যেকোনো সময় ব্যাংকের স্বতন্ত্র বেতনকাঠামো

0
133
Print Friendly, PDF & Email

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য স্বতন্ত্র বেতনকাঠামো করতে কোনো আইনি বাধা নেই। আর রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের জন্য অভিন্ন বেতনকাঠামোও এখনই করা সম্ভব।

অর্থাৎ চার ব্যাংকের অভিন্ন বেতনকাঠামোর জন্য আর কোনো জটিলতা তো নেই-ই, কেন্দ্রীয় ব্যাংকেরটির জন্যও কোনো সমস্যা নেই।

আইন মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি স্বতন্ত্র বেতনকাঠামোর ব্যাপারে ইতিবাচক মতামত দেওয়ার পরই উভয় বেতনকাঠামোর প্রজ্ঞাপন জারির ব্যাপারে কাজ শুরু করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মৌখিক সম্মতি নিয়ে এখন যেকোনো দিনই জারি হয়ে যাবে প্রজ্ঞাপন। অল্প দিন দেরি হতে পারে শুধু প্রক্রিয়াগত কারণে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনুবিভাগের সঙ্গে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, অর্থ বিভাগের বাস্তবায়ন অনুবিভাগ এখন কাজ করছে মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেতনকাঠামোটির জন্য। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার, ১৯৭২ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশনস, ২০০৩ অনুযায়ী স্বতন্ত্র বেতনকাঠামোর একটি প্রস্তাব তৈরি করে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদে পাঠানো হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্ষদ অনুমোদন দিলে তা ফেরত আসবে অর্থ বিভাগে। অর্থ বিভাগ তখন শুধু প্রজ্ঞাপন জারির জন্য অর্থমন্ত্রীর মৌখিক সম্মতি চাইবে।

চাকরি (পুনর্গঠন ও শর্তাবলি) আইন, ১৯৭৫-এর ৫ নম্বর ধারার ক্ষমতাবলে সরকার বেতনকাঠামোর আদেশ জারি করে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ঠিক আগের মাস গত ডিসেম্বরে দেশে ছিল নির্বাচনকালীন সরকার।

বাস্তবায়ন অনুবিভাগ থেকে তখন বলা হয়েছিল, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। এই সময়ে কারও বেতন বাড়ানো যাবে না। স্বতন্ত্র বেতনকাঠামো করতে গেলে বিদ্যমান চাকরি (পুনর্গঠন ও শর্তাবলি) আইনের সংশোধন করতে হবে। আর যেকোনো আইনেরই সংশোধনের এখতিয়ার রাখে জাতীয় সংসদ। তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব (বাস্তবায়ন অনুবিভাগ) ছিলেন ইমদাদুল হক।

সম্প্রতি এই অনুবিভাগের দায়িত্বে এসেছেন আরেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আলী। এক সপ্তাহ ধরে তিনি বিদেশে রয়েছেন। আজ রোববার তাঁর দেশে ফেরার কথা। তার পরই মোহাম্মদ আলী বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদে পাঠানোর জন্য খসড়া তৈরিতে হাত দেবেন বলে জানা গেছে। অর্থসচিব ফজলে কবিরের সঙ্গে কাল সোমবার তিনি বৈঠকও করবেন এ বিষয়ে।

এদিকে চার ব্যাংকের অভিন্ন বেতনকাঠামোর বিষয়টি আগেই সিদ্ধান্ত হয়ে আছে বলে জানান ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা। তাঁদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগে চার ব্যাংকের অভিন্ন বেতনকাঠামো হয়ে গেলে বিষয়টি ভালো দেখায় না। তাই একটু অপেক্ষা করতে হচ্ছে। জানা গেছে, আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত অর্থমন্ত্রীকে জানানো হলে কাজটি দ্রুত করার তাগিদ দেন তিনি।

সূত্র জানায়, এ ব্যাপারে কয়েক বছর আগের আইনসচিব হাবিবুল আউয়ালের একটি মতামতকে আমলে নেওয়া হচ্ছে। হাবিবুল আউয়াল এ বিষয়েই তখন অর্থ বিভাগকে এক চিঠিতে জানিয়েছিলেন, ‘লিমিটেড কোম্পানি হয়ে যাওয়ায় সোনালী, অগ্রণী ও জনতা ব্যাংকের ক্ষেত্রে আর “ব্যাংক” শব্দটি প্রযোজ্য থাকবে না। সুতরাং বেতনকাঠামোর ব্যাপারে নিজেদের পর্ষদেই তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’

জাতীয় বেতনকাঠামো অনুযায়ী বর্তমানে ২০টি গ্রেড থাকলেও নতুন কাঠামোতে ভেঙে তা করা হবে ১১টি গ্রেড। এতে বর্তমানের তুলনায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বেতন-ভাতা বাড়বে।

সর্বনিম্ন গ্রেডে মূল বেতন হবে ছয় হাজার টাকা ও সর্বোচ্চ গ্রেডে হবে ৫৫ হাজার টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ চার ব্যাংকে বর্তমানে ৬১ হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে সরকার নতুন চাকরি ও বেতন কমিশন গঠন করেছে। এই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে হবে নতুন জাতীয় বেতনকাঠামো। সেই কাঠামোর সঙ্গে মিলিয়ে ব্যাংকের স্বতন্ত্র কাঠামো করা হতে পারে বলে অনেকের শঙ্কা। সেই শঙ্কার কোনো কারণ নেই বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলম এ ব্যাপারে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ চার ব্যাংকের আলাদা বেতনকাঠামোর প্রজ্ঞাপন জারি এখন শুধু সময়ের ব্যাপার।’

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কেউই অবশ্য স্পষ্ট করে জানাতে পারেননি যে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদে পাঠানোর আগে বা পরে বিষয়টি মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করতে হবে কি না।

শেয়ার করুন