ফের বেপরোয়া ছাত্রলীগ

0
161
Print Friendly, PDF & Email

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের মাত্র এক মাসের মাথায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও পুরনো বিধক্ষংসী চেহারায় ফিরে এসেছে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাশাপাশি ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজিসহ নানা বিতর্কিত কর্মকা-ের জন্য বিব্রত অবস্থায় পড়েছে সরকার। সংগঠনটির এসব কর্মকা-ে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডও। অনেকের মতে, বিতর্কিত নির্বাচনের পর কিছু ভালো পদক্ষেপ নেয়ার কারণে সরকার যখন গা-ঝাড়া দিতে শুরু করেছে, ঠিক তখন ছাত্রলীগের সাম্প্রতিক বিতর্কিত কর্মকান্ড সরকারের এসব অর্জনকে মস্নান করে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের নৌকাকে ডুবানোর জন্য ছাত্রলীগ একাই যথেষ্ট_ এমন আলোচনা দলের মধ্যেই হচ্ছে। তাই সময় থাকতে ছাত্রলীগের দড়ি টেনে ধরতে না পারলে আবারও চরম মাশুল দিতে হবে সরকারকে।

গত সরকারের আমলেও সন্ত্রাস-চাঁদাবাজিসহ নানা বিতর্কিত কর্মকা-ের কারণে ব্যাপক সমালোচিত হয় ছাত্রলীগ। প্রধানমন্ত্রীর নানা পদক্ষেপের পরও ছাত্রলীগের লাগাম টানা সম্ভব হয়নি। এ নিয়ে হাইকমান্ডও প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে। জানা গেছে, ছাত্রলীগের বিতর্কিত কর্মকা-ের জন্য বেশ ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংগঠনটি দেখাশোনা করার জন্য ছাত্রলীগের এক সময়ের সভাপতি ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদেরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে, সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাদের দাবি_ ছাত্রলীগের যে কোনো কর্মীর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের অভিযোগ হচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে সংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কোনো অন্যায়ের প্রশ্রয় দেয়া হবে না। গত দুই শোনার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া মাসে ছাত্রলীগের কর্মকান্ড পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ক্ষমতায় আসার ২৮ দিনের মাথায় সরকারকে সমালোচনার কাঠগড়ায় দাঁড় করায় ছাত্রলীগ। ২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ধিত ফি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র হামালা চালায় তারা। এই ঘটনায় ফুঁসে উঠে সর্বস্তরের মানুষ। রাবির শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে সোমবার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এদিকে বিশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য তিনজনকে বহিষ্কার করা হলেও অধিকাংশের বিরুদ্ধে এখনও কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সব মহল থেকে এর কঠোর সমালোচনা করা হলেও কর্ণপাত করেনি ছাত্রলীগ। এরই মধ্যে ঘটিয়ে ফেলেছে আরও বেশকিছু ঘটনা।

১৯ এবং ২০ ফেব্রুয়ারি রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যালয়ে ভাংচুর চালায় বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তাদের পছন্দের প্রার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে নিয়োগ দেয়া হয়নি বলে এই অন্যায় হামলা চালায় তারা। ২২ ফেব্রুয়ারি খুলনার আজম খান কমার্স কলেজ প্রাঙ্গণে সেখানকার ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দলীয় কোন্দল থেকে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় তাদেরই অন্তত ২২ জন কর্মী আহত হন। ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বদরুননেসা কলেজে ছাত্রলীগের নারী কর্মীদের সঙ্গে একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিপক্ষ সংগঠন ছাত্রদলের মারামারি ও চুল টানাটানি হয়। ওই একই দিনে মানিকগঞ্জ ছাত্রলীগের দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাটি করা হয়েছিল এক কলেজছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগে।

সর্বশেষ ২ মার্চ বিকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি হয়। এ ঘটনায় কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ রাসেল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়সাল হোসেন দিপুসহ চারজনকে বহিষ্কার করা হয়।

এসব বিষয়ে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম সোমবার আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, যেখানেই কোনো ঝামেলা হচ্ছে সেখানেই আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। কোনো অন্যায়কারীকে প্রশ্রয় দিচ্ছি না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ সম্পাদকসহ চারজনকে এরই মধ্যে বহিষ্কার করা হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় পদবিধারী তিন নেতাকে আমরা বহিষ্কার করেছিলাম। ওই ঘটনা নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে কমিটি যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাবে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে, ২০ জানুয়ারি বিকালে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে। এক প্রতিমন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে বিজি প্রেসের স্টেশনারি ভবনে টেন্ডারবাজি করে ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ। প্রায় ২০ লাখ টাকার একটি কাজের দরপত্র জমা দেয়ার সময় তেজগাঁও পলিটেকনিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক এক সভাপতির লোকজনের কাছে বাধার সম্মুখীন হন তানভী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিজান রহমান নামের এক ঠিকাদার। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মিজান রহমান বলেন, ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাগর ও তার লোকজন আমাদের মারধর করে, মোটরসাইকেল ভাংচুর করে টেন্ডার জমা দিতে বাধা দেয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন ও বঙ্গবন্ধু এভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছেড়ে বিভিন্ন সরকারি ভবনে সময় কাটান বেশি।

এদিকে সম্প্রতি স্বাস্থ্য পরিসেবা মহাপরিদফতরের (ডিজিএইচসিএস) একজন সরকারি কর্মকর্তাকে ক্রমাগত হুমকি দেয়ার অভিযোগ আছে স্বয়ং কেন্দ্রীয় এক নেতার বিরুদ্ধে। হাসপাতালে বিভিন্ন সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি এবং ওষুধ সরবরাহের ২০ কোটি টাকার একটি কাজ পাওয়ার জন্য ওই কর্মকর্তাকে ক্রমাগত হুমকি দিচ্ছেন তিনি।

ছাত্রলীগের এসব সাংঘর্ষিক কর্মকা-ের বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় বলেন, এসব ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তারা সরকারের দলীয় লোক হোক বা না হোক, সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বদ্ধপরিকর। এসময় বিশ্বজিৎ হত্যাকারীদের শাস্তির প্রসঙ্গ টেনে তিনি জানান, একইভাবে রাজশাহীসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তারাও কোনো ছাড় পাবে না। ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত এই নেতা বলেন, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন হিসেবে ছাত্রলীগের এসব সংগঠনবিরোধী কর্মকা-ের কারণে সরকারকে অনেকবার বিব্রত হতে হয়েছে।

শেয়ার করুন