উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপেও সরকারদলীয় লোকজন ভোটকেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপারে সিল মারার মহোৎসব হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির দাবি, ভোটের দায়িত্বে থাকা নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ কাজে সরকারদলীয় লোকদের সহায়তা করেছে।
গতকাল শনিবার তিন দফায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এসব অভিযোগ করে ওই দাবি করেন।
সকালের সংবাদ সম্মেলনে রিজভী উপজেলা নির্বাচন চলাকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) বিদেশে ছুটিতে যাওয়াকে ‘দুরভিসন্ধি’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘সিইসি অন্য কোনো সময়ে বিদেশে সভা-সেমিনারে যেতে পারেন। কিন্তু উপজেলার মতো গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের সময় কমিশন পরিবারের যিনি প্রধান (সিইসি), তিনি নির্দ্বিধায় বাইরে হাওয়া খেয়ে বেড়াবেন, ছুটি কাটাবেন—এর মধ্য দিয়ে কমিশন যে সরকারের দুরভিসন্ধির অনুকূলে—তা প্রমাণ হয়।’
এ সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নজরুল ইসলাম খান বলেন, পুলিশ, র্যাব ও নির্বাচন কমিশন যেভাবে দলীয়করণ হয়েছে; তাদের ওপর নির্ভর করে সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায় না। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আছে। কিন্তু কার্যত তাদের কোনো ভূমিকা নেই। কারণ, তাদের কোনো ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। বেলা সাড়ে ১১টা, একটা ও বিকেল সাড়ে চারটা—তিন দফা সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী ফেনীর দাগনভূঞা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চৌদ্দগ্রাম, বরিশালের মুলাদি, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, নড়াইল, ময়মনসিংহ দক্ষিণ, চুয়াডাঙ্গা, নেত্রকোনা, সীতাকুণ্ড, জামালপুরসহ বিভিন্ন উপজেলায় নির্বাচনে সরকার-সমর্থকদের সহিংসতা, বিরোধী দল-সমর্থক প্রার্থীদের এজেন্টদের বের করে দিয়ে কেন্দ্র দখল করা, জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ করেন।
রিজভী দাবি করেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জনসংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের পরিবর্তে এখন ডাকাত দলের সংগঠনে পরিণত হয়েছে।
রিজভী অভিযোগ করেন, চৌদ্দগ্রামে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের নেতৃত্বে জাল ভোটের মহোৎসব চলেছে। এর ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিকদের বাধা দেওয়া হয়েছে। বাগেরহাটের শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামানের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা প্রায় সব ভোটকেন্দ্র দখল করে নিয়েছে। সিরাজ নামের একজনকে কুপিয়ে তাঁর দুই হাত-পা ভেঙে দিয়েছে এবং চোখ উঠিয়ে নিয়েছে। বরিশালের মুলাদি উপজেলায় সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের হামলায় রফিক, নিজাম নামে ছাত্রদলের দুই কর্মীসহ ১০-১২ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। দাগনভূঞার ৬২টি কেন্দ্রের ৫৯টি দখল করে নিয়েছে সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা। তিনি বলেন, তাদের (বর্তমান সরকার) অধীনে সংসদ নির্বাচন যে কত ভয়ংকর হতো, তা এ নির্বাচনে আবার প্রমাণ হয়েছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ক্ষমতার জোরে দখলবাজ আওয়ামী লীগ সরকার এখন দেউলিয়াত্বের শেষ সীমায় পৌঁছেছে। জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়ে অজানা আতঙ্কে সন্ত্রাস আর গুন্ডামির ওপর ভর করে দেশ চালাচ্ছে। সুতরাং এরা কখনোই সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করবে না।