এক বছরে আ.লীগে আত্মর্কোন্দলে নিহত ২৫, আহত ২০৭২

0
116
Print Friendly, PDF & Email

বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগে আত্মর্কোন্দল বেশি। গত বছর রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মোট আত্মর্কোন্দলের ঘটনা ঘটেছে ২৬১টি। এর মধ্যে শুধু আওয়ামী লীগে ঘটেছে ১৬৭টি। আর বিএনপিতে ঘটেছে ৯২টি। ওই বছর আওয়ামী লীগের অšত্মর্কোন্দলে নিহত হয়েছে ২৫ জন। আহত হয়েছে ২ হাজার ৭২ জন। আর বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হয়েছে ৮ জন। আহত হয়েছে ১ হাজার ১০৮ জন।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। সংস্থাটি ২০১৩ সালে দেশের ১৩টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে এই জরিপটি পরিচালনা করে।

আসকের হিসাবে, ২০১৩ সালে দেশে মোট রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে ৮৪৮টি। এর মধ্যে বিএনপি-আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ৩৭৫টি। আর অভ্যšত্মরীণ কোন্দল ছিল ২৬১টি।

২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ১৪৮টি। হরতালে সহিংসতা হয়েছে ১১৭টি। জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ৬৮টি।

গত বছর আওয়ামী লীগের অভ্যত্মরীণ কোন্দলে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল যুবলীগ নেতা রিয়াজুল ইসলাম মিল্কি হত্যাকা-। ওই বছরের জুলাইয়ে ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিল্কিকে তারই সহকর্মী ও দলের সহসম্পাদক জাহিদ সিদ্দিক তারেক গুলি করে হত্যা করে। অবশ্য এ ঘটনায় গ্রেফতারের পর র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তিনিও (তারেক) নিহত হন।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে খাদ্য বিতরণকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহে আওয়মী লীগের দলীয় কর্মীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে স্থানীয় উপজেলা চেয়ারম্যান ফুরকানুদ্দিন নিহত হন।

মে মাসে সিলেটের হযরত শাহ জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হলে বাদ পড়া নেতাকর্মীরা ফুঁসে উঠে। ক্যাম্পাসে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এই উত্তেজনা এক পর্যায়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। কয়েক দফা সংঘর্ষের পর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

এছাড়া দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত বছর ক্ষমতাসীন জোট ও বিরোধী জোটের মধ্যে বেশ কয়েকটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব সংঘর্ষে একপক্ষে আইনশৃৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ক্ষমতাসীন নেতাকর্মীদের এবং বিপরতী পাশে বিরোধীদলীয় জোট নেতাকর্মীদের দেখা যায়। বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংঘর্ষের চেয়ে অভ্যšত্মরীণ কোন্দলের ঘটনাই বেশি ঘটেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শৃঙ্খলা অভাবেই সাধারণত অভ্যšত্মরীণ কোন্দলের ঘটনা ঘটে। তাছাড়া দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা না মানাও এর অন্যতম কারণ।

রাজনীতি বিশ্লেষক সিপিডির ফেলো ড. রওনক জাহান বলেন, কোন দল কতটা গণতান্ত্রিক তা নিরূপণ করার জন্য অভ্যšত্মরণী কোন্দল একটি ভাল নির্দেশক। একটি গণতান্ত্রিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে কোনো বিষয়ে বিতর্ক দেখা দিলে তা কখনোই সহিংসতায় রূপ নেয়ার কথা নয়।

এ কথা সকলেরই জানা যে, প্রধান দুই রাজনৈতিক দলসহ দেশের অধিকাংশ দল কেন্দ্রীয়ভাবে দলীয় প্রধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। আর এই দলগুলোর নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের চর্চা হয় না বললেই চলে।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এমরান হোসেন বলেন, দলে ভাল পদ পাওয়ার জন্য শীর্ষ নেতাদের দৃষ্টি কাড়তে এবং পেশীশক্তির জানান দিয়ে এক পক্ষ অন্য পক্ষের সঙ্গে কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে। আধিপত্য বি¯ত্মার থেকেই অভ্যšত্মরীণ কোন্দলগুলো হয়ে থাকে।

সবশেষ বুধবার বরিশালের গৌরনদীতে একটি মার্কেট ইজারা নেয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের অšত্মত ৮ নেতাকর্মী আহত হয়।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি শেরপুরে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অšত্মত ১২ নেতাতর্মী আহত হয়।

ঢাবি শিক্ষক এমরান হোসেন বলেন, ঈর্ষা থেকে দলীয় কোন্দলের সৃষ্টি হয়। যখন এক গ্রুপের নেতা দেখেন অন্য গ্রুপের নেতা শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে খুব ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলছে। তাদেরকে কাছে ওই নেতার গ্রহণযোগ্যতা দিন দিন বাড়ছে। তখনই ওই গ্রুপের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে।

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো মšত্মব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, আসকের এই তথ্য যাচাই করে দেখতে হবে।

আসকের তথ্যানুযায়ী, হরতাল-অবরোধে সহিংসতা এবং পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-হেফাজত নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় অšত্মত ৩৬৩ জন নিহত ও ১৩ হাজার ১৮২ জন আহত হয়েছে। নিউ এজ

শেয়ার করুন