উপজেলা নির্বাচনে কারচুপি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রাজশাহীর গোদাগাড়ীর সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ে পিকনিকের নামে বিশেষ বৈঠক করার অভিযোগ উঠেছে। সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুখ চৌধুরী এমপির উপস্থিতি ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৃহস্পতিবার গোদাগাড়ীর শাফিনা পার্ক নামের একটি বিনোদন কেন্দ্রে পিকনিকের নামে ওই বিশেষ বৈঠক আয়োজন করা হয়। সকাল ১০টা থেকে ওই মিটিং শুরু হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি স্থানীয় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীরর নির্দেশে ওই সভার আয়োজন করেছে। সেখানে যোগ দিয়েছেন গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আসাদুজ্জামান আসাদসহ দলীয় নেতাকর্মীরা।
অভিযোগ উঠেছে, উপজেলার ১৫৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব প্রধান ও সহকারী শিক্ষক পিকনিকে যোগ দিয়েছেন। এরা সকলেই আগামী ১৫ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া গোদাগাড়ী উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে পোলিং অফিসার হিসেবে ভোটকেন্দ্রগুলোর দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতেই ওই বিশেষ বৈঠক আয়োজন করা হয়ে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই পিকনিকে যোগ দিতে বুধবার প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকরা মৌখিকভাবে একযোগে সব বিদ্যালয় ছুটি দিয়ে দেন। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও শিক্ষক সমিতি ওই পিকনিকের আয়োজন করলেও খরচের বিষয়টি রয়ে গেছে ধোয়াশার মধ্যেই। তবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ সানাউল্লাহ দাবি করেন, শিক্ষকর নিজেরাই ওই খরচ জোগাচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, বছরে শিক্ষকরা তিন দিন সংরক্ষিত ছুটি ভোগ করেন। এরই অংশ হিসেবে শিক্ষকদের এ ছুটি দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা অফিস নয়, শুধুমাত্র উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ওই পিকনিকের আয়োজন করছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যের নির্দেশে ওই পিকনিকের আয়োজন হয়নি। তিনি সেখানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে সম্মতি দিয়েছেন মাত্র।
এদিকে, একযোগে স্কুল বন্ধ করে শিক্ষকদের পিকনিক করার ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির সভাপতি এ কে এম আতাউর রহমান।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর নিদের্শেই ওই পিকনিকের আয়োজন করা হয়েছে।
তার মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করার জন্য ‘বিশেষ বার্তা’ দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এ পিকনিকের আয়োজন করা হয়েছে। এতে নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষকরা প্রভাবিত হবেন। এছাড়া নির্বাচন উপলক্ষে শিক্ষকদের ডেকে নিয়ে পিকনিকের আয়োজন নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, তড়িঘড়ি করে অল্প সময়ের নোটিশে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মৌখিকভাবে স্কুল ছুটির নির্দেশ দিয়েছেন। এমনটি করা যায় না। এর ফলে উপজেলার সর্বত্র অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক জানান, বুধবার শিক্ষক সমিতির আওয়ামী লীগপন্থী কয়েকজন নেতার পরামর্শে প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ পিকনিকের ঘোষণা দেন। এ ধরণের ঘটনায় প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে ওই শিক্ষকরা মনে করছেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নফিসা বেগম জানান, এ ব্যাপারে আমার কিছুই জানানো হয়নি। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানেন। তবে বিষয়টি তিনি খোঁজ নেবেন বলে জানান।
অন্যদিকে, নির্বাচন উপলক্ষে পিকনিকের আয়োজন নয় বলে তিনি দাবি করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী। তিনি বলেন, শিক্ষকদের পক্ষ থেকে আমন্ত্রন পাওয়ায় তিনি ওই পিকনিকে যোগ দিয়েছেন মাত্র।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে চলতি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত করে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া এ নিয়ে কোন অভিযোগ আসেনি বলেও জানান তিনি।