লোকসভা নির্বাচনের আগে ঢাকা-দিল্লি অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর ঝালাই করতে আগামী সপ্তাহে ভারত সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। সফরের ফ্লাইট সিডিউল এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে তিনি যে সফরে যাচ্ছেন এটা নিশ্চিত। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এদিকে পররাষ্ট্র দপ্তর সূত্র জানিয়েছে, কাছাকাছি সময়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকও দিল্লি সফর করবেন। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর কূটনৈতিক অঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘প্রথম’ সফর হবে এটি। সঙ্গত কারণে এটাকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। তাদের সফর নিয়ে বিস্তর আলোচনাও রয়েছে। বিশেষ মিশনে যাচ্ছেন তারা এমন খবরও চাউর হয়েছে এরই মধ্যে। তবে ভারতের নির্বাচন যখন দোরগোড়ায় ঠিক সেই সময়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সফরে কি অর্জিত হবে তা পেশাদার কূটনীতিকদের কাছেও স্পষ্ট নয়। আগামী ৭ই এপ্রিল থেকে ভারতে পার্লামেন্ট নির্বাচনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে। ওই নির্বাচনে দিল্লি রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে- এমন আভাস এরই মধ্যে মিলেছে। বাংলাদেশের নবগঠিত সরকার চাইছে নির্বাচনের ফল যা-ই হোক সার্বিক সম্পর্ক যেন আগের মতোই থাকে সেই প্রতিশ্রুতি আদায় করতে। যদিও কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বরাবরই বলে থাকেন দিল্লি মসনদে পরিবর্তন এলেও সাউথ ব্লকের নীতিতে তেমন হেরফের হয় না। তারপরও ঢাকা পাকা কথা চায় সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে। আর সেটি অবশ্যই নির্বাচনের আগে, কংগ্রেসের আমলেই। গত ৫ই জানুয়ারির আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংহ বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। সেটি তার শুভেচ্ছা সফর ছিল। কিন্তু সেই সময়ে একটি ‘রাজনৈতিক বার্তা’ এসেছিল তার সফরের সঙ্গে। নির্বাচনে ভারত কি চায় সেটিও স্পষ্ট করেছিলেন তিনি। পেশাদার কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, ওই সফরের ফিরতি সফর হিসেবে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক ভারতে যাচ্ছেন। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পেশাদার কূটনীতিকের ওই সফরটি কেবল ‘শুভেচ্ছা’ সফর হবে এমনটি মানতে নারাজ কর্মকর্তারা। তাদের মতে, সঙ্গত কারণেই গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন আলোচনায় ঢাকা-দিল্লির দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয়াদিও উঠবে। ১৯শে মার্চ ওই সফরটি হবে। পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও সচিবের পৃথক ওই সফরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি, স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নসহ ছিটমহল বিনিময়, ভারতীয় ঋণ ও অনুদানের ছাড়, পণ্য রপ্তানিতে অশুল্ক বাধা দূর করে বাণিজ্য ভারসাম্য তৈরি প্রভৃতি গুরুত্ব পাবে। অবশ্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং এরই মধ্যে ‘তিস্তা যে কঠিন’ তা জানিয়ে দিয়েছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ওই মন্তব্যের পর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্য, সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও তিস্তা চুক্তির সঙ্গে ভারতের আসন্ন নির্বাচনের একটি যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করছেন।