সরকারবিরোধী আন্দোলনে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি দলের নেতারা-এই ক্ষোভ ঝেরেছিলেন খোদ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনপরবর্তী দলের এক সভায় ঢাকা মহানগরীর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের তুলোধুনো করেছিলেন বিএনপি নেত্রী। সেদিন তিনি মহানগর বিএনপির কমিটিতে রদবদলের ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের পর দুই মাস পার হয়ে গেলেও দৃশ্যত এই বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি, নেয়া হয়নি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ।
নির্বাচনপরবর্তী সময়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যেও কাজ করছে হতাশা ও দ্বিধা। ফলে দলের গঠন ও কার্যপ্রণালীতে পরিবর্তনের যে পরিকল্পনা গ্রহণ করার কথা ছিল তা আপাতদৃষ্টিতে থমকে আছে। কারণ দল ও দলের বিভিন্ন কমিটিতে অনেক আগেই রদবদলের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়নি। এমনকি পরিবর্তন আনার জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়নি।
ইতিমধ্যে খালেদা জিয়া ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সরকারবিরোধী আন্দোলনে কোনো ভূমিকা রাখতে না পারায় ছাত্রদলকে তিনি ‘ব্যর্থ’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেন। সেদিন ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতৃত্বে নিয়মিত ছাত্রদের আনার কথা জানিয়েছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এজন্য কয়েকজনকে দায়িত্বও দিয়েছিলেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে ছাত্রদলে কারা নতুন নেতৃত্বে আসবে সে সিদ্ধান্ত আটকে আছে। কারণ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান, সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ অনেক নেতাই কারাগারে। এ ব্যাপারে তাদের পরামর্শ পেতে হলে মুক্তি পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে করেন দলের শীর্ষ নেতারা।
এছাড়া দলের অন্যতম সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনে পরিবর্তন প্রক্রিয়াও নানা কারণে থেমে আছে।
৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকানোর আন্দোলনে কেন্দ্রীয় নেতাদের ভূমিকায় তীব্র সমালোচনা করেছেন দলীয় চেয়ারপারসন। পরবর্তী আন্দোলনগুলো যেন কার্যকর হয় সেজন্য আন্দোলনের আগেই নতুন করে দল গঠনেরও ঘোষণা দেন তিনি। নির্বাচনের পর ইতিমধ্যে দুই মাস পার হয়ে গেছে। দলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী কারাগারে থাকায় এবং গ্রেফতার আতঙ্ক এড়াতে অনেকেই পলাতক থাকায় পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করতে দেরি হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। সর্বশেষ গত ১ মার্চ রাজবাড়ীর এক জনসভায় খালেদা জিয়া বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শেষে দলকে ঢেলে সাজানো হবে এবং নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে তার দল।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, অনেক পরিকল্পনা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করতে প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি। গত ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যেই নতুন কমিটি গঠন করে এর সদস্যদের নাম ঘোষণার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এমনকি ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও দলের ভাই চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা জেল থেকে ছাড়া পেলে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানানো হলেও শেষ পর্যন্ত তাও হয়নি।
তবে এখন দলের নেতারা বলছেন, যেহেতু নতুন কমিটি গঠন করা খুব একটা সহজ প্রক্রিয়া নয় এবং পরবর্তী আন্দোলনগুলোকে সফল করতে হলে সুষ্ঠু পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে, তাই দলের বিভিন্ন পর্যায়ে রদবদল করতে হলে সময়ের প্রয়োজন। তবে দলে পরিবর্তন আনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে দাবি করে দলের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়া নিজেই বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন এবং তিনি দলের সহযোগী অঙ্গসংগঠনগুলো ঢেলে সাজানোর বিষয়টি নিজেই দেখছেন। সঠিক সময়েই তিনি নতুন কমিটি ঘোষণা করবেন বলেও জানিয়েছে সূত্রটি।
এদিকে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দুই মাস পেরিয়ে গেলেও দলে এখনো পর্যন্ত দৃশ্যত কোনো পরিবর্তন না আসায় দলের একাধিক শীর্ষ নেতা যে হতাশ তাও দলের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। তার ওপর, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দোহাই দিয়ে দলের নেতাদের একাংশ বর্তমানে পরিবর্তনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
এসব বিষয় নিয়ে নানারকম দ্বিমত থাকলেও প্রকাশ্যে মুখ খুলতে অস্বীকার করেছেন দলের বেশ কয়েকজন নেতা। নাম প্রকাশে অনীহা প্রকাশ করে তাদের কেউ কেউ জানিয়েছেন- এখনই দলে পরিবর্তন করা হলে দলের ভেতরের কোন্দল সর্বসম্মুখে আসবে, এতে সরকার পতনের বদলে উল্টো কোনো ফল বয়ে আনতে পারে। এমনকি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের কেউ কেউ বলছেন, খালেদা জিয়া দুই নৌকায় পা দিয়ে চলার চেষ্টা করছেন। তিনি গাছের আমটি খাবেন নাকি তলারটি কুড়োবেন আগে তাকে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
এদিকে, ঢাকা মহানগর বিএনপি গোছানোর বিষয়টি অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে যাওয়ার পাশাপাশি একইসঙ্গে হুমকির মুখে পড়েছে দলের জাতীয় কাউন্সিলও। প্রায় এক বছর ধরে বিষয়টি ঝুলে আছে। কবে হবে দলের কাউন্সিল সেটা সঠিকভাবে বলতে পারেন না কোনো নেতাই।