছে দলের। জাতীয় পার্টি উপজেলাব্যবস্থার প্রবর্তক হলেও উপজেলা নির্বাচনে দলটি শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে। প্রথম দুই দফায় একটি করে চেয়ারম্যান পদ পেলেও তৃতীয় দফায় শূন্য। এতে দলটির আভ্যন্তরীণ ভঙ্গুর ও দৈন্যদশা আরো প্রকট হয়েছে।

প্রথম তিন দফায় মোট ২৯১টি চেয়ারম্যান পদে জাতীয় পার্টি জয়লাভ করেছে মাত্র দুটি চেয়ারম্যান পদে এবং সংরক্ষিত নারী আসনসহ মোট ৫৮২টি ভাইস চেয়ারম্যান পদের মধ্যে জাতীয় পার্টির মাত্র ১২ জন প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

এর মধ্যে গত শনিবার অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া তৃতীয় দফার উপজেলা নির্বাচনে দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টির একজন প্রার্থীও জিততে পারেননি কোনো পদেই। অথচ বিভিন্ন আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন যেমন পার্বত্য চট্টগ্রামের জন সংহতি সমিতি (জেএসএস)-ও উপজেলা নির্বাচনে প্রত্যাশার চাইতে ভালো ফলাফল করেছে। শুধু তাই নয়, জাতীয় পার্টি সারা দেশ থেকে উপজেলা নির্বাচনে দাঁড়ালেও জনসংহতি সমিতি শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের মধ্যে নির্বাচনে দাঁড়িয়েও জাতীয় পার্টির চাইতে ফলাফলে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। জাপা’র প্রার্থীরা যতগুলো উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন, তার চাইতে বেশিসংখ্যক উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হয়েছেন জেএসএস প্রার্থীরা।

তিন দফার উপজেলা নির্বাচনে জেএসএস ছয়টি চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেছে। অথচ যে উপজেলাগুলো একসময়ে জাপা’র ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল সেই রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও লালমনিরহাটেও রীতিমতো ভরাডুবি হয়েছে জাপার।

তিন দফার উপজেলা নির্বাচনে কুড়িগ্রামের নয়টি উপজেলার সবগুলোতেই চেয়ারম্যান পদে লড়াই করেছেন জাপা মনোনীত প্রার্থীরা, কিন্তু কোনোটিতেই জয়লাভ করতে পারেননি। এমনকি উপজেলাগুলোর ১৮টি ভাইস চেয়ারম্যান পদের মধ্যে ১১টিতে জাপা নিজ প্রার্থীদের দাঁড় করালেও এগুলোতেও জেতেননি একজনও।

জাপার চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বাড়ি হওয়ায় দলটির ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত রংপুরের চারটি উপজেলাতেও নির্বাচনে গো-হারা হেরেছে দলটি। অবশ্য এর মধ্যে দুটি উপজেলায় সংরক্ষিত নারী আসনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেছেন দুজন জাপা প্রার্থী।

জাপা’র বেশ কয়েকজন নেতা উপজেলা নির্বাচনে তাদের দলীয় প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে দলটির বিতর্কিত ভূমিকাকে। দলীয় প্রধান হিসেবে এরশাদ বিতর্কিত ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন কি করবেন না- তা নিয়ে ক্রমাগত যেভাবে নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে ‘নাটক’ করেছেন তাতে দলের গ্রহণযোগ্যতা ও ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে বলে মনে করেন এই নেতারা। শুধু তাই নয়, দলীয় প্রধানের এমন ভূমিকার কারণে জাপা’র অনেক স্থানীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থক আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন বলে জানান দলটির বেশ কয়েকজন নেতা। এমনকি জাপা’র কয়েকজন কর্মী অর্থ ও অন্যান্য লাভের প্রতিশ্রুতি পেয়ে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের হয়ে কাজ করেছেন বলেও জানা গেছে।

এছাড়াও, জাপা’র প্রার্থীদের হারের পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে সাংগঠনিক দুর্বলতাকেও দায়ী করেছেন অনেকে। প্রধান বিরোধী দল জাপা’র সংসদীয় দলের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মশি বলেন, “দলের দ্বৈত ভূমিকার জন্য কেন্দ্রীয় নেতারা দায়ী। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে দলীয় নেতা-কর্মীদের সঠিক দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়নি। এই অবস্থাকে সতর্কবার্তা হিসেবে ধরে নিয়ে এখনই আমাদের সঠিক পথে হাঁটতে হবে। দলের এখন যা অবস্থা, তাতে আমাদের কাছে দুটি পথ খোলা আছে- হয় টিকে থাকা, না-হয় অস্তিস্ত্ব বিলীন করে দেয়া। তবে আমরা আশা করি এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারবো আমরা।”

শেয়ার করুন