বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সভা : কুইক রেন্টালের মাধ্যমে জনগণের সম্পদ লুট করার ব্যবস্থা করা হয়েছে : রফিকুল ইসলাম মিয়া

0
201
Print Friendly, PDF & Email

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেছেন, রেন্টাল-কুইক রেন্টালের নামে সরকার জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করছে। তিনি বলেন, জনগণের সম্পদকে লুটপাট করার ব্যবস্থা করা হয়েছে রেন্টাল-কুইক রেন্টালের মাধ্যমে।
গতকাল শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সভাপতি ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর আ ফ ম ইউসূফ হায়দার, চলচ্চিত্র পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ, সাবেক বিদ্যুত্ সচিব প্রকৌশলী আ ন ম আকতার হোসাইন, প্রফেসর সাব্বির মোস্তফা, প্রকৌশলী আতাউল মাসুদ, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু ও জাকির হোসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন পরিষদের সদস্য সচিব ডাক্তার এ. জেড. এম. জাহিদ হোসেন।
ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, “সংবিধানের ৬২ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই সরকার কোনোভাবেই বৈধ নয়। দুর্নীতি আড়াল করার জন্য অবৈধভাবে জোর করে তারা ক্ষমতায় বসেছে। যতই মামলা-হামলা হোক জনগণ সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেই।”
গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৫৩টি আসনে কোনো নির্বাচন হয়নি। তারা সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের নিয়ে কীভাবে সংসদ হয় প্রশ্ন ছোড়েন তিনি। তিনি বলেন, এ নিয়ে চ্যালেঞ্জ করে রিট হলে হাইকোর্ট রুল দেন।
বিএনপির এ নেতা বলেন, ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সংসদের মেয়াদ ছিল। বেগম খালেদা জিয়া ওই সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন। কিন্তু ওই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে রওশন এরশাদকে বিরোধী দলীয় নেত্রী বানিয়ে সংবিধান লঙ্ঘন করা হয়েছে।
রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহিতা মামলা করতে গেলে সরকারের অনুমতি লাগে। এখন প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রদ্রোহিতা করলে মামলার অনুমতি কি তিনি দেবেন? তিনি বলেন, আমি জীবনে কোনোদিন একটি ঢিলও মারিনি। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে গাড়ি ভাংচুরের মামলা দেয়া হয়েছে। যে কোনো লোককে ধরে নিয়ে মামলা দেয়া হচ্ছে।
বিদ্যুত্ খাতকে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বিদ্যুত্ সেক্টরকে পরিপূর্ণভাবে লুণ্ঠনের সেক্টরে পরিণত করা হয়েছে। টেন্ডার ছাড়া বিদ্যুত্ সেক্টরের কাজ কীভাবে হয় প্রশ্ন ছোড়েন তিনি।
রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জনগণের টাকা লুট করে দলীয় লোকদের দেয়া হচ্ছে। সংসদে এজন্য আইন করা হয়েছে এ বিষয়ে আদালতেও যাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, এখানে কোনো জবাবদিহিতা নেই। আইনের শাসনে বিশ্বাসী সমাজে এটা হতে পারে না।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, সাগর-রুনি বিদ্যুত্ ও গ্যাস সেক্টর নিয়ে কাজ করত। সরকারের বিদ্যুত্ ও গ্যাসের দুর্নীতির রেকর্ড ছিল সাগর-রুনির কাছে। এগুলো উদ্ধারের জন্যই সাগর-রুনিকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের গ্রেফতার করতে হবে।
তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে একটি অবৈধ সরকার দেশ চালাচ্ছে। গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে কোনো নির্বাচন হয়নি। মাত্র ২ থেকে ৫ পার্সেন্ট লোক ভোট দিয়েছে। ৪৯টি ভোট কেন্দ্রে কেউ ভোটই দেয়নি। এমনকি আওয়ামী লীগের লোকও ভোট কেন্দ্রে যায়নি। তিনি বলেন, জনবিচ্ছিন্ন সরকার এখন জোরে জোরে কথা বলে। কথায় আছে চোরের মার বড় গলা।
রুহুল আমিন গাজী বলেন, বিএনপির আন্দোলন কখনো ব্যর্থ হয়নি। বিএনপির সফলতা এখানেই আওয়ামী লীগের মতো একটি দলকে জনবিচ্ছিন্ন করতে পেরেছে। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে আজ উন্নয়ন কাজ নেই। প্রতিটি কাজেই চুরি হচ্ছে। জনগণ স্বাভাবিক চলাচল করতে পারছে না। সরকারের এদিকে নজর নেই।
আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারকে হটিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সভায় সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, সংসদে আইন করে সুকৌশলে টেন্ডার প্রথা উঠিয়ে দিয়েছে সরকার। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে মন্ত্রণালয় যাকে ইচ্ছে তাকে যেন কাজ দিতে পারে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে লুটপাট করা।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা গত ৫ বছর বিদ্যুত্ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। কারণ এটা লাভজনক খাত। তিনি বলেন, কুইক রেন্টালের মাধ্যমে সরকার কুইক মানি কামাই করছে। বেনামে অনেক আওয়ামী লীগ নেতার নাম বিদ্যুত্ প্রজেক্টে আছে।
মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, সিস্টেম লস, দুর্নীতি ও চুরি বন্ধ না হলে বিদ্যুত্ খাতে উন্নয়ন হবে না। সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এর মাশুল সরকারকে দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধ করেছিলাম গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য কিন্তু আজ আমরা কি দেখছি। বিদ্যুতের দাম কমানোর জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
সভায় চাষী নজরুল ইসলাম বলেন, বিএনপি শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আন্দোলন করলে চলবে না। বিদ্যুত্ ইস্যুতে আন্দোলনের কর্মসূচি দিতে হবে। তিনি এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

শেয়ার করুন