রেলে ৪০ প্রকল্পের মধ্যে বাস্তবায়ন মাত্র ১টি

0
106
Print Friendly, PDF & Email

বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়নে সরকার গত ৫ বছরে ৪০ টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে। তার মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ১টি। অধিকাংশেরই বাস্তবায়নের মেয়াদ ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে। তাই এগুলো আদৌ বাস্তবায়ন হবে কী না তা নিয়ে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে।

রেলওয়ে সূত্র বলছে, প্রয়োজনীয় বিদেশি বিনোয়োগ না পাওয়া এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একই ব্যক্তি একাধিক প্রকল্প দেখাশোনার দায়িত্ব থাকার কারণে বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা দিয়েছে।

নথিপত্র থেকে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত হাতে নেওয়া প্রকল্পগুলোর মধ্যে ২০টি প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি। বাকি ১৯টি প্রকল্পের কাজ কবে শেষ হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছে না সরকারি সেবামূলক এ সংস্থাটি।

গত বছরে নেওয়া প্রকল্পগুলো যেখানে বাস্তবায়ন হয়নি সেখানে নতুন আরও প্রকল্প হাতে নিয়েছে রেলওয়ে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক তাফাজ্জল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, উন্নয়নের জন্যই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আগের প্রকল্পগুলোর কাজ যে থেমে গেছে তা নয়। কিছু সমস্যার কারণে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে একটু দেরি হচ্ছে। আমরা সেসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, জনবলের অভাবে বর্তমানে রেলওয়ের ৪৪টি প্রকল্প কাজ তদারকি করছেন মাত্র ৮ জন কর্মকর্তা। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দেখাশোনার কাজ দেওয়া হয়।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৪০ প্রকল্পের মধ্যে আটটির অনুমোদন দেয়া হয় ২০০৯ সালে। এরমধ্যে ২০১০ সালে ১৭টি, ২০১১ সালে নয়টি, ২০১২ সালে চারটি, ২০১৩ সালে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। এছাড়া চলতি বছরে একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়। এসব প্রকল্পের মধ্যে শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধু সেতুর উভয় প্রান্তে লোড মনিটরিং ডিভাইস স্থাপনের কাজ গতবছর সম্পন্ন হয়েছে।

বাকি প্রকল্পগুলোর কাজ ১০ থেকে ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।

এর বাইরে বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় নেয়া রেলওয়ের ১১ প্রকল্পের মধ্যে এ পর্যন্ত শেষ হয়েছে ছয়টি। বাকি ৫টি প্রকল্প এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ৩৮টি প্রকল্পকে ইতিমধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিহ্নিত করেছে রেলওয়ে। যেগুলোর বাস্তবায়নের গতি বাড়াতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করা হয়েছে। বন্দর ও বাণিজ্যিক নগরীর সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য ডাবল লাইন বাস্তবায়নের দিকে জোর দিচ্ছে রেলওয়ে।

২ হাজার ৩৬ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সিগনালিংসহ টঙ্গী হতে ভৈরব বাজার পর্যন্ত ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদিত হয় ২০১১ সালের জুন মাসে। ওই বছরের নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের অক্টোবর। গত তিনবছরে এ প্রকল্পের কাজ প্রায় ৪০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।

এছাড়া দর্শনা-ইশ্বরদী-সিরাজগঞ্জ স্টেশনের বিভিন্ন ইয়ার্ড পুনর্বাসন এবং লুপ লাইন বর্ধিতকরণ, দর্শনা-‌ঈশ্বরদী সেকশনের ১১টি স্টেশনের সিগনালিং ব্যবস্থার মানোন্নয়ন, এডিবি’র সেকেন্ড পিএফআর-এর আওতায় বাংলাদেশ রেলওয়ের সেক্টর উন্নয়ন প্রকল্পের সুপারভিশন পরামর্শক সেবা প্রকল্পকে রেলওয়ে অগ্রাধিকার দিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলেও প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা কম।

এ ছাড়া ২০০৯ সালে হাতে নেওয়া প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রেলওয়ের পার্বতীপুর-কাঞ্চন-পঞ্চগড় এবং কাঞ্চন-বিরল মিটারগেজ সেকশনকে ডুয়েল গেজে এবং বিরল ও বিরল বর্ডার সেকশনকে ব্রডগেজে রূপান্তরিতকরণ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। গত বছরের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও বাস্তবায়নে আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ৭৫ শতাংশ।

রেল মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা বলছে, রেলের উন্নয়নে বেশ কয়েকটি প্রকল্প নেয়া হলেও বাস্তবায়নে অদক্ষতা ও কয়েক ক্ষেত্রে অক্ষমতার কারণে গতি আনা যাচ্ছে না।

শেয়ার করুন