ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি চুন বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ চাইলে শিগগিরই আরেকটি নির্বাচন হতে পারে। এটা কোন কঠিন কাজ নয়। আর এখানে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়েরও বলার কিছু নেই। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন-পরবর্তী দেশের রাজনৈতিক অবস্থার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, সঙ্কট উত্তরণে সংলাপ জরুরি হয়ে পড়েছে। ডিপ্লোমেটিক করেসপন্ডেন্ট এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত এ মত দেন। প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে গতকাল সকালে অনুষ্ঠিত ‘ডিকাব টক’-এ সদ্যসমাপ্ত নির্বাচন প্রসঙ্গে চীনের দূত বলেন, এটি ছিল বাংলাদেশের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। সেখানে ভোটারের উপস্থিতি ছিল কম। সেই নির্বাচনে বিরোধী রাজনৈতিক জোট অংশ নেয়নি। এটাকে ‘দুঃখজনক’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। নির্বাচন পরবর্তী সরকারের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক বিষয়েও কথা বলেন রাষ্ট্রদূত। তার মতে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে চীন। বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটা স্থিতিশীল হয়েছে উল্লেখ করে লি চুন বলেন, উপজেলা নির্বাচন চলছে। এখানে প্রধান বিরোধী দলও অংশ নিচ্ছে। এরই মধ্যে সম্পন্ন হওয়া নির্বাচনগুলো ‘সুষ্ঠু’ হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
চীনা বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরামর্শ: ডিকাবের প্রেসিডেন্ট মাঈনুল আলমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আঙ্গুর নাহার মন্টির পরিচালনায় অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ভারসাম্য আনতে বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দেন। বলেন, বাংলাদেশ-চীনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার। তবে বাংলাদেশ এখনও ঘাটতিতে রয়েছে। এ ঘাটতি কমাতে হলে চীনা বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে হবে। কারণ, তারাই জানেন, চীনের জনগণ কি চায়। সে অনুযায়ী বিনিয়োগ করে তারাই রপ্তানির সুযোগ তৈরি করবেন। ২০২০ সালের মধ্যে চীনের প্রবৃদ্ধির হার দ্বিগুণ করার জন্য তিন স্তরের যে সংস্কার চীন সরকার গ্রহণ করেছে তাকে বর্তমান চীনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি করে রাষ্ট্রদূত বলেন, এই বিশ্বায়নের যুগে কোন দেশের পক্ষেই একা উন্নতি করা সম্ভব নয়। তাই বাংলাদেশসহ সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেই এগিয়ে যেতে চায় চীন। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে চীনের আমদানি ১০ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে এবং বহির্বিশ্বে চীনের বিনিয়োগের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াবে ৫শ’ বিলিয়ন ডলার। একই সঙ্গে চীনে
বিদেশী পর্যটকের সংখ্যা বছরে ৪০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত। চীনের এ বিশাল অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। রাষ্ট্রদূত বলেন, চীন বর্তমানে তার অর্থনৈতিক কাঠামোকে পুনর্গঠনে কাজ করছে এবং এ লক্ষ্যে শ্রমিকনির্ভর শিল্প-কারখানা অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করেছে। আর এক্ষেত্রে বাংলাদেশ হতে পারে চীনের জন্য একটি আদর্শ স্থান। মহেশখালীতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনের আগ্রহ থাকলেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোন আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাননি বলে জানান রাষ্ট্রদূত। চীন থেকে সাবমেরিন কেনা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুভাকাঙ্ক্ষী রাষ্ট্র হিসেবে আমরা বাংলাদেশকে একটি সামরিক শক্তিশালী দেশ হিসেবে দেখতে চাই। চীন থেকে সাবমেরিন কেনায় ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই। এমনকি বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিয়েও কোন ঝুঁকি নেই। বাংলাদেশকে এমন কিছু দেয়া হয়নি যা কোন ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। ভারত ও চীন দুই দেশই বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে পারে। চীনের খুনমিং থেকে মিয়ানমার হয়ে বাংলাদেশে যে সড়ক নির্মাণের কথা শোনা যাচ্ছে তার সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, এ কাজের ব্যাপারে সব দেশই ইতিবাচক এবং যত দ্রুত সম্ভব কাজ শুরু হবে। সন্ত্রাসের প্রতি জিরো টলারেন্সের যে নীতি বাংলাদেশ সরকার গ্রহণ করেছে চীন তা সমর্থন করে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করতে চায় চীন। সমপ্রতি চীনের খুনমিং রেলস্টেশনে যে সন্ত্রাসী হামলায় ৩৩ ব্যক্তি নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছেন- সে বিষয়ে উল্লেখ করে চীনা দূত বলেন, এসব ঘটনাই প্রমাণ করে সন্ত্রাসবাদ আজ সারা বিশ্বে মানবজাতির জন্যই একটি গুরুতর হুমকি।