ক্রিকেটের এ বিশ্ব আসরের মাত্র নয় দিন বাকি থাকলেও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর দুই পাশের ফুটপাত হকারদের দখলে। গত বিশ্বকাপের সময় সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য তৈরি ভাস্কর্যগুলোও বেহাল।সংস্কার কাজ শুরু হলেও বেহাল দশা কাটেনি গুরুত্বপূর্ণ সব সড়কের।
এবারের আয়োজনে ৩০ মার্চ পর্যন্ত চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মোট ১৫টি খেলা অনুষ্ঠিত হবে।
এ পরিস্থিতিতে নিজস্ব অর্থায়নে নির্ধারিত সড়কে কার্পেটিং এবং গত বিশ্বকাপের সময় তৈরি স্থাপনা ও ভাস্কর্যগুলো মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। তবে শেষবেলায়ও ‘কিছু’ বরাদ্দ পাওয়ার আশায় আছেন মেয়র মোহাম্মদ মনজুর আলম।
আগামী ১৬ মার্চ থেকে শুরু হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ডিও লেটার (উপ-আনুষ্ঠানিক পত্র) পাঠিয়ে মন্ত্রণালয়ের কাছে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিলেন বলে জানান তিনি।
“এখন পর্যন্ত কিছুই পাইনি। তবে বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আশাকরি বরাদ্দ পাব,” বলেন মেয়র।
বরাদ্দ না পেলেও কাজ হবে জানিয়ে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব বাজেটে প্রতিবছর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তহবিল থাকে। সেই খাত থেকে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
২০১১ সালের মার্চে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট উপলক্ষে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় ৭৭ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।
ওই প্রকল্পের অধীনে নগরীতে বিভিন্ন নতুন সড়ক নির্মাণ, সড়ক সম্প্রসারণ, ভাস্কর্য ও ফোয়ারা স্থাপনসহ অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ করা হয়।
নগরীর সৌন্দর্য বাড়াতে টাইগার পাস মোড়ে বড় আকারের একটি এবং কাছেই মূল সড়কের দুই পাশে বাটালি হিল ও রেলওয়ে পাহাড়ের নিচে আরো দুটি বাঘের ভাস্কর্য স্থাপন করে সিসিসি।
নগরীর নিমতলা বিশ্বরোড মোড়ে স্থাপন করা হয় বাংলাদেশ দলের ১১ খেলোয়াড়ের ভাস্কর্য। নগরীর কয়েকটি মোড়ে বসানো হয় ফোয়ারা।
তখন এসব ভাস্কর্য নগরবাসীর দৃষ্টি কাড়লেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিবর্ণ হতে শুরু করে ভাস্কর্য ও স্থাপনাগুলো।
গত বছরের ১৪ জুলাই রাতে টাইগার পাস মোড়ে স্থাপিত সবচেয়ে বড় বাঘটির পেছনের পা ও শরীরের বিভিন্ন অংশ ভেঙে দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে তা সংস্কার করা হয়।
চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি রাতে টাইগার পাসে পাহাড়ের কোলে বসানো রয়েল বেঙ্গল টাইগার ভাস্কর্যের মুখে আগুন দেয় একদল দুর্বৃত্ত। আগুনে ভাস্কর্যের ‘মুখের’ অংশ কালচে হয়ে যায়।
নিমতলা বিশ্বরোড মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, খেলোয়াড়দের ভাস্কর্যগুলোর বেশিরভাগেরই রঙ চড়ে গেছে। ব্যাটসম্যানের হাতে থাকা ব্যাটও হয়ে গেছে উধাও।
এগুলোর বেহাল দশার জন্য সিটি কর্পোরেশনকেই দায়ী করছেন নগর বিশেষজ্ঞ ও স্থানীয়রা।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার বলেন, ২০১১ সালে অনেক টাকা খরচ করে নগরীর অবকাঠামো নির্মাণ ও সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়।
“সব সময় বিপুল অর্থ বরাদ্দ হয়ত মিলবে না। কিন্তু কিছুটা সচেতন হলেই সিসিসি আগের অবকাঠামো ও স্থাপনাগুলো যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারত।”
অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গে একই কথা বলেন বিশ্ব রোড মোড় এলাকার বাসিন্দা আরাফাত হোসেন।
তিনি বলেন, “বানানোর পর থেকে সিটি করপোরেশনের কোনো নজর নেই। কারা ব্যাট ভেঙে নিয়ে গেছে? ভাস্কর্যে খেলোয়াড়দের শরীরের সিমেন্টও উঠে যাচ্ছে। এটাতো জাতীয় সম্মানের বিষয়।”
পুরনো ভাস্কর্য ও ফোয়ারা সংস্কারের বিষয়ে জানেতে চাইলে মেয়র মনজুর আলম বলেন, “যে প্রতিষ্ঠান এসব ভাস্কর্য ও স্থাপনা করেছিল তারাই সংস্কার করবে। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে।”
এদিকে নতুন বাঘ বসানোর উদ্যোগও বন্ধ হয়ে গেছে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ উপলক্ষে ১০টি বাঘ ও আটটি হরিণের ভাস্কর্য স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয় গত বছরের মে মাসে। এক কোটি ২০ লাখ টাকায় কাজটি করার কার্যাদেশ পায় বায়স্কোপ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা।
কিন্তু নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা না দেয়ায় গত ১৪ জানুয়ারি তাদের কার্যাদেশ বাতিল করা হয় বলে জানান সিসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন।
সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ উপলক্ষে নগরীর বিমানবন্দর সড়ক, শেখ মুজিব সড়ক, সিডিএ অ্যাভিনিউর জিইসি মোড় পর্যন্ত, আগ্রাবাদ এক্সেস সড়ক, পোর্ট কানেকটিং সড়ক ও জাকির হোসেন সড়ক কার্পেটিং করা হবে।
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এয়াকুব নবী বলেন, “এরই মধ্যে সড়ক কার্পেটিং ও সড়ক দ্বীপ রং করার কাজ শুরু হয়েছে। আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করতে পারব।”
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিমানবন্দর সড়ক, শেখ মুজিব সড়ক ও পোর্ট কানেকটিং সড়কে সড়ক দ্বীপে রঙের কাজ শুরু হয়েছে।